সাংবাদিক বৈঠকে কেজরীবাল। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
করোনা নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে নতুন করে সঙ্ঘাতের রাস্তায় গেলেন না দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। বরং উপরাজ্যপালের নির্দেশই মেনে চলবেন বলে জানিয়ে দিলেন তিনি। অর্থাৎ এখন থেকে দিল্লির সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে অন্য রাজ্যের মানুষও করোনার চিকিৎসা করাতে পারবেন। উপসর্গহীন বা করোনা সংক্রমিতের সংস্পর্শে এসেছেন, এমন মানুষও করোনা পরীক্ষা করাতে পারবেন।
দিল্লিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যে ভাবে বেড়ে চলেছে, সে কথা মাথায় রেখে সম্প্রতি দিল্লির সরকারি ও কিছু বেসরকারি হাসপাতালকে দিল্লিবাসীর জন্য সংরক্ষিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় অরবিন্দ কেজরীবাল সরকার। অন্য রাজ্যের মানুষ যাতে সংক্রমণ নিয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করতে না পারেন, তার জন্য সাময়িক ভাবে সীমানা বন্ধ রাখারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কিন্তু সোমবার কেজরীবাল সরকারের সেই ঘোষণা নাকচ করে দেন দিল্লির উপ রাজ্যপাল তথা দিল্লি ডিজ়াস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটির (ডিডিএমএ) চেয়ারম্যান অনিল বৈজল। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, দিল্লির বাসিন্দা নয় এই যুক্তিতে কোনও হাসপাতাল কাউকে ফেরাতে পারবে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্দেশ মেনে উপসর্গহীনদেরও পরীক্ষা করতে হবে।
আরও পড়ুন: ভারতে এই প্রথম সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যা পেরিয়ে গেল সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যাকে
উপরাজ্যপালের এই নির্দেশে জটিলতা বাড়বে বাড়বে বলে শুরুতে মন্তব্য করেছিলেন কেজরীবাল। এর পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ নিয়ে আর কোনও মন্তব্য করেননি। মঙ্গলবার করোনা পরীক্ষা হয় তাঁর, তবে রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। তার পর বুধবার ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানেই অনিল বৈজলের নির্দেশ মতো এগনো হবে বলে জানান তিনি।
এ দিন কেজরীবাল বলেন, ‘‘মন্ত্রিসভার বৈঠকে স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য দিল্লির সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলি সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সোমবার উপরাজ্যপাল সেই সিদ্ধান্ত নাকচ করে দেন। দিল্লিতে নির্বাচিত সরকার রয়েছে। কিছু মানুষ বলছেন, নির্বাচিত সরকাররে সিদ্ধান্ত এ ভাবে পাল্টে দেওয়া যায় না। কিন্তু আমার মতে কেন্দ্রীয় সরকার ও উপরাজ্যপাল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। সেটাই মেনে চলা উচিত।’’
গত চার মাসেরও বেশি সময় ধরে নোভেল করোনার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে গোটা দেশ। এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক মতভেদে না গিয়ে, কী ভাবে পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা যায়, সে দিকেই নজর দেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন কেজরীবাল। তাঁর কথায়, ‘‘এটা রাজনৈতিক মতবিরোধের সময় নয়। উপরাজ্যপাল ও কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ পালন করা হবে। এ নিয়ে কোনও লড়াই-ঝগড়া হবে না। নইলে করোনার জয় হবে।’’
আরও পড়ুন: শরীরে করোনা সংক্রমণ, চেন্নাইয়ের হাসপাতালে ডিএমকে বিধায়কের মৃত্যু
তবে দিল্লিতে বহিরাগতরা চিকিৎসা করাতে এলে পরিস্থিতি সামলানো মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে, সে কথাও মনে করিয়ে দেন কেজরীবাল। তিনি জানান, ১৫ জুনের মধ্যে দিল্লিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪ হাজারে গিয়ে ঠেকবে বলে ধারণা দিল্লি সরকারের। ৩০ জুনের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ছাড়িয়ে যেতে পারে। ১৫ জুলাই পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে ঠেকতে পারে ২ লক্ষ ২৫ হাজারে। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সংখ্যাটা সাড়ে ৫ লক্ষে গিয়ে দাঁড়াতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে বেডের চাহিদাও বাড়বে। প্রয়োজনে বিভিন্ন স্টেডিয়াম, ব্যাঙ্কোয়েট হল এবং হোটেলে ব্যবস্থা করতে হবে বলে জানান কেজরীবাল। যেন তেন প্রকারে বেডের ব্যবস্থা করতেই হবে বলে জানান তিনি।