বরেলি থেকে বারাণসী পাড়ি। ছবি: টুইটার
মাথার উপর গনগনে সূর্য। পায়ের তলায় তপ্ত রাস্তা। পিঠে ব্যাগ নিয়ে পা টেনে টেনে হেঁটে চলেছেন ওরা চার জন। লকডাউনে বন্ধ পরিবহণ। বাড়ি পৌঁছতে তাই হাঁটাই ভরসা উত্তরপ্রদেশের বরেলীর রোহিলাখণ্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই চার ছাত্রের। বরেলী থেকে বারাণসীর দূরত্ব ৫০০ কিলোমিটারেরও বেশি। সেই পথ পেরোতে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে হেঁটে চলেছেন পড়ুয়ারা। কখনও অবশ্য সুযোগ পেয়ে ট্রাকেও চড়ে পড়েছেন।
বারাণসী থেকে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের বরেলীর রোহিলাখণ্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়েছিলেন রোহিত পাণ্ডে। লকডাউনের জেরে এখন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। ফলে পড়াশোনাও থমকে গিয়েছে। হাতে জমানো টাকা পয়সাও শেষ। বাড়ি থেকেও টাকা আসছে না। তাই ফিরে যাওয়াই স্থির করেছিলেন রোহিত ও তাঁর তিন বন্ধু। কিন্তু লকডাউনের মেয়াদ আরও বেড়েছে। গণপরিবহণ পুরোপুরি স্তব্ধ। কী ভাবে তাঁরা পৌঁছবেন বাড়ি? প্রশ্নটা চার জনেই ভেবেছিলেন বেশ কয়েক বার। শেষ পর্যন্ত হেঁটেি বাড়ি ফেরার পরিকল্পনা করেন তাঁরা। চার জনে হাঁটা শুরু করেন।
যেমন ভাবা, তেমন কাজ। গত ২৪ ঘণ্টা ধরে কখনও হেঁটে বা কখনও গাড়িতে চড়ে রোহিত আর তাঁর তিন বন্ধু প্রায় ২৫০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে গিয়েছেন। পৌঁছে গিয়েছেন লখনউতে। এখনও অবশ্য আরও অনেকটা পথ বাকি। তবেই পৌঁছনো যাবে বারাণসীতে।
আরও পড়ুন: কেন্দ্রীয় দলকে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস মুখ্যসচিবের
লকডাউন চলছে। সব বন্ধ। এই সময়ে কেন পথে নামলেন? প্রশ্নের উত্তরে রোহিতের সঙ্গী গোলু মিশ্র বলছেন, ‘‘আমাদের পরিবার প্রথম দফার লকডাউন ও তার পরের কিছু দিনের জন্য খরচের টাকা পাঠাতে পেরেছিল। আমরা বরেলীতে পেয়িং গেস্ট হিসাবে থাকতাম এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম। আমাদের টাকা শেষ হওয়ার পথে।’’ এর পরেই অসহায় ভাবেই গোলু যোগ করলেন, ‘‘এ ছাড়া আমাদের কাছে আর কোনও পথ খোলা ছিল না।’’ তিনি বলছেন, ‘‘আমরা দিন আনি দিন খাওয়া ঘরের মানুষ। আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পাঠাতেই অনেক কষ্ট করেছে আমার পরিবার। তাঁরা যত আয় করেন তার ভিত্তিতেই আমাকে টাকা পাঠান। এখন তাঁদের কাছেও আর পয়সা নেই।’’
বরেলী থেকে লখনউ পৌঁছেছেন ওই চার জন। এখনও আরও অনেকটা পথ বাকি। কী ভাবে পৌঁছবেন? রোহিত ও গোলুর আর এক সঙ্গী শুভম সিংহ বলছেন, ‘‘এক জন সরকারি অফিসার আমাদের ট্রাকে তুলে দিয়েছিলেন। সেটা আমাদের কিছুটা নিয়ে গিয়ে নামিয়ে দেয়। তার পর ট্রাকটা অন্যপথে চলে যায়। ওই অফিসার আমাদের হাইওয়ে ছাড়তে নিষেধ করেছেন। এই পথেই আবার কোনও গাড়ি পেয়ে যাব।’’
আরও পড়ুন: সঙ্ঘাত তো শেষ কালই, আজও কেন ঘরে বসে কেন্দ্রীয় দল?
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)