শ্রমিকদের উপর লাঠিচার্জ করছে পুলিশ। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
আচমকা লকডাউন ঘোষণায় বাড়ি ফেরার জন্য হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে গিয়েছিল রাজধানীর বুকে। বাড়ি ফেরার আশায় তল্পিতল্পা গুটিয়ে বাস টার্মিনালে এসে জড়ো হয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। গত মাসের শেষ দিকে দিল্লির আনন্দবিহার বাস টার্মিনালের সেই স্মৃতি উস্কে দিয়ে এ বার পরিযায়ী শ্রমিকদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠল বাণিজ্যনগরী মুম্বই। মঙ্গলবার কয়েক’শ মানুষ পথে নামেন সেখানে। দাবি ওঠে, হয় তাঁদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করুক সরকার। নইলে পেট ভরানোর ব্যবস্থা করা হোক।
নোভেল করোনার প্রকোপ ঠেকাতে গত ২৪ মার্চ মধ্যরাত থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু তাতেও করোনার আক্রমণ ঠেকানো যায়নি। বরং দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৩৫০ মানুষ। তার জেরে এ দিন সকালে ফের ৩ মে পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় লকডাউন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
তার পরে দুপুর গড়াতেই এ দিন মুম্বইয়ের রাস্তায় নেমে আসেন কয়েক’শ মানুষ। লকডাউন উঠতে পারে আশা করে দুপুরের দিকে বান্দ্রায় স্টেশনের বাইরে বাস ডিপোয় জড়ো হয়েছিলেন তাঁরা। ভেবেছিলেন, ট্রেন বা বাস চলবে হয়ত। তা না হওয়াতেই রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা। তাঁদের হটাতে লাঠিচার্জ করেন পুলিশ। তাতে বেশ কয়েকজন জখম হন।
আরও পড়ুন: ব্রেক দ্য চেন: হাই রিস্ক স্পটে একগুচ্ছ নতুন কৌশল স্বাস্থ্য দফতরের
মু্ম্বই পুলিশের এক আধিকারিক জানান, বিক্ষুব্ধরা সকলেই দিনমজুর। মূলত উত্তরপ্রদেশ এবং বাংলা থেকে এসেছেন। পটেল নগরী বস্তিতে থাকেন। এ দিন দুপুর তিনটে নাগাদ বান্দ্রা স্টেশনের কাছে বাস ডিপোর প্রায় ১০০০ জন জড়ো হন। রাস্তার উপরই বসে পড়েন তাঁরা। বাড়ি ফেরার জন্য বাসের ব্যবস্থা করে দিতে হবে বলে দাবি তুলতে শুরু করেন।
গোটা ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের ছেলে তথা মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী আদিত্য ঠাকরে। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘‘বান্দ্রা স্টেশনে যা ঘটল, তা যদিও থামানো গিয়েছে, কিন্তু এই ঘটনা এবং সুরাতের সাম্প্রতিক দাঙ্গার ঘটনা, এ সবই কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতা। পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করতে পারেনি তারা। খাবার বা আশ্রয় নয়, ওই শ্রমিকরা আসলে বাড়ি ফিরতে চান।’’
আদিত্যর টুইট।
আরও পড়ুন: তৃণমূলের অভিনেত্রী-সাংসদের বাবার করোনা, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাঠানো হল দ্বিতীয় নমুনা
দলের মুখপাত্র প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদীও কেন্দ্রীয় সরকারকেই দোষারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘‘গত তিন সপ্তাহ ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করে আসছিলেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। কিন্তু সরকারকেও ওঁদের সমস্যাটা বুঝতে হবে। শুধুমাত্র স্বাস্থ্য এবং আর্থিক দিকটা দেখলেই চলবে না। মানবিকতার দিকটাও দেখতে হবে।’’
রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখ সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‘দেশের মুধ্যে মুম্বইয়েই পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। আজ লকডাউন উঠলে বাড়ি ফিরতে পারবেন ভেবেছিলেন ওঁরা। ওঁদের বোঝাতে পেরেছি যে, রাজ্যের সীমানা এখনও বন্ধ রয়েছে।’’এ দিন রাত ৮টায় মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে রাজ্যবাসীর উদ্দেশে বিশেষ বার্তা দেবেন বলেও জানান তিনি।
তবে শুধুমাত্র মুম্বই-ই নয়, গত তিন সপ্তাহ ধরে লকডাউনের জেরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই আটকে পড়েছেন বহু পরিযায়ী শ্রমিক। রোজগার একেবারে বন্ধ তাঁদের। দু’বেলা দু’মুঠো খাবারও পাচ্ছেন না। সরকারের তরফে সাহায্যের আশ্বাস দিলেও, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা মেলেনি বলে অভিযোগ উঠছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র মহারাষ্ট্রেই আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৩৩৭-এ গিয়ে ঠেকেছে।