প্রতীকী ছবি।
লকডাউন ভেঙে বিনা প্রয়োজনে রাস্তায় বেরোলেই পুলিশের প্রশ্নের মুখে পড়ছেন আমজনতা। মারধর করে ঘরবন্দি করার ছবিও ধরা পড়ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। কিন্তু সেই আইনের রক্ষকই ভাঙলেন আইন। হোম কোয়রান্টিনে থাকতে বলার পরেও বাইরে ঘুরে বেড়িয়েছেন তেলঙ্গানার এক পদস্থ পুলিশ অফিসার। ইচ্ছাকৃত ভাবে আইন না মানা এবং অন্যদের জীবন বিপন্ন করার অভিযোগে এফআইআর দায়ের হল ওই পুলিশ অফিসার ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে। ডিএসপি পদমর্যাদার ওই অফিসারের ‘কোভিড-১৯ পজিটিভ’ বা করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে।ওই অফিসার, তাঁর ছেলে এবং পরিবারের সদস্যরা কার কার সংস্পর্শে এসেছিলেন, তাঁদের খুঁজে বার করার চেষ্টা করছে রাজ্য প্রশাসন।
তেলঙ্গানার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এসএম আলি নামে ভদদ্রি কোথাগুড়েমের ডিএসপি পদমর্যাদার ওই পুলিশ অফিসারের বছর তেইশের ছেলে সম্প্রতি লন্ডন থেকে ফিরেছিলেন। তাঁর করোনা সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়ার পরেই ডিএসপি আলি এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের হোম কোয়রান্টিন বা ঘরবন্দি থাকতে বলেছিল রাজ্য প্রশাসন। কিন্তু তিনি সেই নিয়ম না মেনে বাইরে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। তার জেরেই আলির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছন তেলঙ্গানার স্বাস্থ্যমন্ত্রী এটালা রাজেন্দ্র। আবার মঙ্গলবারই তাঁদের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসার পর জানা যায়, আলি ও তাঁদের পরিচারিকারও করোনা সংক্রমণ নিশ্চিত হয়েছে।
এটালা রাজেন্দ্র জানিয়েছেন, সরকারি ভাবে কড়া নির্দেশিকা সত্ত্বেও আলি ও তাঁর ছেলে বাধ্যতামূলক হোম কোয়রান্টিনের নিয়ম ভেঙেছেন। তার পরেই স্বেচ্ছায় সেই নিয়ম অবজ্ঞা করা এবং অন্যদের জীবন বিপন্ন করার অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৮ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এটা কোনও ব্যক্তিগত ব্যাপার নয়। জনস্বার্থের বিষয়। বহু মানুষের জীবন ঝুঁকির মুখোমুখি হতে পারে। যেই আইন ভঙ্গ করুন, কড়া আইনি ব্যবস্থার মুখে পড়তে হবে। কাউকে ছাড়া হবে না। সরকারের পক্ষ থেকে এটাকে একটা সতর্কতা হিসেবে নিন যে, কোয়রান্টিনের নিয়ম ভাঙলে তার ফল ভোগ করতেই হবে।’’
আরও পড়ুন: এ বার করোনার ভরকেন্দ্র হতে চলেছে আমেরিকা? অশনি সঙ্কেত দিল হু
অন্য দিকে ওই অফিসারের ঘনিষ্ঠ অন্য এক পুলিশ অফিসার জানিয়েছেন, লন্ডন থেকে ফিরে ডিএসপি আলির ছেলেও যথেচ্ছ ঘুরে বেড়িয়েছেন। স্থানীয় একটি সেলুনে গিয়ে চুল কাটিয়েছেন। যোগ দিয়েছিলেন একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানেও। পাশাপাশি লাগোয়া রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশের গোদাবরী জেলায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ওই পরিবারের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি তিন৩ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ এলাকা পুরোপুরি লকডাউন করার চেষ্টা চলছে। ডিএসপি আলির সঙ্গে দু’জন নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন। তাঁদেরও আইসোলেশনে থাকতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: লকডাউন না মানলে প্রয়োজনে রাস্তায় দেখলেই গুলি, হুঁশিয়ারি কেসিআরের
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের হিসেবে তেলঙ্গানায় বর্তমানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫। তার মধ্যে ১০ জন বিদেশি। রাজ্যের বাসিন্দা যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরাও কোনও না কোনও ভাবে বিদেশ থেকে ফেরা বা সরাসরি বিদেশিদের সংস্পর্শে এসেছেন। চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন এক জন। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার সারা দেশে লকডাউন ঘোষণার আগেই রাজ্যের অধিকাংশ এলাকায় লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও। তিনি জানিয়েছিলেন, রাজ্যে বিদেশ থেকে এসেছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ। সোমবার রাজ্য সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয়, লকডাউনের নিয়ম ভাঙলে কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার পরেই পুলিশ অফিসার ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা।