ছবি: পিটিআই।
বিদেশে আটকে পড়লে খরচ করে ফিরিয়ে আনবে কেন্দ্র। আর দেশের বিভিন্ন স্থানে আটকে পড়া শ্রমিকদের ফেরানোর অর্থ গুনতে হবে সেই শ্রমিককে বা রাজ্য সরকারগুলিকে। কেন ওই বৈষম্যমূলক নীতি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সরব হল একাধিক রাজ্য।
গত কাল থেকে বিভিন্ন রাজ্যে আটকে থাকা শ্রমিকদের ট্রেনে করে ঘরে ফেরানোর প্রশ্নে ছাড়পত্র দিয়েছে কেন্দ্র। মে দিবস উপলক্ষে প্রথম শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনটি চলে তেলঙ্গানা ও রাঁচীর মধ্যে। প্রশ্ন উঠেছে এত দিন থাকতে কেন মে দিবসেই চালানো হল ওই ট্রেন! অভিযোগ উঠেছে, প্রচারই লক্ষ্য। অর্থের বিনিময়ে শ্রমিক ফেরানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। এ পর্যন্ত রাজ্যগুলির মধ্যে সব চেয়ে বেশি প্রায় ৩০টি ট্রেন চেয়েছেন তিনি। অগ্রিম টাকাও রেলকে দিয়ে রেখেছে ঝাড়খণ্ড। কিন্তু যে ভাবে স্লিপার শ্রেণির ভাড়ার সঙ্গে শ্রমিক পিছু ৫০ টাকা অতিরিক্ত নেওয়া হয়েছে, তার সমালোচনায় সরব হয়েছেন হেমন্ত। তিনি বলেন, বিপদের সময়ে ওই অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করুক কেন্দ্র। দুঃস্থ শ্রমিকদের কথা ভেবে ওই ছাড় দেওয়া হোক। রেল জানিয়েছে, ওই টাকার মধ্যে ৩০ টাকা সুপারফাস্ট চার্জ। বাকি ২০ টাকা অন্যান্য চার্জ। সূত্রের খবর, শ্রমিকদের জল ও স্যানিটাইজারের খরচ হিসাবে ওই টাকা নেওয়া হবে। খাবার দেওয়া হবে বিনামূল্যে।
কংগ্রেসের হিসাবে সব মিলিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে আড়াই হাজার কোটি খরচ হতো কেন্দ্রের। কিন্তু কেন্দ্র সেই দায় নিজের উপরে না রেখে ঠেলে দিয়েছে রাজ্য এবং শ্রমিকদের উপরে। তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের মতে, কেন্দ্রের কাছে আমাদের ৬১ হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। সেই টাকা মেটানোর নাম নেই, উল্টে শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর জন্য অর্থ চাওয়া হচ্ছে। এর চেয়ে সরকারের অমানবিক মুখ আর কী হতে পারে। রেল মন্ত্রক জানিয়েছে, তারা পরিষেবা দিচ্ছেন তার বিনিময়ে অর্থ দাবি করা হচ্ছে। শ্রমিকদের যাতায়াতের অর্থ মকুব করার সিদ্ধান্ত একমাত্র নিতে পারে কেন্দ্র। ট্রেনে ভাড়া উসুল করার প্রশ্নে একাধিক মডেল হাতে নিয়েছে রেল। সূত্রের খবর, প্রথমত যে রাজ্যের শ্রমিক, সেই রাজ্য প্রশাসন তাদের ফেরানোর টাকা দেবে। দ্বিতীয়ত, কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শ্রমিকদের হয়ে অর্থ দিতে পারে। তৃতীয়ত, রাজ্য ও শ্রমিকরা যদি আধাআধি ভাড়া দেন। চতুর্থত, শ্রমিকেরা নিজেরা টিকিট কেটে যদি ফেরেন।
আরও পড়ুন: সংক্রমণ বনাম জীবিকা: আজ থেকে লকডাউনের তৃতীয় দফায় দেশ
রেল ওই মডেল নিলেও বিমানের ক্ষেত্রে কিন্তু একটি টাকাও গুনতে হয়নি কোনও যাত্রীকে। চিনে করোনা ছড়িয়ে পড়ার কারণে গোটা শহর লকডাউন করে দেওয়ায় আটকে পড়েন বহু ভারতীয়। পরবর্তী সময়ে যাদের কেন্দ্র এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান পাঠিয়ে ফিরিয়ে আনেন। পরবর্তী সময়ে তেহরান, লন্ডন, এমনকি ইতালিতে আটকে পড়া ভারতীয়দেরও বিশেষ বিমানে ফিরিয়ে আনা হয়। সে জন্য একটি টাকাও খরচ করতে হয়নি আটকে পড়াদের। এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানের ঘণ্টাপ্রতি ভাড়া এবং বিদেশের এয়ারপোর্ট ব্যবহারের খরচ গোটাটাই এয়ার ইন্ডিয়াকে মিটিয়ে দিয়েছিল বিদেশ মন্ত্রক।
আরও পড়ুন: হাউসবোটে আউসোলেশন ওয়ার্ডের ভাবনা কেরলে
কিন্তু এ ক্ষেত্রে লকডাউনের চল্লিশ দিনের মাথায় এ ভাবে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি পাঠানোর নামে টাকা নেওয়ার সমালোচনায় মুখ খুলেছেন সিটু নেতা তপন সেন। তাঁর কথায়, বিদেশ থেকে আনলে দেশের নাম হয়। কিন্তু শ্রমিকদের ট্রেনে চাপিয়ে বাড়ি পাঠালে সেই প্রচার কোথায়! এটির পিছনে শ্রেণিবৈষম্য যেমন রয়েছে, তেমনই মোদী সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় যে গরিব-মজদুরেরা নেই তা আর এক বার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি আজ বলেন, “যাদের প্রায় দু’মাস ধরে রোজগার নেই, তাদের কাছ থেকে ভাড়া চাওয়া নিষ্ঠুরতার নামান্তর।”
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)