সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। রবিবার দিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
বাঁচার রাস্তা বেসরকারিকরণ! প্রত্যাশা ছিল, করোনায় বিধ্বস্ত অর্থনীতি আর বিপর্যস্ত দরিদ্রদের ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে ত্রাণ প্রকল্পে নগদ জোগাবেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। সরাসরি টাকা দেবেন তাঁদের অ্যাকাউন্টে। কিন্তু সে পথে না-হেঁটে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার রাস্তা আরও খুললেন তিনি।
রবিবার পঞ্চম দফার ত্রাণ প্রকল্পের ঘোষণায় অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, কোনও ক্ষেত্রকে শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার জন্য তুলে রাখার দিন শেষ। কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে অন্তত একটি এবং সর্বোচ্চ চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা থাকবে। বাকি সব ক্ষেত্রে শুধুই বেসরকারি পুঁজি।
শিল্পমহলের একাংশ এই ঘোষণায় খুশি। কিন্তু অর্থনীতির যা অবস্থা আর শেয়ার বাজারের যা হাল, তাতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা কবে বিক্রি করা যাবে, তা বুঝতে পারছে না তারা। সরকারি সূত্রেও খবর, এই খাতে এখনই রাজকোষ ভরার সম্ভাবনা কম। অধিকাংশ ট্রেড ইউনিয়ন, এমনকি সঙ্ঘের শ্রমিক সংগঠন বিএমএস-ও এ নিয়ে সরকারকে তোপ দেগেছে।
আরও পড়ুন: মোদী-নির্মলার প্যাকেজ কি সত্যিই জিডিপি-র ১০ শতাংশ? নাকি ১?
আরও পড়ুন: মোদীর ভরসা কংগ্রেসের ‘গর্ত খোঁড়ার’ প্রকল্প!
এ দিন প্রশ্ন উঠেছে, ব্যাঙ্কিং যদি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রের তালিকা থাকে, তা হলে কি দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থাকবে মাত্র চারটি? আবার বিমান পরিবহণ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রের তালিকায় এলে কি বদলাবে এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রির পরিকল্পনা?
প্যাকেজে কতখানি দুধ, কতখানি জল
• প্রধানমন্ত্রীর দাবি: প্রায় ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ, জিডিপি-র ১০%
• অর্থমন্ত্রীর দাবি: মোট প্যাকেজের পরিমাণ ২০ লক্ষ ৯৭ হাজার ৫৩ কোটি টাকা
• সরকারের ঘর থেকে বাড়তি খরচ?
আর্থিক বিশ্লেষকদের হিসেব: মাত্র ২ লক্ষ ১৭ হাজার ৯৫ কোটি টাকা, জিডিপি-র মাত্র ১.১%
• বাকি টাকা: রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নগদ জোগান, ব্যাঙ্কের ঋণ, আগেই বাজেটে ধরে রাখা বরাদ্দ
বিপুল বদল
• সমস্ত ক্ষেত্রের দরজা বেসরকারি পুঁজির জন্য খোলা। কোনও ক্ষেত্রকে শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার জন্য তুলে রাখার দিন শেষ।
• কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রের তালিকা ঘোষণা শীঘ্রই। যার প্রত্যেকটিতে থাকবে ন্যূনতম ১টি এবং সর্বাধিক ৪টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। বেসরকারিকরণ, একাধিক সংস্থা মেশানো ইত্যাদির মাধ্যমে সংখ্যা কমানো হবে। টক্কর বেসরকারি সংস্থার সঙ্গেও।
• বাকি সব ক্ষেত্রে থাকবেই না রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। সময় ও সুযোগ বুঝে হবে বেসরকারিকরণ।
সরকারি সূত্রের খবর, ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রকে সম্পূর্ণ আলাদা ভাবে দেখছে কেন্দ্র। এ দিনের ঘোষণা মূলত অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার (পিএসইউ) জন্য। গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র বাছাই করবে নীতি আয়োগ। শোনা যাচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রের সংখ্যা ৬-৭টি হতে পারে। তার মধ্যে বিমান পরিষেবা না-থাকারই সম্ভাবনা। অর্থাৎ, সে ক্ষেত্রে বদলাবে না এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রির পরিকল্পনা।
অর্থনীতিবিদদের একাংশের মতে, ব্যবসা করা সরকারের কাজ নয়। তাই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণ কিংবা বেসরকারিকরণ অযৌক্তিক নয়। কিন্তু সেই ঘোষণা এখন কেন? অনেকের জিজ্ঞাসা, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেসরকারিকরণের পরিকল্পনাকে ত্রাণ প্রকল্পে ঠাঁই দেওয়া হল কেন? এমনও তো নয় যে, এখনই বেশ কিছু সংস্থা বেচে সেই টাকা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার কাজে ঢালছে কেন্দ্র! যখন বহু বেসরকারি সংস্থার নাভিশ্বাস দশা, ছাঁটাই হচ্ছেন বহু কর্মী, তখন এমন ঢালাও বেসরকারিকরণ কেন?
আইডিএসকে-র অধ্যাপক শুভনীল চৌধুরীর কথায়, “করোনা-সঙ্কটে দিন আনা-দিন খাওয়া মানুষগুলির বিপুল ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টাই করল না সরকার! উল্টে বেসরকারিকরণের কথা বলা হল! লকডাউনের সময়ে কোনও বিতর্ক, আলোচনা ছাড়া এমন নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণ কী?” কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের কটাক্ষ, “রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা দেশকে মজবুত ও আত্মনির্ভর করেছে। এখন মোদীর ‘আত্মনির্ভর ভারতে’র নামে সেই সব সংস্থারই শ্মশানযাত্রার ব্যবস্থা হচ্ছে!”