এস জয়শঙ্কর। —ফাইল চিত্র।
দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভয়াবহ আকার ধারণ করার জন্য নির্বাচনী সভা-মিছিলের বিপুল জনসমাবেশকে দায়ী করছেন অনেকে। অতিমারিতে মানুষের প্রাণ যখন বিপন্ন, সেইসময় ঘটা করে নির্বাচন করানোর প্রয়োজন কী ছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে আন্তর্জাতিক মহলও। কিন্তু ভারতের মতো দেশে নির্বাচন বন্ধ করা কোনও পরিস্থিতিতেই সম্ভব নয় বলে এ বার জানিয়ে দিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি আরও জানিয়েছেন, শুধু ভারত নয়, কোভিডের প্রকোপে সঙ্কটে গোটা পৃথিবী।
দেশে মোট সংক্রমণ ইতিমধ্যেই আড়াই কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। তার জন্য মাঠে-ময়দানে বিপুল সমাবেশ করে ভোট চাইতে যাওয়া রাজনীতিকরা কতটা দায়ী, বুধবার সংবাদমাধ্যমে এমনই প্রশ্নের মুখোমুখি হন জয়শঙ্কর। জবাবে তিনি বলেন, ‘‘অতিমারির ধাক্কায় এখন নানা যুক্তি, প্রশ্ন আসবে। নির্বাচনের কথাও উঠছে। আমরা একটি গণতান্ত্রিক দেশ। আর ভারতের মতো দেশে নির্বাচন বন্ধ রাখা যায় না।’’
১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থার প্রসঙ্গ টেনে জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘কয়েক দশক আগে এক বারই শুধু নির্বাচন বন্ধ রাখা হয়েছিল। আমি তখন খুব ছোট। সেই স্মৃতির সঙ্গে আর নিজেদের জড়াতে চাই না আমরা।’’
কিন্তু নিজেদের ভোটবাক্স ভরতে সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে কেন আপস করা হল, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠছে। যদিও জয়শঙ্করের সাফ জবাব, ‘‘এই ধরনের তর্ক-বিতর্ক চলবেই। সবাই নিজেদের সত্যি প্রমাণ করতে চাইবেন। কেউ বলবেন, এই ভিড় সংক্রমণ ছড়িয়েছে, তো কেউ বলবেন ওই ভিড় ছড়িয়েছেন। কেউ কেউ আবার কোনও ব্যক্তিকে দায়ী করবেন। কোন নেতা কোথায় মাস্ক পরেননি তুলে ধরবেন। আমার মতে, এ সব বন্ধ হওয়া সরকার।’’
বাংলা-সহ ৪ রাজ্য এবং পুদুচেরির মতো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের নির্বাচন ঘিরে গত কয়েক মাস ধরে বিপুল জনসমাগম চোখে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহরা তাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সমর্থকদের সঙ্গে গাড়ির মাথায় চেপে পথসভাতেও অংশ নিয়েছেন তাঁরা। সংবাদমাধ্যমে তার যে ছবি সামনে এসেছে, তাতে মাস্ক তো দূর, ন্যূনতম সামাজিক দূরত্বেরও বালাই ছিল না। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার জন্য তাই রাজনীতিকদের কাঠগড়ায় তুলেছেন একটা বড় অংশের মানুষ।
শুধু তাই নয়, অতিমারির প্রকোপে দেশ যখন ধুঁকছে, ওষুধ, অক্সিজেনে ঘাটতির অভিযোগ আসছে সব রাজ্য থেকে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে অন্য দেশ থেকে সাহায্য নিতে হচ্ছে ভারতকে। অথচ দেশে বিপর্যয় নেমে আসা সত্ত্বেও বিদেশে ওষুধ, টিকা রফতানি অব্যাহত থেকেছে এ বছর পর্যন্ত। কিন্তু জয়শঙ্করের যুক্তি, ‘‘আগেও বলেছি, করোনা সকলের জন্যই সঙ্কট। গতবছর শুধু নয়, এ বছরও আমেরিকা, সিঙ্গাপুর, এবং ইউরোপের অনেক দেশে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন, প্যারাসিটামল-সহ নান ওষুধ পাঠিয়েছি। কুয়েতে বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়েছি আমরা। এমনকি টিকাও পাঠিয়েছি। এখন যেটাকে আপনারা সাহায্য বলছেন, আমরা সেটাকে বন্ধুত্ব অথবা সহযোগিতা বলার পক্ষপাতী।’’