আমদাবাদের একটি ল্যাবে চলছে করোনার পরীক্ষা। ছবি: এএফপি
শনিবার নতুন করে আরও তিন জনের নোভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত হল। লাদাখে দু’জন এবং তামিলনাড়ুর এক জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বিশেষ সচিব সঞ্জীব কুমার। লাদাখের ওই দুই ব্যক্তি সম্প্রতি ইরানে গিয়েছিলেন। তামিলনাড়ুর আক্রান্ত ব্যক্তি গিয়েছিলেন ওমানে। তবে তাঁদের তিন জনের অবস্থাই স্থিতিশীল বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
করোনা আতঙ্ক ছড়িয়েছে উপত্যকায়। দু’জনের শরীরে কোভিড-১৯ সংক্রমণ হয়েছে সন্দেহে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জম্মু ও সাম্বা জেলার সব প্রাথমিক স্কুল। নিষিদ্ধ করা হয়েছে অফিসকাছারিতে বায়োমেট্রিক হাজিরার ব্যবস্থা।
এ দিকে ভুটানে শুক্রবার আমেরিকার যে নাগরিকের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে, তিনি থিম্পু যাওয়ার আগে বেশ কয়েকদিন অসমের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাফেরা করেছেন। ফলে অসমেও শতাধিক লোককে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, উদ্বেগ বাড়ছে দেশের নতুন নতুন প্রান্তেও।
দেশে করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে আজ বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন। বর্তমান পরিস্থিতির মোকাবিলায় কী কী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। উপস্থিত ছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, স্বাস্থ্যমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী অশ্বিনী কুমার চৌবে এবং সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রকের পদস্থ আধিকারিকরা। প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রে খবর, কোন কোন হাসপাতালে আইসোলেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে সেটা নির্ধারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া ইরানে আটকে পড়া ভারতীয়দের দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা করার নির্দেশও দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী।
মোদীর সাবধানবাণী
শনিবার সকালে দিল্লিতে ‘প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় জনৌষধি পরিযোজনা’ কর্মসূচির একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে এই প্রকল্পের আওতায় থাকা লোকজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। তার ফাঁকেই তিনি সাধারণ মানুষকে করোনা নিয়ে সাবধান করেছেন। বলেছেন, ‘‘গুজবকে বিশ্বাস করবেন না। কোনও রকম সন্দেহ হলেই চিকিৎসকের কাছে যান এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করান। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা। সোশ্যাল মিডিয়া-সহ নানা জায়গায় গুজব, ভুয়ো খবর ঘুরে বেড়াচ্ছে।’’
জম্মুতে বন্ধ স্কুল
জম্মুর জিএমসি হাসপাতালে ইতালি ও দক্ষিণ কোরিয়া ফেরত দু’জন করোনা সংক্রামিত সন্দেহে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন। কিন্তু দু’জনই হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান। পরে আবার তাঁদের এনে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দু’জনেরই কোভিড-১৯ সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন নবগঠিত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু কাশ্মীরের প্রধান সচিব (পরিকল্পনা) রোহিত কানসাল। সার্বিক পরিস্থিতি জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সমস্ত প্রটোকল মেনে সন্দেহজনক দু’জনকেই জিএমসি হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। ৩১ মার্চ পর্যন্ত জম্মু আর সাম্বায় বায়োমেট্রিক হাজিরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই দিন পর্যন্তই জম্মু ও সাম্বার সব প্রাথমিক স্কুল বন্ধ রাখা হবে।’’ কানসাল আরও বলেন, ‘‘জম্মুর সন্দেহজনক দু’জনের রিপোর্ট মিলেছে। দু’জনেরই ভাইরাস সংক্রমণ রয়েছে। করোনা পজিটিভ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।’’
আরও পডু়ন: ঝড়ের গতিতে ছড়াচ্ছে সংক্রমণ, যুদ্ধ চলছে, হুঁশিয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার
আতঙ্ক উত্তর-পূর্বে
অসম, সিকিম-সহ গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতেই বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা থাকে প্রায় সারা বছর। অসম প্রশাসন সূত্রে খবর, রাজ্যে প্রায় ছ’শো জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। অসমের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী পীষূষ হাজারিকা জানিয়েছেন, ‘‘মোট ৫৮৫ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। তার মধ্যে ১১২ জনই বিদেশি। এক জন ভারতীয় পর্যটকের রক্তের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। অসমের পাশাপাশি সিকিমেও প্রচুর মানুষকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে এবং তাঁদের একটা বড় অংশ বিদেশি। তবে সরকারি তথ্য পাওয়া যায়নি।
ভুটানের আতঙ্ক অসমে
শুক্রবার ভুটানে এক মার্কিন পর্যটকের করোনা সংক্রমণ নিশ্চিত করেছে সে দেশের প্রশাসন। কিন্তু ওই ব্যক্তি ভুটানে যাওয়ার আগে অসমের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন। শতাধিক মানুষের সংস্পর্শে এসেছেন তিনি। প্রশাসনের হিসেবে সেই সংখ্যাটা ১২৭। তাঁদের সবারই স্ক্রিনিং-এর ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। পীযূষ হাজারিকা বলেন, ‘‘জোরহাটের যে রিসর্টে ওই পর্যটক ছিলেন, সেই হোটেলের কর্মীদের আলাদা করা হয়েছে। গুয়াহাটির একট হোটেলেও ছিলেন তিনি, সেই হোটেলও স্যানিটাইজ ও আইসোলেট করা হয়েছে।’’
আরও পডু়ন: অ্যামাজন থেকে পুলওয়ামা হামলার বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম কিনেছিল জঙ্গিরা!
অমৃতসরে ইরানি যোগ
ইরানে ব্যাপক আকার নিয়েছে করোনার সংক্রমণ। সেই ইরান থেকেই বৃহস্পতিবার রাতে ১৩ জনের একটি পর্যটকের দল বেড়াতে এসেছেন পঞ্জাবের অমৃতসরে। অমৃতসরে তাঁরা যে হোটেলে উঠেছেন, শুক্রবার সেখানেই তাঁদের আলাদা করে রাখা হয়। শনিবার খবর ছড়ায় তাঁদের মধ্যে দু’জনের করোনা সংক্রমণ হয়েছে। যদিও সরকারি ভাবে এখনও সে খবর নিশ্চিত করা হয়নি।
আক্রান্তরা স্থিতিশীল
সারা দেশে এখনও পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৩১ জন। এই মুহূর্তে আক্রান্ত অবস্থায় চিকিত্সাধীন ২৮ জন। তাঁদের মধ্যে ইতালির একটি পর্যটক দলের ১৬ জন রয়েছেন। তাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় যাওয়া এক ব্যক্তির সংক্রমণ নিশ্চিত হয়েছে শুক্রবার। আক্রান্ত সবাই স্থিতিশীল রয়েছেন বলে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে।
মুখোশ-হুঁশিয়ারি
করোনার জেরে স্যানিটাইজার ও মাস্ক কিনতে হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে। প্রায় গোটা দেশেই একই পরিস্থিতি। ফলে মাস্কের জোগানে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সেই সুযোগ নিয়ে যাতে কেউ কালোবাজারি বা মজুতদারি করতে না পারে তার জন্য কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে কেন্দ্র। এমন কেউ চিহ্নিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।