কয়েকটি শিল্পক্ষেত্রে ছাড় চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে চিঠি। ছবি: শাটারস্টক
লকডাউনের জেরে টান পড়েছে পেটে। সেই জট কাটাতে এ বার উদ্যোগ নিল কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রক। শনিবার ওই মন্ত্রকের তরফে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে। তাতে অন্তত ১৫টি শিল্প ক্ষেত্রে লকডাউন বিধি শিথিল করার অনুরোধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে চিঠিতে উপযুক্ত নিরাপত্তা বিধি মেনে কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রক।
করোনা সংক্রমণ রুখতে গত ২৩ মার্চ দেশ জুড়ে লকডাউনের ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য থমকে থাকায় রোজই ধাক্কা খাচ্ছে দেশের অর্থনীতি। এমন পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে এ বার ময়দানে নেমেছে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রক। কেন্দ্রীয় স্বরাস্ট্র মন্ত্রকের সচিব অজয় কুমার ভাল্লাকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রকের অধীনস্থ শিল্প ও অন্তর্দেশীয় বাণিজ্য উৎসাহদান বিভাগ (ডিপিআইআইটি)-এর সচিব গৌরপ্রসাদ মহাপাত্র। তাতে উপযুক্ত নিরাপত্তা বিধি মেনেই বিভিন্ন শিল্প ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, এই বিষয়ে শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন রাজ্য ও শিল্প সংগঠনগুলির সঙ্গেও কথা বলা হয়েছে। তার ভিত্তিতেই উঠে নানা পরামর্শ উঠে এসেছে।
অন্তত ১৫টি শিল্প ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে জানানো হয়েছে। কোন কোন শিল্পে ছাড় দেওয়ার সুপারিশ করছে কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রক?
আরও পড়ুন: দাসপুর-দাঁতনের দু’টি গ্রামকে ‘সিল’ করে নজরদারি চলছে ড্রোন উড়িয়ে
শিল্পক্ষেত্রেও করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে খোলার অনুমতি দেওয়া হলে সংস্থাগুলিকে একাধিক বিধি মানতে হবে বলেও ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: কাজ নেই=পয়সা নেই আকালের ভয়াল সঙ্কেতে দিলীপ মাঝির বৃত্তান্ত
‘দ্য হিন্দু’ সংবাদপত্রকে একটি সাক্ষাৎকারে ডিপিআইআইটি-এর সচিব গৌরপ্রসাদ মহাপাত্র বলেন, ‘‘এটা একটা সুপারিশমূলক চিঠি। আমরা শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্র থেকে নানা মতামত নিয়ে তা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে জানিয়েছি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকই এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’’
শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রকের এই পদক্ষেপে সায় রয়েছে অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারেরও। তাঁর মতে, ‘‘লকডাউন জরুরি। স্বাস্থ্যের ব্যাপারটা আমাদের প্রথমে দেখতেই হবে। তবে স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির মধ্যে ভারসাম্যও বজায় রাখতে হবে।’’ এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমার আশঙ্কা, করোনাভাইরাস যত মানুষকে সংক্রমিত করবে তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষকে বিপাকে ফেলবে এই থমকে থাকা অর্থনীতি। অসংখ্য দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের স্বার্থে উৎপাদন চালু করতে হবে।’’ তবে সংক্রমণ রুখতে নিরাপত্তার দিকগুলি নিয়েও তিনি সতর্ক থাকতে বলছেন।
করোনা থাবা বসানোর আগে থেকেই খোঁড়াচ্ছিল দেশের অর্থনীতি। অতিমারি ঠেকাতে টানা লকডাউনও যে অথর্নীতিতে জোরাল প্রভাব ফেলবে তা এক রকম ধরেই রেখেছেন অর্থনীতিবিদরা। অনেকেই মনে করছেন, এর ফলে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ হাতের বাইরে চলে যেতে পারে। দেশ জুড়ে বাড়তে পারে বেকারত্ব। লকডাউন চলার সময়েই উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে, ‘সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি’ (সিএমআইই) নামে মুম্বইয়ের একটি সংস্থা। তাদের মতে, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই বেকারত্বের হার বেড়ে হয়েছে ২৩ শতাংশ। সংস্থাটির মতে, লকডাউনের ফলে তৈরি হয়েছে এই পরিস্থিতি।
শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রক চাইছে, লকডাউনে এত দিন ধরে থেমে থাকা অর্থনীতির চাকা এ বার কিছুটা গতি পায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে লেখা চিঠিতে ডিপিআইআইটি সুপারিশ করেছে, ‘‘অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ার উন্নতি ও জনসাধারণের হাতে টাকা পৌঁছে দিতেই এই পদক্ষেপ প্রয়োজন।’’
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)