ছবি: রয়টার্স।
ভারতে তৈরি করোনার প্রতিষেধক কোভ্যাক্সিন-এর প্রথম পর্যায়ের মানবদেহের উপর প্রয়োগ শেষ হল। প্রথম পর্যায়ে করোনা প্রতিষেধক ৩৭৫ জনের উপরে প্রয়োগ করা হয়েছিল। জানা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে ৫০ জনের শরীরে কোভ্যাক্সিন প্রয়োগের ফলাফল সামনে এসেছে। চিকিৎসকদের মতে, প্রথম পর্যায়ে টিকা দেওয়া হয়েছিল, তা নিরাপদ কিনা দেখার জন্য। সেই ফলাফল আশাব্যঞ্জক।
দেশীয় পদ্ধতিতে করোনা টিকা আবিষ্কারের প্রক্রিয়া যখন আশার কথা শোনাচ্ছে, তখন সংক্রমণের হার কিন্তু ক্রমশই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৪৮,৬৬১ জন এবং ৭০৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। সেই সঙ্গে ২৪ ঘণ্টায় ৩৬,১৫ জন করোনা-আক্রান্ত সুস্থ হয়েও উঠেছেন। যা কিনা ২৪ ঘণ্টার নিরিখে এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
বিশ্বব্যাপী করোনার দাপটে এখনও সকলেই তাকিয়ে রয়েছে প্রতিষেধক আবিষ্কারের গতিপ্রকৃতির দিকে।আজ কিছুটা হলেও আশার আলো দেখিয়েছে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস, রোহতক। পিজিআইএমএসের হয়ে টিকা পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা ডঃ সবিতা বর্মা সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে বলেছেন, ‘‘প্রথম পর্যায়ের প্রথম ধাপের প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শেষ হয়েছে। আমাদের সংস্থায় দেওয়া ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবকের দেহে কোভ্যাক্সিন প্রয়োগের ফলাফল জানতে পেরেছি। নিরাপত্তার দিক থেকে ফল যথেষ্টই ইতিবাচক।’’ তিনি জানিয়েছেন, ওই ৫০ জনের দেহে প্রতিষেধকের কোনও বিরূপ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। প্রথম পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপের প্রতিষেধক প্রয়োগের জন্য আজ ছ’জন স্বেচ্ছাসেবক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
আরও পড়ুন: ‘অপদেবতা’ করোনা! মানবজাতিকে ‘রক্ষা করতে’ গণ-উপাসনার ডাক অসমে
আরও পড়ুন: নেশার ঘোরে ছুরি গিললেন তিনি, বার করল এমস
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ এবং ন্যাশনাল ভাইরোলজি ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা যৌথ ভাবে তৈরি করেছেন এই করোনা প্রতিষেধক। দু’টি পর্যায়ে মোট ১১০০ জন স্বেচ্ছাসেবকের উপরে পরীক্ষামূলক ভাবে প্রয়োগের কাজ চলছে দেশের ১২টি প্রতিষ্ঠানে।
সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই ইতিবাচক বিষয় হল সংক্রমণের হার কিছুটা কমে ১১ শতাংশ হয়েছে। মন্ত্রক জানিয়েছে, অ্যাক্টিভ রোগীর তুলনায় এখন করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যা অনেক বেশি। মৃত্যু হার বর্তমান ২.৩১ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ লক্ষ ৪২ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে বলে দাবি স্বাস্থ্য মন্ত্রকের। গত ২৪ ঘণ্টায় সরকারি পরীক্ষাগারে ৩ লক্ষ ৬২ হাজার ১৫৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ যাবৎকালের মধ্যে যা সর্বাধিক।
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)