প্রতীকী ছবি।
লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর সারা দেশে দেখা গিয়েছিল এক বিরল ছবি। রাস্তায় হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক। কর্মক্ষেত্র ছেড়ে হেঁটে চলেছেন বাড়ির পথে। করোনাভাইরাসের ধাক্কায় সেই ছবি যে অর্থনীতিতে কী ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলেছে, তার আঁচ পাওয়া গেল বেকারত্বের হিসেবে। লকাডাউনের জেরে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে বেকারত্বের হার বেড়ে হল ২৩ শতাংশ। ‘সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি’ (সিএমআইই) নামে মুম্বইয়ের একটি সংস্থা এই হিসেব দিয়েছে।
দেশে বেকারত্বের হার এবং অর্থনীতির উপর তার প্রভাব নিয়ে তথ্য সংগ্রহ, সমীক্ষা ও গবেষণা করে সিএমআইই। বেসরকারি এই সংস্থার পক্ষ থেকে টেলিফোনে কথা বলা হয়েছে ৯৪২৯ জনের সঙ্গে। সেই কথোপথনের ভিত্তিতে তৈরি রিপোর্টে উঠে এসেছে, ৫ এপ্রিল রবিবারে শেষ হওয়া সপ্তাহে বেকারত্বের হার ছিল ২৩.৪ শতাংশ। এর মধ্যেও আবার শহরাঞ্চলে প্রভাব পড়েছে সবচেয়ে বেশি। এই ক্ষেত্রে বেকারত্ব বেড়েছে ৩০.৯ শতাংশ। সংস্থার মতে, করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় লকডাউনের জেরেই এই পরিস্থিতি। লকডাউনের পরের পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হতে পারে বলেও মত প্রকাশ করেছেন সংস্থার সিইও মহেশ ব্যাস।
অর্গানাইজেশন ফর ইকনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (ওসিইডি)-এর ব্যখ্যা অনুযায়ী, নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্ধারিত বয়সের উপরের কোনও ব্যক্তি বেতনভুক কাজে বা ব্যক্তিগত উপার্জনের কাজে নিযুক্ত না থাকলে তাঁকে কর্মহীন বা বেকার হিসেবে ধরা হয়। সিএমআইই-র হিসাবে পুরো মার্চ মাসে বেকারত্বের হার বেড়ে হয়েছে ৮.৭ শতাংশ। জানুয়ারিতে এই হার ছিল ৭.১৬ শতাংশ। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরের পর এই প্রথম এত ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেল বেকারত্বের হার।
আরও পড়ুন: সঙ্কটজনক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, সরানো হল আইসিইউতে
অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান বা বেকারত্বের হার নির্ধারণের অন্যতম মাপকাঠি হল কাজে অংশগ্রহণ করা শ্রমিকদের হার বা লেবার পার্টিসিপেশন রেট (এলপিআর)। কত শ্রমিক বর্তমানে কাজে নিযুক্ত রয়েছেন, সেটার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয় এই এলপিআর। উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে সেই এলপিআর নেমে এসেছে ৪২ শতাংশেরও নীচে, যা সর্বকালীন রেকর্ড। সিএমআইই-র হিসেবে মার্চে এই হার ৪১.৯ শতাংশ। জানুয়ারিতে যা ছিল ৪২.৯ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় এক শতাংশ পতন, যা এলপিআর-এর ক্ষেত্রে বিরাট পতন বলেই ধরা হয়। আর মার্চের শেষ সপ্তাহে সেই হার ছিল ৩৯ শতাংশের মতো। সংখ্যার হিসেবে জানুয়ারিতে যেখানে কাজে নিযুক্ত ছিলেন ৪১ কোটি ১০ লক্ষ মানুষ। মার্চে এসে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৯ কোটি ৬০ লক্ষে।
সিএমআইই-র সিইও মহেশ ব্যাস লিখেছেন, ‘‘গত দু’বছরে এলপিআর মোটামুটি স্থিতাবস্থায় ছিল। কিন্তু সেখান থেকে এক ধাক্কায় এতটা নীচে নেমে গিয়েছে। এটা বিরাট পতন।’’ তাঁর মতে, ‘‘মার্চের শ্রমিকদের এই হিসেব অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তার মধ্যেও আবার মার্চের শেষ দুই সপ্তাহ এবং এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের পরিস্থিতি আরও খারাপ।’’
আরও পড়ুন: তালিকায় ত্রিপুরা, দেশে করোনা আক্রান্ত বেড়ে ৪৪২১, মৃত্যু ১১৪
পাশাপাশি এমনটা যে হতে পারে, লকডাউন ঘোষণার পরেই তা আঁচ করেছিলেন সংস্থার বিশেষজ্ঞরা। মহেশ ব্যাসের বক্তব্য, ‘‘আমরা এলপিআর-এ পতনের আশঙ্কা করেছিলাম, কারণ দেশব্যাপী লকডাউন জারি করা হয়েছে। কিন্তু মনে হচ্ছে এই পতন লকডাউনের আগের চিত্র।’’ আরও আশঙ্কার বার্তা দিয়ে ব্যাসের মন্তব্য, ‘‘অবশ্যই লকডাউন যত বাড়বে, ততই এই ছবিটা আরও ভয়ঙ্কর আকার নেবে।’’
লকডাউনের আগে থেকেই করোনাভাইরাসের প্রভাবে অর্থনীতি কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছিল। তার জেরে জিডিপি বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ থেকে নামিয়ে ৩ শতাংশেরও নীচে নামিয়ে এনেছে অধিকাংশ সমীক্ষক সংস্থা। তার উপর দেশে বেকারত্বের এই পরিসংখ্যানে অর্থনীতির উদ্বেগ আরও বাড়ল বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।