Coronavirus in India

ভারতে টানাপড়েনের মধ্যে টিকার শেষ পর্যায়ে রাশিয়া

সরকারের একটি অংশের আশা ছিল, বিশ্বের প্রথম করোনা প্রতিষেধক আবিষ্কারের স্বীকৃতি পাবে ভারত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২০ ০৪:২০
Share:

ছবি: এএফপি।

ভারতের আশায় কি জল ঢেলে দিল রাশিয়া?

Advertisement

সরকারের একটি অংশের আশা ছিল, বিশ্বের প্রথম করোনা প্রতিষেধক আবিষ্কারের স্বীকৃতি পাবে ভারত। লক্ষ্য ছিল, স্বাধীনতা দিবসের দিন লালকেল্লায় টিকা আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করবেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু আজ রাশিয়ার সেচনেভ বিশ্ববিদ্যালয় দাবি করেছে, মানবদেহে টিকা প্রয়োগের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে ফেলেছে তারা। প্রথম যে দলটির় উপরে পরীক্ষামূলক ভাবে টিকা প্রয়োগ করা হয়েছিল, তাঁরা আগামী বুধবার ছাড়া পাবেন। আর দ্বিতীয় দল ছাড়া পাবে ২০ জুলাই। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে বলা হয়েছে, কার্যকারিতার প্রশ্নে ওই টিকা ইতিবাচক ও নিরাপদ। খুব দ্রুত ওই টিকা বাজারে আনার কথাও ভাবছে তারা।

রাশিয়া ছাড়া এই মুহূর্তে টিকা তৈরির তৃতীয় অর্থাৎ শেষ ধাপে রয়েছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রিটিশ-সুইডিশ সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা। তাদের দাবি, অক্টোবরের আগে বাজারে ওই টিকা ছাড়া সম্ভব নয়। তৃতীয় পর্যায়ে চিনের উহান ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্ট সংস্থাও। ওই প্রতিষেধকের প্রয়োগ হবে আরব-আমিরশাহিতে। চিনের আর একটি সংস্থা সিনোভ্যাক চলতি মাসেই ব্রাজিলে টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করছে। দৌড়ে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার মারডক চিলড্রেন রিসার্চ ইনস্টিটিউটও।

Advertisement

আরও পড়ুন: ২৮ হাজারের বেশি করোনা-আক্রান্ত গত ২৪ ঘণ্টায়

আরও পড়ুন: বিকাশ-তদন্তে যোগ বলিউড খ্যাত দয়ার

এ দিকে হায়দরাবাদের ভারত বায়োটেক সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে আইসিএমআর এক মাসের মধ্যে করোনার টিকা বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করে দিয়েছে! ভারত বায়োটেক এখন টিকা পরীক্ষার প্রথম ধাপে। তা হলে এক মাসের মধ্যে সব ক’টি ধাপ (প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও ছাড়পত্র-পর্ব)সম্পূর্ণ করে কী ভাবে বাজারে টিকা আনা সম্ভব তাদের পক্ষে? প্রত্যেকটি ধাপে টিকা কী প্রভাব ফেলল, তা পরীক্ষা করে দেখার নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে যেখানে।

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ১৫ অগস্টের মধ্যে যদি প্রতিষেধক বাজারে ছাড়া হয়, তা হলে তা কেবল প্রথম ধাপের ফল দেখেই ছাড়তে হবে। ভাইরোলজিস্ট প্রদীপ শেঠের কথায়, প্রথম ধাপের পরীক্ষার ফল বুঝতে অন্তত ২৮ দিন সময় লাগে। খুব দ্রুত গতিতে এগোলেও দ্বিতীয় ধাপ শেষ করে ফলাফল বুঝতে সময় লাগে ৪৫ দিন। এ ক্ষেত্রে হাতে রয়েছে মাত্র পাঁচ সপ্তাহ। গবেষকদের একটি অংশের মতে, সে ক্ষেত্রে সময়ের অভাবে দ্বিতীয় ও তৃতীয়-দুই ধাপই উপেক্ষা করা হবে। অথচ, প্রথম ধাপে সুরক্ষা, দ্বিতীয় ধাপে কার্যকারিতা বোঝার পরে তৃতীয় ধাপে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে এমন বৃহত্তর জনগোষ্ঠীতে ওই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করে দেখা হয়। সফল হলে তবেই বাজারে ছাড়ার ছাড়পত্র মেলে। কিন্তু এখানে কেন তাড়াহুড়ো হচ্ছে, প্রশ্ন খোদ আইসিএমআরের অন্দরমহলেও। যদিও আইসিএমআরের গবেষক তথা ভাইরোলজিস্ট নিবেদিতা গুপ্ত-র দাবি, গবেষণা যা হচ্ছে, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা মেনেই হচ্ছে।

আইসিএমআর ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১৫ অগস্টের স্বপ্ন দেখলেও, ভিন্ন মত জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। তাঁর মতে, এ ভাবে আগ বাড়িয়ে নির্দিষ্ট দিন বা মাস বলা যায় না। প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করতে গোটা বছরও লেগে যেতে পারে। সমস্ত সুরক্ষাবিধি মেনেই টিকা বাজারে ছাড়া হবে। আর তাতে যে ১৫ অগস্টের সময়সীমা মানা সম্ভব নয়, তা কার্যত স্বীকার করেছেন তিনি। একই মত সরকারের মুখ্য বিজ্ঞান বিষয়ক পরামর্শদাতা কে বিজয়রাঘবনেরও। সূত্রের মতে, গত সপ্তাহে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিজয়রাঘবন জানান, প্রথম পর্ব আঠাশ দিনে শেষ হওয়ার পরে আরও দুটি ধাপ থেকে যায়। ফলে এক মাসের মধ্যে ফলাফল আসা যে কার্যত অসম্ভব, তা মেনে নিয়েছেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement