দিল্লির শাস্ত্রী পার্কে রামলীলার একটি দৃশ্যে পিপিই কিট পরে মঞ্চে অভিনেতা। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া
সীতার স্বয়ম্বর সভা। জনকরাজ দরবারে হাজির রাজপুত্ররা। আনুষ্ঠানিকতা শেষে ক্লাইম্যাক্স শুরু হতে যাবে। কিন্তু এ কী? জনক রাজার মন্ত্রী হঠাৎ কী ঘোষণা করলেন? পিপিই কিট হাজির হো...! ‘ভরত মিলাপ’ পর্বে মাস্ক পরেই মঞ্চে ভরত! জলদগম্ভীর কণ্ঠে রণহুঙ্কারের আগে রাবণ কিনা বার্তা দিচ্ছেন ‘দো-গজ দূরি, মাস্ক জরুরি’। রামলীলা দেখতে আসা দর্শকদের মধ্যে যখন গুঞ্জন, কানাকানি, মাইকে সচেতনতার ঘোষণা। সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক, স্যানিটাইজার, হাত ধোয়ার মতো করোনা বিধির বার্তা। নিউ নর্মালে এমন ভাবেই পৌরাণিক কাহিনীতেও ঢুকে পড়েছে ‘ভাইরাস’।
টিভি ধারাবাহিকগুলি একটি নির্দিষ্ট গল্প অনুযায়ী চললেও তার মধ্যে ঢুকে পড়ে সমসাময়িক ঘটনাবলী বা উৎসব-পার্বণ। শুধু পর্দার আড়ালে নয়, ধারাবাহিকের মূল গল্পেরই অংশ হয়ে ওঠে সেগুলি। এখন যেমন প্রায় সব ধারাবাহিকে চলছে দুর্গাপুজো। আবার লকডাউনে বন্ধের পর শ্যুটিং চালু হতেই ধারাবাহিকের গল্পে অনুপ্রবেশ ঘটছে করোনাভাইরাস এবং তার আনুষঙ্গিক বিধিনিষেধ। কিন্তু তা বলে পৌরাণিক কাহিনীতেও! রামলীলাতেও মাস্ক, পিপিই কিট, স্যানিটাইজার? উদ্যোক্তারা বলছেন, সময়ের প্রয়োজনে নিউ নর্মালে টিকে থাকতে এমনটা করা ছাড়া কোনও উপায় নেই।
দিল্লি, অযোধ্যা-সহ উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকায় নবরাত্রি থেকে দশেরা পর্যন্ত এই রামলীলা মঞ্চস্থ হয়। কিন্তু এ বছর কোভিড সংক্রমণের কারণে অধিকাংশ পালারই অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। পৌরাণিক গল্পের সঙ্গে বেমানান হলেও নতুন পরিস্থিতিতে যে সব পালা আয়োজকরা করোনা বিধি মেনে রদবদল ঘটিয়েছেন, হাতে গোনা তেমন কয়েকটি পালার অনুমোদন মিলেছে। যেমন দিল্লির বিষ্ণু অবতার রামলীলা কমিটি। দিল্লির শাস্ত্রী পার্কে তাঁদের পালায় দেখা গেল তেমনই সব পরিবর্তন। যেখানেই প্রয়োজন পড়েছে ঢুকে পড়েছে করোনা সম্পর্কিত বিধিনিষেধ।
রামলীলার মঞ্চে ওঠার আগে মেপআপ নিচ্ছেন দুই অভিনেত্রী। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া
আরও পড়ুন: কুমারী মায়ের মুখে মাস্ক নেই, উদ্বেগের জবাবে ‘আধ্যাত্মিক’ যুক্তি বেলুড় মঠের
‘ভরত মিলাপ’-এ রাম-লক্ষণের আলিঙ্গনের দৃশ্য রয়েছে, তাই লক্ষণের মুখে মাস্ক। ‘সীতা স্বয়ম্বর’-এ শিবের ধনুকে বান জোড়ার চেষ্টা করবেন বহু বীর রাজপুত্র। তাই তার আগে স্যানিটাইজ করা হচ্ছে ‘পিনাক’। বিষ্ণু অবতার রামলীলা কমিটির প্রধান প্রেমপাল সিংহ বললেন, যেখানেই জমায়েতের দরকার হয়েছে, সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে করা হয়েছে। যেমন ভরত যখন রামকে ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছেন অযোধ্যাবাসীর সঙ্গে, তখন বহু অনেকেই পিপিই কিট পরে আছেন।’’ তাঁর মতে, মঞ্চেও বিভিন্ন দৃশ্যে অনেকে পিপিই কিট পরে অভিনয় করেছেন। সামাজিক দূরত্ব ও করোনার সাবধানতার বার্তা দিতেই এমন বন্দোবস্ত। নিজের প্রজাদের উদ্দেশে করোনা বিধির বার্তা দিচ্ছেন রাম, রাবণ সবাই। তবে কোনও দৃশ্যই মূল মহাকাব্যের ভাবনা থেকে সরে এসে নয়।
আরও পড়ুন: ‘নো এন্ট্রি জোনে’ অঞ্জলি, আইনি নোটিসের কোপে পড়তে পারেন নুসরত, সৃজিত, মহুয়ারা
মঞ্চের পাশাপাশি গ্রিন রুমেও এসেছে পরিবর্তন। প্রেমপাল সিংহ জানাচ্ছেন, সব অভিনেতারা সারাক্ষণ স্যানিটাইজার রাখছেন। দূরত্ব বজায় রাখতে মঞ্চের আকার অনেক বড় করা হয়েছে অন্যান্য বছরের চেয়ে। দূরে দূরে রাখা হয়েছে দর্শকদের বসার আসনও। সেগুলি স্যানিটাইজ করা হচ্ছে প্রতিদিন দুপুর দু’টো থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে। ফলে অভিনেতা থেকে উদ্যোক্তা, সবাইকেই নিউ নর্মালের জন্য নতুন করে প্রস্তুতি নিতে হয়েছে এবং সেই ভাবে করতে হচ্ছে পালা ও অভিনয়। রাম-লক্ষণ, সীতা, রাবণ— সবাই কোভিড টেস্ট হওয়ার পরে মিলেছে মঞ্চে ওঠার ছাড়পত্র। দিল্লি-নয়ডা এলাকায় বিভিন্ন কমিটিতে গত দশ বছর ধরে রামের অভিনয় করছেন সোনু শর্মা। তিনি বলেন, ‘‘আমার মতো রাম, সুগ্রীব, হনুমান, পরশুরাম— সবাইকেই করোনার পরীক্ষা করাতে হয়েছে।’’