ফাইল চিত্র।
জেলা স্তরে হতে পারে। লকডাউন নাম না দিলেও বিভিন্ন রাজ্যেও কার্যত লকডাউনই জারি হতে পারে। কিন্তু দেশ জুড়ে কঠোর লকডাউন হবে না। নরেন্দ্র মোদী সরকার এখনও এই অবস্থানেই দাঁড়িয়ে।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন গত সপ্তাহেই বলেছিলেন, কোভিড অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়লেও, কেন্দ্রীয় সরকারের স্পষ্ট নীতি, বড় মাপের লকডাউন হবে না। তাঁর যুক্তি ছিল, সরকার কোনও ভাবেই অর্থনীতির চাকা পুরোপুরি আটকে দিতে চায় না।
গত এক সপ্তাহে অবশ্য পরিস্থিতির অনেকটাই অবনতি হয়েছে। সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত হিসেবে, তার আগের ২৪ ঘণ্টায় ২ লক্ষ ৭৩ হাজারের বেশি নতুন মানুষ কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গিয়েছেন ১৬১৯ জন। এক সপ্তাহ আগেই এই সংখ্যাটা ছিল এর অর্ধেকের মতো। তা সত্ত্বেও অর্থমন্ত্রী রবিবার শিল্পমহলের সঙ্গে কথা বলে বার্তা দিয়েছেন, সরকার পুরোপুরি লকডাউনের কথা ভাবছে না। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, শিল্পমহলেরও এতে সায় নেই। আবার, গত ৩০ মার্চ স্বাস্থ্যসচিব রাজ্যগুলিকে কোভিড ভাইরাসের ‘চেন অফ ট্রান্সমিশন’ রুখতে অন্তত ১৪ দিনের ‘কন্টেনমেন্ট জ়োন’ জরুরি বলে জানিয়েছিলেন।
তার পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে থাকা রাজ্যগুলির স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকেও একই পরামর্শ দিয়েছেন। এই কন্টেনমেন্ট জ়োন’ একটা গোটা জেলায় হতে পারে। বড় শহর জুড়েও হতে পারে। কিন্তু দেশ জুড়ে নয়।
জাতীয় স্তরে লকডাউন না হলেও মহারাষ্ট্র থেকে কর্নাটক, দিল্লি থেকে পঞ্জাবের মতো রাজ্যে নানা রকম বিধিনিষেধ, রাতে কার্ফু জারি হতে শুরু হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে রাজ্যগুলি লকডাউন শব্দও ব্যবহার করতে চাইছিল না। কিন্তু দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল শনি-রবিবার কার্ফুর পরে সোমবার রাত থেকে ফের ছ’দিনের লকডাউনই ঘোষণা করেছেন। মহারাষ্ট্রে আগেভাগেই গোটা এপ্রিল বিধিনিষেধ জারি হয়ে রয়েছে। রাজস্থানে সোমবার থেকে ১৫ দিনের লকডাউন চালু হচ্ছে। বিহার, তামিলনাড়ুতেও শুরু হচ্ছে রাত্রিকালীন কার্ফু। রবিবার তামিলনাড়ুতে সম্পূর্ণ লকডাউন হবে। এলাহাবাদ হাই কোর্ট উত্তরপ্রদেশের পাঁচটি প্রধান শহরে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন জারির নির্দেশ দিয়েছে। হাইকোর্টের প্রশ্ন, প্রশাসন আগেভাগে দ্বিতীয় ঢেউ আঁচ করে ব্যবস্থা নেয়নি কেন?
সব রাজ্যে আলাদা ভাবে লকডাউন জারি হলে জাতীয় স্তরে লকডাউনের সঙ্গে ফারাক কী থাকবে? সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, ট্রেন-বিমানের মতো পরিবহণ ব্যবস্থা পুরোপুরি বন্ধ হবে না। সব রাজ্যেও একসঙ্গে লকডাউন হচ্ছে না। অর্থনীতির কথা ভেবে কারখানা, নির্মাণ ক্ষেত্রও যতটা সম্ভব চালু থাকবে।
সরকারের শীর্ষ মহলের বক্তব্য, ২০২০-তে ৩০ জানুয়ারিতে দেশে কোভিড প্রথম ধরা পড়েছিল। ২৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রী দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষণা করেন। প্রথমে ২১ দিন, তারপর ৩১ মে পর্যন্ত পুরো লকডাউন ছিল। এর ফলে কোভিডের সংক্রমণ অনেকটা রোখা গেলেও, অর্থনীতিতে এমন ক্ষত তৈরি হয়েছে, যা এখনও মেরামত করা যায়নি। মূলত অর্থনীতির কথা ভেবেই পুরোপুরি লকডাউনের পথে আর হাঁটতে নারাজ কেন্দ্র।
কেন্দ্রীয় সরকারের শীর্ষ কর্তাদের বক্তব্য, সরকারের কোভিড মোকাবিলা পাঁচটি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। এক, পরীক্ষা, দুই, সংক্রমিতদের চিহ্নিতকরণ, তিন, চিকিৎসা, চার, প্রতিষেধক এবং পাঁচ, কোভিড স্বাস্থ্যবিধি। কোভিডের সংক্রমণ রুখতে প্রাথমিক ভাবে কেন্দ্র রাজ্যগুলিকে ছোট এলাকায় ‘কন্টেনমেন্ট জ়োন’ জারি করতে বলেছিল। তার পরে নীতি পাল্টে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক বড় মাপের ‘কন্টেনমেন্ট জ়োন’ এর কথাও রাজ্যগুলিকে বলেছে। কোভিড সংক্রমণ যে ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, তা রুখতেই এই ‘মাইক্রো কন্টেনমেন্ট জোন’ থেকে ‘লার্জ কন্টেনমেন্ট জোন’-এর কথা বলা হয়েছে বলে সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা।