—ফাইল চিত্র।
একের পর এক খুন-ধর্ষণের ঘটনা, বিচারের তোয়াক্কা না-করে সাজানো সংঘর্ষে দুষ্কৃতীদের হত্যার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে। রোজই আত্মঘাতী হচ্ছেন গরিব মানুষ। তবু উত্তরপ্রদেশে তাদের যোগী আদিত্যনাথের সরকারের গুণগানে মশগুল বিজেপি। এর মধ্যেই যোগীর মুখ্যসচিবের কাছে রবিবার একটি চিঠি পাঠিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, যাতে বলা হয়েছে— রাজ্য সরকার ঢাক পিটিয়ে দাবি করে, উত্তরপ্রদেশের গরিব মানুষের খাদ্য, আশ্রয় এবং জীবিকা নিশ্চিত করতে তারা প্রচুর কাজ করে চলেছে। কিন্তু একের পর এক ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, তাদের সে সব দাবি কত ঠুনকো!
মানবাধিকার কমিশনের নোটিসটি এসেছে একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে। আগরা জেলার বরৌলি আহির ব্লকের দেহাতি গাঁও নাগলা বিধিচাঁদে অনাহারে অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছেন পাঁচ বছরের শিশুকন্যা সনিয়া। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে তার বাবা যক্ষ্মায় আক্রান্ত, তার উপরে লকডাউনের মার। মা দু’বেলা খাবারটুকুও জোটাতে পারতেন না। তিন দিন জ্বরের পরে অসুস্থ হয়ে শুক্রবার মারা গিয়েছে সনিয়া। সাধারণ চিকিৎসাটুকুও তার করা যায়নি। মানবাধিকার কমিশন ঘটনাটির উল্লেখ করে প্রশ্ন তুলেছে— সরকারের দাবি, লকডাউনে গরিবদের কাছে খাবার পৌঁছে দিতে নানা প্রকল্প চলছে তাদের। তার একটিও কি এই গরিব পরিবারের কাছে পৌঁছল না? তা হলে হয়ত একটা মূল্যবান প্রাণ বেঁচে যেত। যোগী সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে মানবাধিকার কমিশন— কোন পরিস্থিতিতে শিশু সনিয়াকে না-খেয়ে মরতে হল, তার রিপোর্ট এবং এই পরিবারকে সরকার কী কী সাহায্য করেছে চার সপ্তাহের মধ্যে তা জানাতে হবে।
সংবাদ মাধ্যমে সনিয়ার মৃত্যুর খবর পেয়ে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে উত্তরপ্রদেশ সরকারকে ওই নোটিসটি পাঠিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এক দিকে যখন লকডাউনের মধ্যেই রাজ্য সরকার অযোধ্যায় নতুন রামমন্দিরের নির্মাণ কাজ নিয়ে ব্যস্ত, খাবার ও কাজ না-পেয়ে একের পর এক গরিব মানুষের আত্মঘাতী হওয়ার খবর উঠে আসছে। প্রতিবার রাজ্য সরকারের তরফে ঘোষণা করা হচ্ছে— গরিবদের উন্নয়নে তারা নানা ধরনের প্রকল্প চালাচ্ছে। আত্মহত্যার কারণ গ্রাম্য বিবাদ বা পারিবারিক কলহ। এই ঘটনাতেও জেলা প্রশাসন দাবি করেছে, শিশুটি অসুস্থতার কারণে মারা গিয়েছ, অনাহারে নয়।
আরও পড়ুন: আইআইটি সমাবর্তনে সবাই হাজির ডিজিটাল অবতারে
সংবাদ মাধ্যমের খবর, আগরার এই দেহাতি গ্রামটির বহু পরিবার অনেক চেষ্টা করেও রেশন কার্ড পায়নি। লকডাউন শুরু হওয়ার পরে তাই খাবার সংগ্রহে নাজেহাল হয়েছেন তাঁরা। গত এক মাস কার্যত কোনও কাজই জোগাড় করতে পারেনি সনিয়ার পরিবার। তিন সপ্তাহ না-খেয়ে কাটিয়েছেন সবাই। তার জেরেই অসুস্থ হয়ে মারা যায় ওই শিশুটি।