Coroanvirus in India

বাংলায় খুলছে অফিস-ধর্মস্থান, কী পরিকল্পনা অন্য রাজ্যগুলোর

সব কিছু স্তব্ধ করে ঘরবন্দি থাকলে অর্থনীতি আরও ডুববে। বাড়বে সঙ্কট। আবার লকডাউন পুরোপুরি খুলে সব কিছু সচল হলে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২০ ২২:০৯
Share:

লকডাউনে সুনসান দিল্লি-নয়জা এক্সপ্রেসওয়ে। ছবি: পিটিআই

প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘জান ভি, জাঁহান ভি’। অর্থাৎ, জীবন ও জীবিকা দুই-ই বাঁচাতে হবে। সেই লক্ষ্যে তৃতীয় দফার লকডাউন শেষ হওয়ার আগে থেকেধীরে ধীরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছিল। তার পরে চতুর্থ দফায় সেই কর্মকাণ্ড আরও বেড়েছে। কিন্তু চতুর্থ দফার মেয়াদও শেষ হচ্ছে রবিবার। আগামিকাল শনিবার বা রবিবার নয়া নির্দেশিকা ঘোষণা করতে পারে কেন্দ্র। বাড়তে পারে লকডাউনের মেয়াদ। কিন্তু এ ভাবে সব কিছু স্তব্ধ করে ঘরবন্দি থাকলে অর্থনীতি আরও ডুববে। বাড়বে সঙ্কট। আবার লকডাউন পুরোপুরি খুলে সব কিছু সচল হলে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল। জীবন ও জীবিকার এই টানাপড়েনেই দ্বিধাবিভক্ত রাজ্যগুলিও।

Advertisement

তাই, কোনও রাজ্য চাইছে লকডাউন শিথিল করে স্কুল-কলেজ-সহ সব খুলে দেওয়া হোক। কোনও রাজ্যের মতে, অর্থনীতির হাল ফেরাতে শপিং মল, রেস্তরাঁ, জিম খুলে দেওয়া দরকার। কয়েকটি রাজ্য আবার এখনও কড়া ভাবে লকডাউন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে। কিছুটা শিথিল, কিছুটা চালু করে মধ্যপন্থায় মতও দিয়েছে অনেক রাজ্য। পশ্চিমবঙ্গে যেমন ১ জুন থেকে দরজা খুলছে ধর্মীয় স্থানগুলি। কেরল, কর্নাটকও সেই পথেই হাঁটতে চায়। আবার নবীন পট্টনায়কের মতো একাধিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী লকডাউন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে। এমনই সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রের নির্দেশিকার দিকে তাকিয়ে অধিকাংশ রাজ্য।

প্রত্যেক দফার লকডাউন শেষ হওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করেছেন বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে। শুধু এই দফাতে এখনও বৈঠক হয়নি এবং হওয়ার সম্ভাবনাও প্রায় নেই বললেই চলে। তবে রাজ্যগুলির মতামত নিয়েছে কেন্দ্র। বৃহস্পতিবার প্রথমে রাজ্যগুলির মুখ্যসচিব ও স্বাস্থ্যসচিবের সঙ্গে কথা বলেন কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবা। তার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এই দুই কথোপকথনেই উঠে এসেছে কোন রাজ্য কী চাইছে বা কেমন পরিকল্পনা করছে— সে কথা।

Advertisement

আরও পড়ুন: ১ জুন থেকে খুলছে ধর্মীয় স্থান, ৭ জুন চালু হচ্ছে অফিসও, বললেন মুখ্যমন্ত্রী

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করে দিয়েছেন যে, আগামী ১ জুন থেকে মন্দির, মসজিদ, গির্জা, গুরুদ্বার খোলা যাবে। তবে ধর্মীয় জমায়েত বা অনুষ্ঠান করা যাবে না। এক বারে ১০ জনের বেশি প্রবেশ করা যাবে না ভিতরে। সরকারি অফিসের কর্মীসংখ্যা বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি ২০ জন যাত্রী নিয়ে যে বাস পরিষেবা চালু হয়েছিল, তাতে সব আসনেই যাত্রী নেওয়ার অনুমোদন দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আবার শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজ্য পরিবহণ দফতর জানিয়েছে, আগামী ১ জুন থেকে চালু হচ্ছে ফেরি সার্ভিসও। ফলে কার্যত অর্থনীতির চাকা অনেকটাই সচল করার দিকে এগোচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ।

দেশের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যায় শীর্ষে মহারাষ্ট্র। দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ আক্রান্ত ও মৃত এই রাজ্যে। এখনও প্রতিদিন প্রচুর মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন এবং মারা যাচ্ছেন। সেখানে লকডাউনের কী পরিকল্পনা? মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, ১ জুনের পরেও মুম্বই এবং শহরতলিতে এখনও কড়াকড়ি জারি থাকবে। তবে রাজ্যের বাকি অংশে কিছুটা ছাড় দেওয়া হতে পারে।

ধর্মীয় স্থানগুলির প্রশ্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কার্যত একমত বি এস ইয়েদুরাপ্পা এবং পিনারাই বিজয়নও। কর্নাটক-কেরলের ওই দুই মুখ্যমন্ত্রী মন্দির-মসজিদ খুলে দেওয়ার পক্ষপাতী। তবে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী আবার বিমানযাত্রার ক্ষেত্রে কড়া অবস্থান নিয়েছেন। করোনার হটস্পট মহারাষ্ট্র, গুজরাত, তামিলনাডু়, মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থান— এই পাঁচ রাজ্য থেকে আসা কোনও বিমান কর্নাটকে নামতে দিতে রাজি নন ইয়েদুরাপ্পা। এ নিয়ে নির্দেশিকাও জারি হয়েছে। সিনেমা-সিরিয়ালের শুটিং শুরু করতে চান কেরলের মুখ্যমন্ত্রী।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

তেলঙ্গানায় চালু হতে পারে বাস, ট্যাক্সি। মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের (কেসিআর) ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে। শপিং মল ছাড়া সব দোকান খোলাতেও ছাড়পত্র দেওয়া হতে পারে। তেলঙ্গানার অর্থনীতিতে বড় প্রভাব রয়েছে সিনেমা শিল্পের। তাই সামাজিক দূরত্বের বিধি মেনে খুব শীঘ্রই শুটিং চালুর ভাবনাও রয়েছে কেসিআর-এর। রাজ্যের সিনেমাটোগ্রাফি মন্ত্রী টি শ্রীনিবাস যাদব বলেছেন, ‘‘আশা করি ১ জুন থেকে শুটিং চালু হবে।’’ যদিও কেন্দ্রের নির্দেশিকা দেখে নিয়েই সব কিছু ঘোষণা করতে চাইছেন কেসিআর।

আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় ৭৪৬৬, আক্রান্তের সংখ্যায় ভারত উঠে এল ন’নম্বরে

একমাত্র গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া অমিত শাহের সঙ্গে কথোপকথনের বিষয়ে মুখ খোলেননি কেউ। গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওন্তই বলেছেন, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে ১৫ জুন পর্যন্ত লকডাউন বাড়তে পারে।’’ কিন্তু গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী চান, মোটের উপর লকডাউন তুলে নেওয়া হোক। বিশেষ করে রেস্তরাঁগুলি চালু করা হোক। তবে সামাজিক দূরত্ব বিধি মানতে ৫০ শতাংশ কর্মী এবং সম অনুপাতে গ্রাহক—এ ভাবেইকাজ চালানোর প্রস্তাবও রয়েছে তাঁরা। জিমগুলিও চালু করার পক্ষে মত দিয়েছেন প্রমোদ।

ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী আবার আরও শিথিল করতে চান লকডাউন বিধি। সপ্তাহে ছ’দিন দোকানপাট খোলার অনুমতি ইতিমধ্যেই দিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল। তবে সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে চলার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি প্রকল্পের কাজও শীঘ্রই শুরু হবে বলে বাঘেলের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর। একই পথে হাঁটতে চায় জম্মু-কাশ্মীরের প্রশাসনও। অন্য দকে ছত্তীসগঢ়ে শিল্প-কারখানা খোলার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। যদিও তা নিয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

রাজস্থান আবার ‘কার্ফু’ এবং ‘নন কার্ফু’-এলাকা হিসেবে ভাগ করে আলাদা পরিকল্পনা নিয়েছে। নন কার্ফু এলাকায় প্রায় সব রকম কর্মকাণ্ড চালু করার অনুমোদন দেওয়ার পক্ষপাতী সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। কার্ফু জারি করা এলাকাতেও সন্ধ্যা সাতটা থেকে সকাল সাতটার বদলে রাত আটটা থেকে সকাল ছ’টা পর্যন্ত কার্ফুর সময়সীমা কমিয়ে আনার পক্ষে। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক চান লকডাউন ৪-এর বিধিনিষেধ পরবর্তী ধাপেও একই রাখতে। কোনও কিছুই শিথিল করার বিপক্ষে নবীন। পঞ্জাব, অন্ধ্রপ্রদেশ ও গুজরাত এখনও এ বিষয়ে আলোচনা করেনি বলে রাজ্য সরকারগুলির সূত্রে জানা গিয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশিকার দিকে তাকিয়ে এই রাজ্যগুলি।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধির নিরিখে প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন নজির তৈরি হচ্ছে দেশে। শুক্রবারই মৃতের সংখ্যায় চিনকেও ছাপিয়ে গিয়েছে ভারত। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৪৬৬ জন। দেশে মোট আক্রান্ত এক লক্ষ ৬৫ হাজার ৭৯৯ জন। মোট মৃত্যু হয়েছে চার হাজার ৭০৬ জনের। অর্থাৎ লকডাউন চালিয়েও সংক্রমণ যে পুরোপুরি আটকে দেওয়া গিয়েছে, এমনটা দাবি করা যাচ্ছে না। বিরোধীরাও এ নিয়ে সমালোচনায় সরব হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র বৈঠক করেছেন অমিত শাহের সঙ্গে। সেখানেও পরবর্তী রণকৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কাল শনিবার অথবা রবিবারই লকডাউনের পরবর্তী নির্দেশিকা ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা। চতুর্থ দফাতেই কী খোলা হবে বা কী বন্ধ রাখা হবে, সেই সিদ্ধান্ত রাজ্যের উপরেই ছেড়েছিল কেন্দ্র। ফলে কেন্দ্রের নির্দেশিকা ঘোষণা হওয়ার পর একাধিক রাজ্য নিজেদের মতো করে আলাদা পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করবে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement