ছবি: পিটিআই।
লাগাম পরানো যাচ্ছে না নোভেল করোনাভাইরাসে।
আজ সারা দেশে নতুন করে ৫০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ভারতে এটাই এ যাবৎ এক দিনে সব চেয়ে বেশি সংক্রমণের ঘটনা। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হিসেবে এখনও পর্যন্ত সংক্রমণের মোট সংখ্যা ২২৩। আইসিএমআরের হিসেবে ২২৬।
করোনা থেকে সেরে ওঠার পরে রাজস্থানের জয়পুরে আজ মারা গিয়েছেন ইটালীয় এক পর্যটক। যদিও স্বাস্থ্য মন্ত্রক করোনায় ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে মানতে চায়নি। যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তি করোনা থেকে পুরোপুরি সেরে উঠেছিলেন। তাঁর অন্য নানা ধরনের উপসর্গ ছিল। মৃত্যুর কারণ হৃদ্রোগ।’’
আরও পড়ুন: এখনও সংসদ চালু রাখা নিয়ে ক্ষোভ
আগরওয়াল অবশ্য মেনে নেন, যে হারে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে, তা আশঙ্কাজনক। তাঁর মতে, এই কারণেই এক জন থেকে আর এক জনের সংক্রমণের যে ‘শিকল’ তৈরি হয়েছে, তা ভাঙা জরুরি। স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে বলা হয়েছে, রবিবারের জনতা কার্ফু অনেকটা সেই কারণেই ডাকা হয়েছে, যাতে সেই শিকল ছিন্ন করা সম্ভব হয়।
আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, ‘‘সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাটা ঐচ্ছিক হোক বা জোর করে— শেষ পর্যন্ত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শ্লথ করে দেওয়ার মূল্য দিয়েই করোনা ছড়িয়ে পড়া রোখা সম্ভব।’’
করোনা-কোপে
• মৃত ৪
• আক্রান্ত ২২৩ (কেন্দ্র)
• শুক্রবার আক্রান্ত ৫০ জন। দেশে এক দিনের রেকর্ড
• ২০টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সংক্রমণ
২২ মার্চ বিদেশ থেকে বিমান আসা বন্ধ হলে সংক্রমণ অনেকাংশেই কমবে বলে আশাবাদী স্বাস্থ্য মন্ত্রকের একাংশ। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সংক্রমিতদের একাংশের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণও রোগ ছড়ানোর জন্য অনেকাংশে দায়ী। প্রসঙ্গত, অসমে নৌ-বিহার সেরে ভুটানে গিয়ে করোনা ধরা পড়েছিল যে মার্কিন পর্যটকের, তাঁর সঙ্গিনীরও আজ সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
দেশে করোনা-পরীক্ষার যথেষ্ট সংখ্যক কিট রয়েছে বলে জানিয়েছে আইসিএমআর। সংস্থার সিনিয়র কর্তা রমন আর গঙ্গাখেড়কর বলেন, ‘‘প্রায় ১৫ লক্ষ কিটের ব্যবস্থা রয়েছে।’’ বেসরকারি সংস্থাগুলি যাতে কম দামে করোনা-পরীক্ষা করতে এগিয়ে আসে, সে জন্য নিয়মিত আলোচনা চালাচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। শুরুতে কেন্দ্র চেয়েছিল, বিনামূল্যে ওই পরীক্ষা হোক। রাজি হয়নি বেসরকারি পরীক্ষাকেন্দ্রগুলি। গঙ্গাখেড়কর জানান, ‘‘সর্বাধিক পাঁচ হাজার টাকার বেশি নিতে পারবে না বেসরকারি সংস্থাগুলি। সরকার ঊর্ধ্বসীমা বাঁধার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’
মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক আজ সমস্ত রাজ্যকে বলেছে, করোনার ভয়ে স্কুল বন্ধ থাকলেও পড়ুয়াদের জন্য রান্না করা খাবার অথবা খাবারের জন্য বরাদ্দ টাকা যেন বন্ধ না-হয়। মহারাষ্ট্রে ক্রমশ জাঁকিয়ে বসছে করোনা-আতঙ্ক। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে আক্রান্ত ৫২ জন। জরুরি নয়, এমন সমস্ত পরিষেবা (বেসরকারি অফিস-সহ) ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখা হচ্ছে মুম্বই, পুণে, নাগপুর এবং পিম্পরি-চিঞ্চওয়াড়ে। চালু থাকবে ট্রেন, বাস, ব্যাঙ্ক, দুধ পরিষেবা। বেসরকারি সংস্থাগুলির উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে বলেন, ‘‘মানবিকতা বর্জন করবেন না। কারও বেতন বন্ধ করবেন না।’’ মহারাষ্ট্রের সরকারি অফিসগুলিতে কর্মীদের উপস্থিতির হার ২৫ শতাংশ করা হচ্ছে।
দিল্লির সব শপিং মল বন্ধ করা হচ্ছে। তবে মুদিখানা, ওষুধ এবং আনাজের দোকানগুলি খোলা থাকবে। ২১ মার্চ থেকে ২৩ মার্চ দিল্লির বাজার বন্ধ থাকবে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজবীবাল জানান, কোয়রান্টিন লঙ্ঘন করলে, কঠোর পদক্ষেপ করা হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, নিয়ম ভাঙলে মহামারি আইনে শাস্তি দিতে পারে রাজ্য। এক মাসের জেল বা ছয় হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে।
উত্তরপ্রদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জয়প্রতাপ সিংহের করোনা-পরীক্ষা হয়েছে। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া তিন বিজেপি বিধায়ককেও আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে।
গত কাল কেরল হাইকোর্ট ব্যাঙ্ক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং কর দফতরকে বকেয়া আদায় ৪ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত রাখতে বলেছিল। আজ কেন্দ্রের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাতে স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।