অর্থনীতির কথা মাথায় রেখেও কনটেনমেন্ট জ়োন বা গণ্ডিবদ্ধ সংক্রমিত এলাকায় কোনও শিথিলতার বিরোধী স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা, স্বাস্থ্য মন্ত্রকও। ছবি: পিটিআই।
অতঃপর!
রবিবার চতুর্থ দফা লকডাউনের শেষ দিন। ধুঁকতে থাকা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে লকডাউন সম্পূর্ণ বা আংশিক প্রত্যাহার হবে, না কি সংক্রমণ ঠেকাতে তা চালিয়ে যাওয়া হবে— এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে আজ নিজের বাসভবনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ডাকেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবা ও স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভল্লা-সহ অন্য শীর্ষ আধিকারিকেরা। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠকের নির্যাস সম্ভবত জানা যাবে আগামিকাল। সূত্রের মতে, লকডাউনের ব্যাপারে দিশানির্দেশ শনিবার দিতে পারে কেন্দ্র। স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের মতে, দেশের যা পরিস্থিতি, তাতে লকডাউন একেবারে তুলে নেওয়া ঝুঁকির হবে। অর্থনীতির কথা মাথায় রেখেও কনটেনমেন্ট জ়োন বা গণ্ডিবদ্ধ সংক্রমিত এলাকায় কোনও শিথিলতার বিরোধী স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা, স্বাস্থ্য মন্ত্রকও।
লকডাউন প্রশ্নে রাজ্যগুলির মনোভাব জানতে কাল দেশের সব মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেন অমিত শাহ। এ যাবৎ ওই কাজটি করছিলেন মোদী। সূত্রের মতে, বৈঠকে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি জানিয়ে দেয়, তারা কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মানতে প্রস্তুত। একই মত পঞ্জাব ও ঝাড়খণ্ডের মতো বিরোধী রাজ্যেরও। ওড়িশা, তেলঙ্গানাও কেন্দ্রের নির্দেশ মানতে রাজি। হিমাচল প্রদেশ ইতিমধ্যেই কিছু জেলায় আরও এক মাস লকডাউন বাড়িয়েছে। সূত্রের মতে, সম্পূর্ণ লকডাউন প্রত্যাহারের পক্ষপাতী নয় পশ্চিমবঙ্গ। ছত্তীসগঢ় ও পশ্চিমবঙ্গ আন্তঃরাজ্য যাতায়াতে সবুজ সঙ্কেত দিলেও রাজ্যের সীমানা এখনই খুলতে নারাজ। মুম্বইয়ের পরিস্থিতি মাথায় রেখে লকডাউনের পক্ষে মহারাষ্ট্র। উত্তরাখণ্ডও তাই চায়। ব্যবসায়ীদের স্বার্থে শপিং মল, বাজার খোলার পক্ষে সওয়াল করলেও সিনেমা হল, স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার পক্ষপাতী দিল্লি।
আরও পড়ুন: শ্রমিক ট্রেনে দুর্ভোগ, দায় নিল না রেল
আরও পড়ুন: দ্বিতীয় দফার ব্যর্থতা ঢাকতে চায় বিজেপি
তবে মেট্রো ও লোকাল ট্রেন এখনই চালুর প্রশ্নে আপত্তি রয়েছে একাধিক রাজ্যের। জুলাইয়ের আগে আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা যেন চালু না হয়, সেই দাবিও উঠেছে। এ দিন বৈঠকে রাজ্যগুলির বক্তব্য মোদীকে জানান অমিত।
গত মার্চেই লকডাউন ও করোনা অতিমারি মোকাবিলার প্রশ্নে ১১টি বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন গোষ্ঠী গঠন করেছে সরকার। আর্থিক বিষয়ক অন্তত দুটি গোষ্ঠী এখনই লকডাউন প্রত্যাহারের পক্ষে। একাংশের যুক্তি, স্থানীয় রোগে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ জারি থাকবে। তা বলে অনির্দিষ্ট কাল লকডাউন চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব। কিন্তু সমস্যা হল সংক্রমণের হার। জনতা কার্ফুর ৭০ দিনের মাথাতেও সংক্রমণ ফি দিন লাফিয়ে বাড়ছে। অন্তত ১০টি রাজ্যের ১৩টি বড় শহরের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। চালু রয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকের আসা-যাওয়া। এ অবস্থায় লকডাউন একেবারে তুলে দিলে সংক্রমণ ঘরে ঘরে পৌঁছে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই স্বাস্থ্য মন্ত্রক সম্পূর্ণ লকডাউন প্রত্যাহারের বিপক্ষে। মোদী-শাহ জুটিও তা বুঝতে পারছেন। তাই আরও দু’সপ্তাহ লকডাউন জারি রাখার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রস্তাব শেষে কেন্দ্র মেনে নেয় কি না, তা-ই এখন দেখার। বিকল্প প্রস্তাব হল— লকডাউন প্রত্যাহার। কিন্তু সংক্রমণ রুখতে রেড জোন, কনটেনমেন্ট জ়োন, পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য থাকা বিধিনিষেধ কড়া ভাবে পালন করে যেতে হবে।