প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোমবার নয়াদিল্লিতে। পিটিআই
আরও কিছু ছাড় দিয়ে ১৭ মে-র পরে আর এক দফা লকডাউন বাড়ানোর ইঙ্গিত দিলেন নরেন্দ্র মোদী। তবে মুখ্যমন্ত্রীদের কার্যত সম্মিলিত চাপের মুখে চতুর্থ দফার লকডাউনে কোন রাজ্য, কোথায়, কতখানি ছাড় চায়, তা আজ মুখ্যমন্ত্রীদেরই জানাতে বলেছেন তিনি। ১৫ মে-র মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীদের লিখিত মত জানাতে হবে।
আজ মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে পঞ্চম ভিডিয়ো সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রথম দফার লকডাউনে যে-সব পদক্ষেপ দরকার হয়েছিল, তা দ্বিতীয় দফায় দরকার হয়নি। একই ভাবে তৃতীয় দফায় যে সব পদক্ষেপ দরকার পড়েছে, তা চতুর্থ দফায় দরকার পড়বে না।” তিনি যে যতটা সম্ভব অর্থনৈতিক কাজকর্ম শুরু করতে চাইছেন, তা বুঝিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের বিভিন্ন অংশে ধীরে ধীরে হলেও অর্থনৈতিক কাজকর্ম শুরু হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই তাতে আরও গতি আসবে।
আজকের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীরা প্রশ্ন তোলেন, মোদী সরকার কেন দিল্লিতে বসে ঠিক করছে, কোন রাজ্যের কোন এলাকায় আর্থিক কাজকর্ম শুরু হবে, কোথায় হবে না? কেন রাজ্যকে তা ঠিক করতে দেওয়া হচ্ছে না? পঞ্জাব ও ছত্তীসগঢ়ের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীদের পাশাপাশি হরিয়ানার বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীও দাবি তোলেন, কোন রাজ্যের কোথায় গ্রিন জ়োন, কোথায় রেড জ়োন, তা রাজ্যকে ঠিক করতে দেওয়া হোক। বিজেপি-শাসিত কর্নাটকের সঙ্গে দিল্লির অরবিন্দ কেজরীবাল যুক্তি দেন, একটা গোটা জেলাকে রেড জ়োন চিহ্নিত না-করে একটি অংশকে কন্টেনমেন্ট এলাকা বলে চিহ্নিত করলেই চলবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত রাজ্যকেই নিতে দেওয়া হোক। এই সম্মিলিত চাপে আজ মোদী মুখ্যমন্ত্রীদের অনুরোধ করেন, তাঁরা নিজেদের রাজ্যে লকডাউনের সময় ও তার পরে কী ভাবে এগোতে চান, তার ‘নীল নকশা’ ১৫ মে-র মধ্যে জানান।
আজকের বৈঠকে বিহার, পঞ্জাব, মহারাষ্ট্র ও অসমের মতো অন্তত চারটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী লকডাউন বাড়ানোর পক্ষে সওয়াল করেন। আবার গুজরাত লকডাউন তুলে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে। কিছু রাজ্যে দিনে ছাড় দিয়ে সন্ধ্যা সাতটা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত ‘নাইট কার্ফু’র প্রস্তাব দিয়েছে। সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, দুশ্চিন্তার জায়গা হল মুম্বই, দিল্লি, আমদাবাদ, চেন্নাই, পুণে ও ইনদওর— এই ছ’টি বড় শহর। গোটা দেশে আক্রান্তের ৫০ শতাংশই এই ছ’টি বড় শহরে। আবার গোটা দেশে মৃতের ৫৫ শতাংশও এই ছ’টি শহরে। অথচ এই শহরগুলিতেই আর্থিক কর্মকাণ্ড সব থেকে বেশি। মোদী বলেন, করোনা-সঙ্কটের পরে ভারতের সামনে সুযোগ এলে তার ফায়দা তুলতে হবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে নতুন পদ্ধতি ভাবতে হবে। আমেরিকা-ইউরোপে অতিমারি মারাত্মক হওয়ায় এ দেশে পর্যটন ক্ষেত্রে তার ফায়দা তোলা যায় কি না, তা দেখতে হবে।
আরও পড়ুন: ১৭ মে-র পর কোভিড নিয়ন্ত্রণে রাজ্যকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দাবি মমতার
আরও পড়ুন: রাজ্য ‘ক্রীতদাস’ নয়! প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কেন্দ্রকে মুখ্যমন্ত্রী
কেন্দ্র রবিবার একতরফা ভাবে যাত্রিবাহী ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তেলঙ্গানা ও তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীরা আপত্তি তুলে বলেন, ৩১ মে পর্যন্ত তাঁদের রাজ্যে ট্রেনের দরকার নেই। তেলঙ্গানা শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন নিয়েও আপত্তি তোলে। বাঘেলও ট্রেন, বিমান, আন্তঃরাজ্য বাস চালুর আগে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনার দাবি তোলেন। মোদী বলেন, এখনই সব রুটে ট্রেন চালু হচ্ছে না। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে দাবি তোলেন, জরুরি পরিষেবায় নিযুক্তদের জন্য লোকাল ট্রেন চালু করা হোক।
আজ প্রায় সব মুখ্যমন্ত্রীই রাজ্যের জন্য আর্থিক সাহায্য, ছোট-মাঝারি শিল্প থেকে শুরু করে পরিকাঠামো প্রকল্পের জন্য সুরাহা, সুদের হার কমানো, কৃষিপণ্যের বাজারের ব্যবস্থা করার দাবি তুলেছেন। রাজ্যগুলির ক্ষতে মলম দিতেই আজ অর্থ মন্ত্রক রাজস্ব ঘাটতি অনুদান হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১৪টি রাজ্যের জন্য ৬,১৯৫ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে। মোদী বলেন, করোনার পরে জীবনযাত্রার নতুন নীতি হবে ‘জন সে লেকর জগ তক’।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)