গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আক্রান্তের সংখ্যায় ফের বড়সড় লাফ। দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে গিয়েছিল আগেই। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী, দেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫ লক্ষ ২৮ হাজার ৮৫৯। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ হাজার ৯০৬ জন যা এই সময়ের নিরিখে সর্বোচ্চ। দেশে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৬ হাজার ৯৫ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৪১০ জনের। সংক্রমণ বাড়লেও সুস্থ হয়ে ওঠার হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিমধ্যেই সুস্থ হয়েছেন ৩ লক্ষ ৯ হাজার ৭১৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১৩ হাজার ৮৩২ জন।
এক থেকে দুই লাখ ১৫ দিন। দুই থেকে তিন ১০ দিন। তিন থেকে চার ৮ দিন। চার থেকে পাঁচ লাখে পৌঁছতে লেগেছে মাত্র ৬ দিন। এ ভাবেই দেশে বেড়েছে কোভিডে আক্রান্তের সংখ্যা। গোটা বিশ্বে সংক্রমণের তালিকায় ভারত ইতিমধ্যেই চার নম্বরে উঠে এসেছে। মৃত্যুর নিরিখে বিশ্বে অষ্টম স্থানে। অন্যান্য দেশের তুলনায় মৃত্যুর হার কম হলেও গোটা পরিসংখ্যান কিন্তু যথেষ্টই চিন্তার কারণ, এমনটাই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এখন দেশে লকডাউনের কঠোরতা উঠে গিয়েছে। লোকাল ট্রেন, মেট্রো এবং আন্তর্জাতিক উড়ান বাদে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় পুরোটাই চালু। তাই রাস্তাঘাটে ভিড়ও বেড়েছে। তার উপর এ ভাবে সংক্রমণ বাড়তে থাকলে শেষ পর্যন্ত তা কোথায় গিয়ে থামবে, তা যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সংক্রমণের দিক থেকে দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্র। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ৫৯ হাজার ১৩৩ জন। তার পরেই রয়েছে দিল্লি। সেখানে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার জন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন। তার পরেই রয়েছে তামিলনাড়ু। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৮ হাজার ৩৩৫। তার পর রয়েছে গুজরাত (৩০,৭০৯), উত্তরপ্রদেশ (২১,৫৪৯)।
আরও পড়ুন: চিনের নয়া শিবির, সেনা বাড়াচ্ছে ভারত, লাদাখে জমি ফিরবে কি?
আরও পড়ুন: সেরো-সূচকে শীর্ষে কলকাতা, বৈঠকে মুখ্যসচিব
আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যুও ধারাবাহিক ভাবে বাড়ছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৪১০ জনের প্রাণ কেড়েছে করোনা। এ নিয়ে দেশে মোট মৃত্যু হল ১৬ হাজার ৯৫ জনের। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রেই মৃত্যু হয়েছে সাত হাজার ২৭৩ জনের। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজধানী দিল্লিতে মৃত্যু ধারাবাহিক ভাবে বেড়েছে। করোনার প্রভাবে সেখানে মোট দু’হাজার ৫৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তৃতীয় স্থানে থাকা গুজরাতে মারা গিয়েছেন এক হাজার ৭৮৯ জন। চলতি মাসে তামিলনাড়ুতেও ধারাবাহিক ভাবে বাড়ল করোনা প্রাণহানি। যার জেরে বেশ কয়েকটি রাজ্যকে টপকে তালিকার উপরের দিকে উঠে এসেছে দক্ষিণের এই রাজ্য। সেখানে এখনও অবধি ১০২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর পরই তালিকায় রয়েছে উত্তরপ্রদেশ (৬৪৯), পশ্চিমবঙ্গ (৬২৯) ও মধ্যপ্রদেশ (৫৫০)। এ ছাড়া শতাধিক মৃত্যুর তালিকায় রয়েছে রাজস্থান (৩৯১), তেলঙ্গানা (২৪৩), হরিয়ানা (২১৮), কর্নাটক (১৯১), অন্ধ্রপ্রদেশ (১৫৭) ও পঞ্জাব (১২৮)।
শনিবারই কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশে মোট করোনা সংক্রমণের ৮৫.৫ শতাংশ এবং মোট মৃত্যুর ৮৭ শতাংশই ৮টি রাজ্যের। এই রাজ্যগুলো হল— মহারাষ্ট্র, দিল্লি, তামিলনাড়ু, গুজরাত, তেলঙ্গানা, উত্তরপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ।
লকডাউন শিথিল হতে পশ্চিমবঙ্গেও বেড়েছে সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় ৫২১ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন এ রাজ্যে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ হাজার ৭১১। তার মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১০ হাজার ৭৮৯ জন। মারা গিয়েছেন ৬২৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন ১৩ জন। সুস্থ হয়েছেন ২৫৪ জন। সুস্থতার হার ৬৪.৫৬ শতাংশ।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।) (চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)