ছবি: এপি।
হাতে টাকা নেই। পেটে খাবার নেই। দেশ জুড়ে লকডাউন চলছে। ঘরে ফিরতে মরিয়া পরিযায়ী শ্রমিকেরা হেঁটে, ট্রাকের মাথায়, সাইকেলে বা বাসে চেপে, যে যে-ভাবে পারছেন নিজের রাজ্যে ফেরার চেষ্টা করছেন। কেন্দ্র ও রাজ্যগুলি তাঁদের ফেরানোর ব্যবস্থা করলেও বহু ক্ষেত্রেই তা পর্যাপ্ত নয়। ফলে অব্যাহত ঝুঁকির সফর। যাতে রোজ বাড়ছে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু।
মঙ্গলবার রাতে এ ভাবে ট্রাকের মাথায় চেপে বাড়ি ফেরার পথে ভাগলপুরের কাছে ট্রাক উল্টে ন’জনের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ জানায়, ওঁরা প্রায় সকলেই বিহারের চম্পারণ জেলার বাসিন্দা। লকডাউনে কলকাতায় আটকে পড়া ১৭ জন শ্রমিকের একটি দল দিন ছয়েক আগে সাইকেলে চেপে বাড়ির পথে রওনা হয়। রাস্তায় একটি ট্রাক দেখতে পেয়ে, চালককে রাজি করিয়ে সওয়ার হন ওঁরা। মঙ্গলবার ভোর ৬টা নাগাদ জাতীয় সড়কের উপরে একটি বাসের মুখোমুখি পড়ে ট্রাকটি। টাল সামলাতে না পেরে রাস্তার ধারে ট্রাকটি উল্টে যায়। মৃত্যু হয় ন’জনের। ট্রাক চালক ও খালাসি পলাতক। মৃতদের পরিবার পিছু ৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে বিহার সরকার।
আজই ভোরে বাস-ট্রাকের সংঘর্ষে মহারাষ্ট্রের যবৎমল জেলায় তিন শ্রমিক-সহ চার জনের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ জানায়, ঝাড়খণ্ডগামী একটি শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন ধরতে, শ্রমিক বোঝাই একটি বাস এ দিন শোলাপুর থেকে নাগপুর স্টেশনের দিকে যাচ্ছিল। ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ উল্টো দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে বাসের ধাক্কা লাগে। দুর্ঘটনায় তিন শ্রমিক-সহ চালকের মৃত্যু হয়। জখম ২২। গুরুতর ১৭ জন।
আরও পড়ুন: কোভিড নয়, লকডাউনে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের, শিক্ষার
আরও পড়ুন: গন্তব্য রাজ্যের অনুমতি না নিয়েই শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত রেলের
সোমবার গভীর রাতে উত্তরপ্রদেশের মাহোবার কাছে একটি ট্রাক উল্টে মারা যান তিন মহিলা শ্রমিক। দিল্লি থেকে বিহারের পথে আসা একটি দলের সঙ্গে ছিলেন ওঁরা। কোনও ভাবে বেঁচে যায় এক জনের কোলে থাকা শিশুটি। একটানা কেঁদেই চলেছে সে। ঘটনাস্থলে পৌঁছনো সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে সেই ছবি। শিশুটি তখন ওই শ্রমিক দলের এক জনের কোলে। তিনিই জানালেন, পথে আসতে আসতে শুনেছিলেন যে শিশুর বাবা ঝাঁসিতে থাকেন। মাতৃহারা খুদেকে পুলিশ-আধিকারিকের হাতে তুলে দেওয়া যায় কি না বারবার জিজ্ঞাসা করেন তিনি।
নানা রাজ্যে পুলিশের হাতে পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থা হওয়ার খবরও মিলছে। মাস্ক না-পরায় উত্তরপ্রদেশের হাপুর জেলায় দুই শ্রমিককে তপ্ত রাস্তায় গড়াগড়ি দিতে বাধ্য করেছেন দুই পুলিশকর্মী। থামলেই জুটছে লাঠির বাড়ি। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ার পরে অভিযুক্ত দুই কর্মীর বিরুদ্ধে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। আতঙ্ক এতটাই ছড়িয়েছে যে, পুলিশকে আসতে দেখে উত্তরপ্রদেশের আমরোহার কাছে গঙ্গায় ঝাঁপ দেন ভিন্ রাজ্যের দুই শ্রমিক। তাঁদের মধ্যে এক জনের মৃত্যু হয়েছে।