Coronavirus

আটকে বেঙ্গালুরুতে, পকেট ফাঁকা, মাথায় হাত বাংলাদেশিদের

কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশন সূত্রে খবর, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, কলকাতা ও দিল্লিতে আটকে পড়া তাদের নাগরিকদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

Advertisement

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২০ ০৪:৩২
Share:

অপোক্ষা। ছবি: পিটিআই।

দু’দিন আগে বাজারে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বছর সত্তরের মহম্মদ শাজাহান। পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে আসায় সামান্য চাল-ডাল নিয়েই হোটেলে ফিরতে হয়েছে। ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা মহম্মদ শাজাহান বাংলাদেশের এক জন মুক্তিযোদ্ধা। পাকিস্তানি সেনার গুলি পিঠ ফুঁড়ে দেওয়ার পরেও সাহস হারাননি। তবে এখন বেঙ্গালুরুতে আটকে পড়ায় যত দিন যাচ্ছে একটু একটু করে কুঁকড়ে যাচ্ছেন ভয়ে।

Advertisement

একে বিদেশ। টাকা গোনাগুনতি। বাইরেও লকডাউন।

ফেরার জন্য ২৫ মার্চ বিমানের টিকিট কেটেছিলেন শাজাহান। তার আগেই হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় উড়ান। হোটেলে ভাড়া বাকি। হাতে যে কটা টাকা আছে, তাতে সপ্তাহখানেক চলতে পারে। হৃদরোগের চিকিৎসা করাতে ৬ মার্চ বেঙ্গালুরু যান শাজাহান। ২০ মার্চ হাসপাতালের চিকিৎসক তাঁকে দেশে ফিরে যেতে বলেন। তার পর থেকে হোটেল-বন্দি। মোবাইলের ও-প্রান্তে মানুষটার অবসন্ন কণ্ঠ— “কী যে হবে! কবে মিটবে!” শাজাহান জানান, চিকিৎসা করাতে এসে তাঁর মতো অন্তত এক হাজার বাংলাদেশি এখনও বেঙ্গালুরুতে আটকে।

Advertisement

একই অবস্থা বাংলাদেশের ফরিদপুর থেকে আসা বিজয়কৃষ্ণ বিশ্বাসদেরও। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতে ঢোকেন। পিসেমশাই সঞ্জয় রায়ের বাইপাস সার্জারি হয়েছে বেঙ্গালুরুর একটা হাসপাতালে। সঙ্গে আছেন তাঁর স্ত্রী এবং ভগ্নীপতি। ১৪ মার্চ অস্ত্রোপচারের পরে ছুটি হয়ে গিয়েছে ২৩ মার্চ। তার পর থেকে তাঁরা হোটেলে বন্দি। টাকা ফুরিয়ে এসেছে। হোটেল ভাড়া বাকি পড়ে গিয়েছে। ঘরে শুধু চাল আর ডাল। বিজয় বলছেন, “দুশ্চিন্তায় পিসেমশাই না ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন! হোটেল মালিক বার করে দিলে কোথায় থাকব!”

পিসির ছেলে সাব্বিরকে নিয়ে আগরতলা হয়ে বেঙ্গালুরু এসেছিলেন বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্বপন মিঞা। ১৭ মার্চ একটা হাসপাতালে তাঁর কোমরে জটিল অস্ত্রোপচার হয়েছে। ছেড়ে দিয়েছে ২৬ মার্চ। চিকিৎসা খরচ মিটিয়ে হাতে যা রয়েছে, হোটেল ভাড়া মেটালে ফেরার টাকা থাকে না। সব এজেন্সি বন্ধ থাকায় দেশ থেকে টাকাও আসছে না। ক্লান্ত গলায় স্বপন বলেন, “কী হবে বুঝতে পারছি না! বাংলাদেশ হাই কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তাঁরাও আশার আলো দেখাতে পারেননি।”

কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশন সূত্রে খবর, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, কলকাতা ও দিল্লিতে আটকে পড়া তাদের নাগরিকদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সবাইকে ধৈর্য ধরে থাকতে বলা হচ্ছে। বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, চেন্নাই ও বেঙ্গালুরুতে আটক বাংলাদেশিদের চার্টার্ড বিমানে ঢাকায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে তাদের কথাবার্তা চলছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement