প্রতীকী ছবি।
মহারাষ্ট্র মাঠে নেমেছে। তামিলনাড়ুও। উত্তরপ্রদেশ, কর্নাটকও। পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ ইঙ্গিত দিয়েছে, তারাও মাঠে নামবে।
সব রাজ্যই নিজেদের মতো দুনিয়ার বাজারে প্রতিষেধক কিনতে নেমে পড়েছে। প্রতিযোগিতা চলছে, কে আগে প্রতিষেধক কিনতে পারে!
আতঙ্কিত বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, নিজেদের মধ্যে এই প্রতিযোগিতার জেরে তো সব রাজ্যকেই অনেক বেশি দামে টিকা কিনতে হবে। দ্রুত টিকা জোগানোর জন্য বিদেশি টিকা সংস্থাগুলির উপরে চাপও তৈরি করা যাবে না। এর বদলে যদি কেন্দ্রীয় সরকার গোটা দেশের জন্য এক লপ্তে টিকা কিনত, তা হলে দরদাম করে অনেক কমে টিকা পাওয়া যেত। যত শীঘ্র সম্ভব, টিকা জোগানের জন্যও দর কষাকষি করা যেত।
কেন্দ্রীয় সরকারের অন্দরমহলেও এ নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। নীতি আয়োগের এক উপদেষ্টা বলেন, “ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের দেশগুলির জন্য টিকা কিনছে। আফ্রিকার ৫৫টি দেশ মিলে আফ্রিকান ভ্যাকসিন অ্যাকুইজিশন ট্রাস্ট তৈরি করেছে, যাতে জনসন অ্যান্ড জনসনের থেকে ২২ কোটি ডোজ় টিকা কেনার জন্য দর কষাকষি করতে পারে। এ দিকে আমাদের দেশের রাজ্যগুলি নিজেদের মধ্যেই প্রতিযোগিতা করছে।”
এখনও পর্যন্ত ৯টি রাজ্য বিশ্ব বাজার থেকে টিকা কিনতে ‘গ্লোবাল টেন্ডার’-এর ঘোষণা করেছে। এই ৯টি রাজ্য প্রায় ২৮ কোটি ডোজ় টিকা কিনতে চায়। পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, বিহারের মতো রাজ্যগুলি একই পথে হাঁটতে পারে। কিন্তু কবে টিকা মিলবে, তার কোনও দিশা নেই। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আফ্রিকান ইউনিয়ন, এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গরিব দেশগুলিকে টিকা বিলির জন্য টিকা কেনার যে চুক্তি করেছে, উৎপাদক সংস্থাগুলি সেই অনুযায়ী টিকাই জোগাতে পারছে না। কংগ্রেস শাসিত একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করতে আমরা গ্লোবাল টেন্ডার ঘোষণা করছিলাম ঠিকই। কিন্তু আগামী ছ’মাসের আগে টিকা হাতে পাওয়া যাবে না, তা বোঝাই যাচ্ছে।”
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যগুলি ফের মোদী সরকারের উপরে চাপ তৈরি করতে চাইছে, যাতে কেন্দ্রই টিকা কিনে রাজ্যগুলির মধ্যে বিলি করে। দিল্লির উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়ার বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী কোভিড মোকাবিলার যাবতীয় সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় ভাবে নিচ্ছেন। কিন্তু টিকা কেনার দায় বিকেন্দ্রীকরণ করে দিয়েছেন।
আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বারাণসীর চিকিৎসকদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে বলেছেন, টিকাকরণ সকলের দায়িত্ব। কংগ্রেসের প্রশ্ন, সামগ্রিক দায়িত্ব বলতে প্রধানমন্ত্রী কী বোঝাতে চাইছেন? সকলে মিলে টিকা তৈরি করবে? এক জন আর এক জনের জন্য টিকা জোগাড় করবে? প্রধানমন্ত্রী টিকাকরণকেও সামগ্রিক ভাবে সকলের দায়িত্ব বলে নিজের দায় এড়াতে চাইছেন। অথচ টিকাকরণের সার্টিফিকিটে তাঁর নিজের ছবি চাই। ছত্তীসগঢ়, ঝাড়খণ্ড সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের জন্য টিকা যখন রাজ্যই কিনবে, তখন সেই সার্টিফিকেটে মুখ্যমন্ত্রীদেরই ছবি থাকবে।
চলতি সপ্তাহে গত আড়াই মাসের হিসেবে সব থেকে কম টিকাকরণ হয়েছে। আজ কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী পরিসংখ্যান তুলে ধরে দেখিয়েছেন, দেশের ৭০ শতাংশ জেলায় প্রতি ১০০ জনের জন্য মাত্র ২০ ডোজ় টিকা পৌঁছেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তারা মানছেন, টিকার অভাবই এর কারণ। তবে সরকারের দাবি, এপ্রিলের হিসেব অনুযায়ী, তখন মাসে দেশে ৭ কোটি টিকার ডোজ় তৈরি হচ্ছিল। জুলাইয়ে তা ১৭ কোটিতে পৌঁছে যাবে। অক্টোবরে ২৫ কোটিতে। তা সত্ত্বেও অগস্ট থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে টিকা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সরকারি সূত্রের দাবি, দেশের বাইরেও কোভ্যাক্সিন তৈরির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু-র সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা হবে। কোভ্যাক্সিনের উৎপাদন বাড়াতে সম্প্রতি তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মডার্না, জনসন অ্যান্ড জনসন ও অন্যান্য টিকা উৎপাদক সংস্থাকে অনুরোধ করা হবে, তারা যেন এ দেশের কোনও সংস্থাকে টিকা তৈরির লাইসেন্স দেয়। চলতি সপ্তাহেই আন্তঃমন্ত্রক গোষ্ঠীতে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।