ফাইল চিত্র।
লকডাউনের সময়ও কর্মীদের পুরো বেতন দিতে হবে বলে নির্দেশ জারির করার পরে এ বার পুরো একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গেল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। আজ কেন্দ্র নিজেই সুপ্রিম কোর্টে জানাল, বেতন মেটানোটা একেবারেই সংস্থা ও কর্মীর মধ্যেকার বিষয়।
তা হলে পুরো বেতন দিতে হবে বলে নির্দেশ জারি করা হয়েছিল কেন? সুপ্রিম কোর্টে অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুক্তি, পরিযায়ী শ্রমিকেরা যাতে কাজের জায়গা ছেড়ে নিজেদের গ্রামে ফিরে না যান, সে কারণেই মার্চের শেষে ‘সাময়িক’ ভাবে এই নির্দেশ জারি করা হয়েছিল।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অশোক ভূষণের বেঞ্চ আজ জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশ মানা না হলেও কোনও সংস্থা বা নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে দমনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ওই নির্দেশ সংবিধান সম্মত কি না, ১২ জুন তার রায় ঘোষণা। লকডাউন জারির পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক নির্দেশ জারি করেছিল, লকডাউনে কাজ বন্ধ থাকলেও কর্মীদের পুরো বেতন দিতে হবে। মে মাসের শেষে অবশ্য সরকার নিজেই ওই নির্দেশিকা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। কিন্তু তার আগেই ওই নির্দেশিকার সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কর্নাটকের একটি সংস্থা সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে। পঞ্জাবের ছোট-মাঝারি শিল্প সংস্থাও মামলা করেছিল। আজ কেন্দ্রীর সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল প্রথমেই জানিয়ে দেন, ৫৪ দিনের জন্য ওই নির্দেশিকা একটি সাময়িক পদক্ষেপ ছিল। কোটি কোটি শ্রমিক নিজেদের বাড়িতে ফিরে যাচ্ছিলেন। লকডাউন উঠলে শিল্পে কাজ শুরু করা দরকার ছিল। কর্মীদের বেতন দিলেই তাঁরা থেকে যেতেন। সে কারণেই এই নির্দেশিকা জারি হয়। এমনিতে বেতন কর্মী ও সংস্থার বিষয়। সেখানে কেন্দ্র নাক গলায় না।
আরও পড়ুন: আসছে তেজসের উন্নত সংস্করণ, দেশীয় প্রযুক্তিতে ভারী যুদ্ধবিমান তৈরির অনুমোদন
সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রের এই অবস্থান শুনে বিরোধীদের যুক্তি, এ থেকেই স্পষ্ট মোদী সরকার আসলে শ্রমিকদের সুরাহার কথা ভেবে বেতন দেওয়ার নির্দেশ জারি করেনি। আজ শিল্পপতি রাজীব বজাজের সঙ্গে আলাপচারিতায় রাহুল গাঁধী মন্তব্য করেন, সরকারের অনেকেই তাঁকে ঘরোয়া আলোচনায় জানান, শ্রমিকদের হাতে ইচ্ছাকৃত ভাবেই নগদ টাকা তুলে দেওয়া হয়নি। কারণ টাকা পেলে শ্রমিকরা বিগড়ে গিয়ে আর গ্রাম থেকে ফিরবেন না।
সাময়িক হলেও কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে কোনও সংস্থাকে ১০০% বেতন দিতে বলার ক্ষমতা রয়েছে কি না, তা নিয়ে বিচারপতি ভূষণ প্রশ্ন তোলেন। শিল্প বিবাদ আইনে সরকার ছাঁটাই হওয়া কর্মীকে অর্ধেক বেতন দিতে বলতে পারে। কিন্তু সেই আইন কাজে না লাগিয়েই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ওই নির্দেশ জারি করে। মামলাকারীদের আইনজীবীরা বলেন, শ্রম মন্ত্রক বেসরকারি সংস্থাকে ছাঁটাই না করার নির্দেশ দিয়েছে, কিন্তু দুর্যোগ মোকাবিলা আইন কাজে লাগায়নি। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা উচিত।