এডগার্ড জিয়েবাত। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
লকডাউনে দীর্ঘ ৫৫ দিন দিল্লি বিমানবন্দরে আটকে থাকার পর অবশেষে আমস্টারডামের উদ্দেশে রওনা দিলেন জার্মান নাগরিক এডগার্ড জিয়েবাত। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে তিনি বিভিন্ন দেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। তুরস্ক যাওয়ার পথে দিল্লি বিমানবন্দরে আটকে যান লকডাউনের ফেরে।
পুলিশের তাড়া খেয়ে এত দিন এক দেশ থেকে অন্য দেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন এডগার্ড। মার্চের মাঝামাঝি দিল্লি বিমানবন্দরে ‘থিতু’ হন তিনি। করোনা সঙ্কটে তাঁকে নিয়ে মাথা ঘামাতে একেবারেই নারাজ ছিল জার্মান দূতাবাস। আবার বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় অন্য কোথাও যাওয়ার উপায়ও ছিল না। তাই নিশ্চিন্তে দিল্লির ইন্দিরা গাঁধী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরেই সংসার পেতে বসেছিলেন তিনি। নাওয়া-খাওয়া-ঘুম, সবকিছুই সেখানে সারছিলেন এত দিন।
বছর চল্লিশের এডগার্ড জিয়েবাত নানা অপরাধমূলক কাজকর্মে লিপ্ত থাকায় জার্মান পুলিশের খাতায় নাম রয়েছে তাঁর। গ্রেফতারি এড়াতে এত দিন পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। করোনা সঙ্কটে গোটা বিশ্ব যখন তটস্থ, সেইসময়ও ভিয়েতনাম থেকে তুরস্ক পালানোর পরিকল্পনা ছিল তাঁর। সেই মতো গত ১৮ মার্চ ভিয়েত এয়ারের বিমানে চেপে দিল্লি পৌঁছন। দিল্লি থেকে অন্য একটি বিমানে চেপে থেকে তুরস্ক রওনা দেওয়ার কথা ছিল তাঁর।
কিন্তু এডগার্ড দিল্লিতে নামার পরই তুরস্ক ও ভারতের মধ্যে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে বিমানবন্দরেই আটকে পড়েন তিনি। সঙ্গে একাধিক দেশের ভিসা থাকায় অন্য দেশে রওনা দেবেন ভেবেছিলেন এডগার্ড। কিন্তু ভারতের তরফে সমস্ত আন্তর্জাতিক বিমান বন্ধ করে দেওয়ায় তা-ও হয়ে ওঠেনি। এ ব্যাপারে জার্মান দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে এডগার্ডের অপরাধমূলক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকার বৃত্তান্ত সামনে আসে। কিন্তু জার্মান দূতাবাস এডগার্ডকে হেফাজতে নিতে অস্বীকার করে।
আরও পড়ুন: করোনা রোগীদের উপর ফ্যাভিপিরাভির ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হল
এমনিতে বিশেষ পরিস্থিতিতে আটকে পড়া যাত্রীদের ২৪ ঘণ্টার জন্য ভারতের ভিসা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে, যাতে পরবর্তী বিমান না চালু হওয়া পর্যন্ত বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় কোনও হোটেলে থাকতে পারেন তাঁরা। কিন্তু এডগার্ড দাগী অপরাধী হওয়ায় তাঁকে ভিসা দিতে অস্বীকার করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এডগার্ড নিজেও ভিসার জন্য আবেদন জানাননি। সেই থেকে বিমানবন্দরের টার্মিনালেই ছিলেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানবন্দরের এক আধিকারিক জানান, ‘‘এডগার্ডের সঙ্গে আরও চার জন যাত্রী ট্রানজিট এলাকায় আটকে ছিলেন। তাঁদের মধ্যে দু’জন শ্রীলঙ্কার নাগরিক, এক জন মলদ্বীপের এবং অন্য জন ফিলিপিন্সের। বিমানবন্দরের তরফে ওই সব দেশের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, তাঁদের কোয়রান্টিনে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু বিদেশ বিভুঁইয়ে অপরাধী এডগার্ডের দায়িত্ব নিতে চায়নি জার্মান দূতাবাস।’’
সেই থেকে ব্যাগপত্র নিয়ে দিল্লি বিমানবন্দরের টার্মিনালেই ছিলেন এডগার্ড। বিমানবন্দরের এক কর্মী জানান, খবরের কাগজ ও ম্যাগাজিন পড়ে সময় কাটাতেন এডগার্ড। ফোনে বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের সঙ্গে কথাও বলতেন নিয়মিত। বিমানবন্দরের মধ্যে যে পাস্টফুডের দোকান রয়েছে, সেখানেই খাওয়া-দাওয়া সারতেন। স্নান এবং শৌচকর্ম সারতেন বিমানবন্দরের শৌচাগারেই। সাফাইকর্মী, নিরাপত্তাকর্মী সকলের সঙ্গেই ভাল সম্পর্ক ছিল তাঁর।
আরও পড়ুন: নাকু লা-য় সংঘর্ষের আগেই লাদাখে আকাশসীমা লঙ্ঘন চিনা কপ্টারের
নিজের টাকাতেই এডগার্ড বিমানবনম্দরে খাওয়া-দাওয়া সারেতেন বলে জানা গিয়েছে। বিমানবন্দরের কর্মীরা মিলে তাঁর জন্য একটি রিক্লাইনারের ব্যবস্থা করে দেন, যাতে পা ছড়িয়ে ভাল করে বসতে পারেন তিনি। এ ছাড়াও মশারি, মাজন-সহ প্রয়োজনীয় সবই তাঁর হাতের কাছে ছিল। ইচ্ছা হলে কখনও মাটিতেই বিছানা পেতে শুয়ে পড়তেন এডগার্ড। কখনও আবার বেঞ্চ বা চেয়ারে হেলান দিয়েও ঘুমাতেন। বিমানবন্দরে এডগার্ড বেশ বহাল তবিয়তেই ছিলেন। তাঁর কোনওরকম মানসিক বা শারীরিক সমস্যা ছিল না।
সপ্তাহ খানেক আগে আটকে পড়া যাত্রীদের নিতে তুরস্ক থেকে একটি বিমান এসেছিল দিল্লিতে, কিন্তু এডগার্ড সে দেশের নাগরিক না হওয়ায় তাঁকে নিতে রাজি হয়নি তারা। শেষ মেশ মঙ্গলবার আমস্টারডামের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। বিমানে ওঠার আগে কোভিড-১৯ পরীক্ষা হয় তাঁর। তবে রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।