ছবি এএফপি।
করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে দিল্লিতে। কিন্তু তা শীর্ষ ছুঁয়ে এখন নিম্নগামী। আজ এই দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। সম্ভবত এই প্রথম কোনও রাজ্যের তরফে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কথা মেনে নেওয়া হল।
একই রোগীর দ্বিতীয় বার সংক্রমণের খবর দক্ষিণ ভারত থেকেই প্রথমে আসতে শুরু করছিল। দিল্লিতে পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধির পরে সেপ্টেম্বরে দৈনিক সংক্রমণের লেখচিত্রও ঊর্ধ্বগামী হয়। এমনকি ৪৯০০ জনও সংক্রমিত হন এক দিনে। আজ ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ কেন্দ্রীয় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে কেজরীবাল বলেন, ‘‘বিশেষজ্ঞেরা মনে করেন, সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ দেখছে জাতীয় রাজধানী। ১৬ সেপ্টেম্বর প্রায় ৪৫০০ জনের সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। তার পরে সংখ্যাটা কমতে শুরু করে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৭০০ জন সংক্রমিত হয়েছেন। এটা আরও কমবে।’’
কেজরীবালের বক্তব্য, ১৭ অগস্ট থেকে দিল্লিতে দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা কিছুটা বেড়ে ১১০০-১৫০০ মতো হচ্ছিল। রাজ্য সরকার তখন ঝুঁকি না-নিয়ে রোজ ২০ হাজার থেকে ৬০ হাজার পরীক্ষা করিয়েছিল। তাঁর মতে, পরীক্ষার সংখ্যা কমিয়ে দিলে সংক্রমিতের সংখ্যাও কমে আসত। কিন্তু জরুরি ভিত্তিতে পরীক্ষা ও সংক্রমিতদের চিহ্নিত করাটাই করোনাকে হারানোর শ্রেষ্ঠ পথ। দিল্লিতে কন্টেনমেন্ট এলাকার সংখ্যা বাড়িয়ে ৫৫০ থেকে ২০০০ করা হয়েছিল। তাতেও সংক্রমণ কমবে বলে মুখ্যমন্ত্রী আশাবাদী। প্রসঙ্গত, দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া কোভিড আক্রান্ত হয়ে এখনও সরকারি লোকনায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণ হাসপাতালের আইসিইউ-তে রয়েছেন। তবে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। প্রয়োজন মতো অক্সিজেন লাগছে। দিন দুয়েকের মধ্যেই তাঁর আরও এক বার কোভিড পরীক্ষা হবে বলে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।
কোভিডে আক্রান্ত হয়ে গত কাল প্রয়াত হয়েছেন রেল প্রতিমন্ত্রী সুরেশ অঙ্গদি। আজ বেঙ্গালুরুর হাসপাতালে মারা যান কংগ্রেসের বিধায়ক বি নারায়ণ রাও (৬৫)। বিদরের বিধায়ক রাওয়ের গত ১ সেপ্টেম্বর করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। ক্রমশ একাধিক অঙ্গ বিকল হয়ে যায়। আজ মহারাষ্ট্রের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী একনাথ শিন্দের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। তাঁকে নিয়ে উদ্ধব ঠাকরের মন্ত্রিসভার ১৩ জন সদস্য সংক্রমিত হলেন। টুইটারে নিজেই এই খবর দিয়ে শিন্দে আজ আবেদন করেছেন, তাঁর সংস্পর্শে আসা সকলেই যেন কোভিড পরীক্ষা করান। চলতি সপ্তাহেই মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন শিন্দে। ফলে চিন্তা রয়েছে সরকারি মহলে।
গত কয়েক দিনের মতো আজও ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে নতুন সংক্রমিতের চেয়ে সুস্থের সংখ্যা বেশি, তবে দুইয়ের ব্যবধান কমেছে। নতুন আক্রান্ত যেখানে ৮৬,৫০৮, সেখানে সুস্থ ৮৭,৩৭৪। তবে মৃতের সংখ্যা ফের ১১০০ পেরিয়েছে। সারা দেশে কোভিডে মৃত্যুহার এখন ১.৫৯ শতাংশ। সুস্থতার হার ৮১.৫৫ শতাংশ। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বক্তব্য, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন সংক্রমিতদের ৭৫ শতাংশই ১০টি রাজ্যের বাসিন্দা। সেগুলি হল— মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, ওড়িশা, দিল্লি, কেরল, পশ্চিমবঙ্গ ও ছত্তীসগঢ়। ২১ হাজারের বেশি নতুন সংক্রমণ শুধু মহারাষ্ট্রে। অন্ধ্র ও কর্নাটকে সংখ্যাটা যথাক্রমে ৭০০০ ও ৬০০০ পেরিয়েছে। ১১২৯টি মৃত্যুর ৮৩ শতাংশও পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১০টি রাজ্যে সীমাবদ্ধ। কেন্দ্রীয় কর্তাদের বক্তব্য, পরীক্ষা কমছে বলেই সংক্রমিতের সংখ্যা কমছে, এমন নয়। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১১ লক্ষের বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।