গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
অতিমারিকে সঙ্গে নিয়েই উৎসবের প্রস্তুতি চলছে দেশে। কিন্তু নোভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপে প্রাণহানি কিছুতেই রোখা যাচ্ছে না। বরং দু’সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে দৈনিক মৃত্যুসংখ্যা ফের হাজারের কোটা ছাড়িয়ে গেল। একই সঙ্গে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সংক্রমণ বৃদ্ধিও। দেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭৫ লক্ষ ছুঁইছুঁই।
রবিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৬১ হাজার ৮৭১ জন। গত দু’দিনের তুলনায় সংখ্যাটা কম হলেও, আমেরিকা এবং ব্রাজিলের চেয়ে সংখ্যাটা বেশি। কারণ ওই সময়কালে আমেরিকায় ৫৭ হাজার ১৬৪ জন এবং ব্রাজিলে ২৪ হাজার ৬২ জন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। তাই দৈনিক সংক্রমণ বৃদ্ধিতে ভারতের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
শুধু তাই নয়, যে হারে দেশে দৈনিক সংক্রমণ বেড়েই চলেছে, তাতে খুব শীঘ্র বিশ্ব তালিকায় ভারত শীর্ষে পৌঁছে যাবে বলে আশঙ্কা তাঁদের। কারণ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভারতে এই মুহূর্তে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭৪ লক্ষ ৯৪ হাজার ৫৫১। প্রথম স্থানে থাকা আমেরিকায় সংখ্যাটা ৮১ লক্ষ ৫ হাজার ৮৮৮। অর্থাৎ মাঝখানে ব্যবধান মাত্র ৬ লক্ষ ১১ হাজার ৩৩৭। তৃতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে এখনও পর্যন্ত ৫২ লক্ষ ২৪ হাজার ৩৬২ জন কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
আরও পড়ুন: চিন তো অনেক দূর, ক্ষুধা সূচকে পাকিস্তান-বাংলাদেশের থেকেও পিছিয়ে ভারত
মৃত্যুর নিরিখে এই মুহূর্তে বিশ্ব তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। প্রথম স্থানে থাকা আমেরিকায় এখনও পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২ লক্ষ ১৯ হাজার ২৮৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ব্রাজিলে মোট মৃতের সংখ্যা ১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৬৭৫। ভারতে সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ ১৪ হাজার ৩১ জন করোনা রোগী প্রাণ হারিয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টাতেই ১ হাজার ৩৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ৩ অক্টোবরের পর প্রায় দু’সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে মৃত্যুসংখ্যা ফের হাজারের কোটা ছাড়াল।
তবে আক্রান্ত ও মৃত্যুসংখ্যা যেমন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দিয়েছে সুস্থতার হার। মোট করোনা আক্রান্তের মধ্যে ৬৫ লক্ষ ৯৭ হাজার ২০৯ জন রোগী এখনও পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৭২ হাজার ৬১৪ জন করোনা রোগী। তার ফলে সুস্থতার হার বেড়ে ৮৮.০৩ শতাংশ হয়েছে। এই মুহূর্তে দেশে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ৭ লক্ষ ৮৩ হাজার ৩১১। গত ৪ অক্টোবর থেকে দৈনিক সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ক্রমেই কমছে।
প্রতি দিন যত সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা হচ্ছে তার মধ্যে যত শতাংশের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, তাকে পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার বলা হয়। বিক্ষিপ্ত কিছু দিন বাদ দিলে সেপ্টেম্বর থেকেই সংক্রমণের হার ৬-৮ শতাংশের মধ্যেই ঘোরাফেরা করছিল। গতকাল সংক্রমণের হার ছিল ৬.২৩ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় তা সামান্য বেড়ে ৬.৩৮ হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা পরীক্ষা হয়েছে ৯ লক্ষ ৭০ হাজার ১৭৩টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
সংক্রমণ এবং মৃত্যুর নিরিখে দেশের মধ্যে মহারাষ্ট্রই এখনও শীর্ষে রয়েছে। সেখানে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ লক্ষ ৮৬ হাজার ৩২১। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৩ লক্ষ ৫৮ হাজার ৬০৬ জন রোগী। করোনার প্রকোপে সেখানে প্রাণ হারিয়েছেন ৪১ হাজার ৯৬৫ জন। সংক্রমণের নিরিখে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ। সেখানে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭ লক্ষ ৭৯ হাজার ১৪৬। এখনও পর্যন্ত ৬ হাজার ৪০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে সেখানে।
আবার সংক্রমণের নিরিখে অন্ধ্রপ্রদেশের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও, কর্নাটক, তামিলনাড়ু এবং উত্তরপ্রদেশে মৃতের সংখ্যা তুলনায় অনেকটাই বেশি। সংক্রমণের নিরিখে তৃতীয় স্থানে থাকে কর্নাটকে (৭ লক্ষ ৫৮ হাজার ৫৭৪) এখনও পর্যন্ত ১০ হাজার ৪২৭ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তালিকায় চতুর্থ স্থানে থাকা তামিলনাড়ুতে (৬ লক্ষ ৮৩ হাজার ৪৮৬) সংখ্যাটা আরও বেশি, ১০ হাজার ৫৮৬। তালিকায় পঞ্চম স্থানে থাকা উত্তরপ্রদেশে (৪ লক্ষ ৫২ হাজার ৬৬০) এখনও পর্যন্ত ৬ হাজার ৬২৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
কেরলে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লক্ষ ৩৪ হাজার ২২৮। সংক্রমণের নিরিখে তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে কেরল। সেখানে এখনও পর্যন্ত ১ হাজার ১৩৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তালিকায় সপ্তম স্থানে থাকা দিল্লিতে (৩ লক্ষ ২৭ হাজার ৭১৮) মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৯৮১ জনের। তালিকায় অষ্টম স্থানে থাকা পশ্চিমবঙ্গে (৩ লক্ষ ১৭ হাজার ৫৩) মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ৯৯২। সংক্রমণের নিরিখে তালিকায় নবম স্থানে রয়েছে ওড়িশা। সেখানে এখনও পর্যন্ত ২ লক্ষ ৬৬ হাজার মানুষ করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ১২১ জন। তালিকায় দশম স্থানে থাকা তেলঙ্গানায় মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ২৭১। মোট সংক্রমিতের সংখ্যা ২ লক্ষ ২২ হাজার ১১।
তবে প্রথম দশে না থেকেও যে রাজ্যগুলিতে মৃতের সংখ্যা হাজারের বেশি ছাড়িয়ে গিয়েছে, সেগুলি হল— রাজস্থান (১৭৩৫), মধ্যপ্রদেশ (২৭৫৩), ছত্তীসগঢ় (১৪৩৯), গুজরাত (৩৬২৬), হরিয়ানা (১৬৪০), পঞ্জাব (৩৯৯৯) এবং জম্মু ও কাশ্মীর (১৩৭২)।
আরও পড়ুন: ভোটের মতো গুরুত্বে টিকা বিলি: মোদী
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)