বাবাকে নিয়ে একটানা সাত দিন সাইকেল চালিয়ে প্রায় বারোশো কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে জ্যোতি কুমারী। ছবি: সংগৃহীত।
লকডাউনের জেরে আচমকাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বাড়ি ফেরার রাস্তা। তবে তাতে দমে যায়নি বছর পনেরোর কিশোরী মেয়েটি। দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাবাকে সাইকেলে চাপিয়ে গুরুগ্রাম থেকে প্রায় বারোশো কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তাঁকে বিহারে ফিরিয়ে এনেছে সে। বিহারের জ্যোতি কুমারীর এ হেন লড়াকু মনোভাবকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন সকলেই। সম্প্রতি বিহারের কোচিং সেন্টার ‘সুপার ৩০’ থেকে আইআইটি-র প্রস্তুতির জন্য বিনামূল্যে প্রশিক্ষণের অফার পেয়েছে জ্যোতি।
টুইটারে জ্যোতি কুমারীকে ওই অফারের কথা জানিয়ে ‘সুপার ৩০’-এর প্রতিষ্ঠাতা আনন্দ কুমার লিখেছেন,‘‘দিল্লি থেকে বাবাকে সাইকেলে চাপিয়ে বারোশো কিলোমিটার পথ প্যাডেল করে নজির গড়েছে বিহারের মেয়ে জ্যোতি কুমারী। গত কাল আমার ভাই প্রণব তাঁর সঙ্গে দেখা করেছে। ভবিষ্যতে আইআইটি-র জন্য প্রস্তুতি নিতে চাইলে সুপার ৩০-তে তাকে স্বাগত।’’
শুধুমাত্র আনন্দ কুমারই নন, জ্যোতি কুমারীর সাহসিকতার তারিফ করেছেন বিহারের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও। ইতিমধ্যেই উত্তরপ্রদেশের অখিলেশ যাদবের দল সমাজবাদী পার্টি (সপা)-র তরফে তার জন্য ১ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করেছে। আর্থিক সাহায্য এসেছে তার নিজের রাজ্য থেকেও। গত সপ্তাহে বিহারের রামবিলাস পাসোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি জানিয়েছে, জ্যোতি যে কোনও শাখাতেই পড়তে ইচ্ছুক হোক না কেন, তার শিক্ষার খরচ বহন করবে তারা। দিল্লির সাইকেল ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া-র তরফ থেকেও ট্রায়ালের ডাক এসেছে জ্যোতির কাছে।
আরও পড়ুন: এক মাসেই দেশে কাজ হারিয়েছেন ১২ কোটি! সমীক্ষক সংস্থার রিপোর্টে ভয়ানক ইঙ্গিত
আরও পড়ুন: মৃত মায়ের ‘ঘুম’ ভাঙানোর চেষ্টা শিশুর
তবে এই মুহূর্তে শিরোনামে থাকলেও কিছু দিন আগেও পরিস্থিতি এতটা উজ্জ্বল ছিল না জ্যোতির কাছে। গুরুগ্রামে ই-রিকশা চালাতে গিয়ে গত মার্চে দুর্ঘটনায় পড়েন তাঁর বাবা মোহন পাসোয়ান। তার জেরে রিকশা চালানো বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। আচমকাই রুজিরোজগার চলে যাওয়ায় বিপাকে পড়ে গোটা পরিবার। তবে বাবার অবস্থা দেখে দমে যায়নি জ্যোতি। দুর্ঘটনার পর মার্চে বাবাকে দেখতে গুরুগ্রামে গিয়েছিল সে। সে সময় দেশ জুড়ে লকডাউনের জেরে সেখানেই আটকে পড়েছিল জ্যোতি। বার বার লকডাউনের সময়সীমা বাড়তে থাকায় বাড়ি ফেরার কোনও উপায় ছিল না। তবে দমে যায়নি জ্যোতি। বাবাকে বিহারের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে টাকা ধার করে একটা সাইকেল কিনে ফেলে। এর পর সাইকেলের পিছনে বাবাকে চাপিয়ে গুরুগ্রাম থেকে রওনা দেয় বিহারের পথে। সে অবস্থায় একটানা সাত দিন সাইকেল চালিয়ে প্রায় বারোশো কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে জ্যোতি। প্রায় দু’দিন খাওয়াদাওয়া নেই। তবে বাড়ি ফিরে আসার জেদে সে সবের পরোয়া করেনি জ্যোতি। শেষমেশ বিহারে নিজেদের বাড়িতে বাবাকে ফিরিয়ে আনতে পেরেছে বছর পনেরোর মেয়েটি।