ফাইল চিত্র।
অক্ষয় কুমার ২৫ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। যোগগুরু রামদেবের পতঞ্জলি যোগপীঠও দিচ্ছে ২৫ কোটি। টাকার অঙ্ক না বললেও বিরাট কোহলি ও অনুষ্কা শর্মা শপথ নিয়েছেন, তাঁরাও করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘পিএম-কেয়ারস’ তহবিলে অর্থ পাঠাবেন। ঘরবন্দি সাধারণ মানুষও অনেকে ইতিমধ্যে সাধ্যমতো চাঁদা দিতে শুরু করেছেন এই তহবিলে।
অথচ প্রশ্ন উঠেছে সেই ‘পিএম-কেয়ারস’ তহবিল নিয়েই। বিরোধীরা জানতে চান, ‘প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ত্রাণ তহবিল’ থাকতে আবার আলাদা করে এই নতুন তহবিল কেন? এই তহবিলের টাকা কী ভাবে খরচ হবে, কী ভাবে তার হিসাব পরীক্ষা হবে, সেই সব নিয়মকানুনই বা কোথায়? সমালোচকরা বলছেন, করোনার মতো দুর্যোগকে কাজে লাগিয়েও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেকে তুলে ধরতে চাইছেন। নাম বেছেছেন— পিএম-কেয়ারস। যেন প্রধানমন্ত্রী একাই দেশের মানুষের খেয়াল রাখছেন।
দু’দিন আগে, ২৮ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নিজেই পিএম-কেয়ারস বা ‘প্রাইম মিনিস্টার’স সিটিজেন অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যান্ড রিলিফ ইন এমারজেন্সি সিচ্যুয়েশনস ফান্ড’ নামের এই পাবলিক চ্যারিটেবল ট্রাস্টের ঘোষণা করেন। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্যও জানিয়ে দেন। ট্রাস্টের চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রী নিজেই। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ট্রাস্টের অন্য সদস্য। কিন্তু ট্রাস্ট সম্পর্কে আর কোনও তথ্য
দেওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রী আজ বিভিন্ন দেশে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গেও ভিডিয়ো কনফারেন্স করে এই পিএম-কেয়ারস তহবিলে অর্থ জোগাড়ের নির্দেশ দিয়েছেন।
কংগ্রেস নেতা শশী তারুরের প্রশ্ন, “প্রধানমন্ত্রীর যখন নজরকাড়া নাম পছন্দ, তখন প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলের নামটাই তো পাল্টে পিএম-কেয়ারস রাখা যেত। তার বদলে আলাদা তহবিল তৈরি হল কেন, যার নিয়ম, খরচ সম্পর্কে কোনও স্বচ্ছতা নেই? প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে এই ভয়ানক অস্বাভাবিক পদক্ষেপের ব্যাখ্যা দিতে হবে।” সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরির প্রশ্ন, “সহ-নাগরিকদের খেয়াল আমরা সবাই রাখি, সাহায্য করি।
তা হলে কেন শুধু পিএম-কেয়ারস নাম হবে? ইন্ডিয়া-কেয়ারস-ও তো হতে পারতো।”
সরকারের তরফে বিরোধীদের প্রশ্নের কোনও জবাব দেওয়া হয়নি। কিন্তু নতুন তহবিল ঘোষণার দু’দিনের মধ্যেই জাল ইউপিআই আইডি তৈরি করে অনুদানের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে। সরকারের তরফে এ বিষয়ে সতর্কও করা হয়েছে। কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, ২০১৮-১৯-এর শেষে প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে ৩,৮০০ কোটি টাকার বেশি অর্থ পড়ে ছিল। সেই টাকা খরচ করা হচ্ছে না কেন? কেন নতুন তহবিল আবার?
কংগ্রেস নেতা সলমন আনিস সোজের প্রশ্ন, ১৯৪৮-এ জওহরলাল নেহরু প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল তৈরি করে পাকিস্তান থেকে আসা বাস্তুচ্যুত মানুষকে সাহায্য করতে অর্থসাহায্যের আবেদন করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী যে নতুন তহবিল তৈরি করলেন, সেখানে কোনও বিরোধী নেতা বা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিকে রাখা হয়নি। ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহেরও প্রশ্ন, “পিএম-কেয়ারস-এর মতো নিজের ঢাক পেটানোর নাম কেন? একটা জাতীয় দুর্যোগকেও ব্যক্তিপুজোর কাজে লাগাতে হবে?”