প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।—ছবি পিটিআই।
করোনার প্রতিষেধক নিয়ে ‘আশার কথা’ এ বার খোদ প্রধানমন্ত্রীর মুখে।
আগামী ১৫ অগস্টের মধ্যে বাজারে নোভেল করোনাভাইরাসের টিকা আসবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা সর্বস্তরে। পরীক্ষার পর্যাপ্ত সময় হাতে না-রেখে তড়িঘড়ি প্রতিষেধক বাজারে ছাড়ার যে লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে, তার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিজ্ঞানী তথা চিকিৎসকদের একটি বড় অংশ। এই বিতর্কের আবহেই আজ মুখ খুলেছেন নরেন্দ্র মোদী। ‘ভারত-বিশ্ব সপ্তাহ, ২০২০’র ভিডিয়ো-বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “ভারতের ওষুধ-শিল্প যে বিশ্বের সম্পদ, এই অতিমারির সময়ে তা ফের প্রমাণিত। বিশেষত উন্নয়নশীল দুনিয়ার জন্য ওষুধের দামে লাগাম রাখার ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। সারা বিশ্বে শিশুদের জন্য যত প্রতিষেধক প্রয়োজন হয়, তার দুই-তৃতীয়াংশই তৈরি হয় এই দেশের মাটিতে। এখনও কোভিড-১৯-এর প্রতিষেধক উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছে এ দেশের (বেশ কয়েকটি) সংস্থা। আমি নিশ্চিত, করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কার হওয়ার পরে তা তৈরি এবং বিপুল সংখ্যায় পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে ভারত।”
প্রধানমন্ত্রীর মুখে এ দিন প্রতিষেধকের প্রসঙ্গ উঠে-আসা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ ঠেকেছে অনেকের কাছেই। কারণ, এই প্রথম এত স্পষ্ট ভাবে এই বিষয়ে মুখ খুললেন তিনি। তা-ও আবার এমন সময়ে, যখন প্রতিষেধক তৈরির আগাম সময় বেঁধে দেওয়ায় তীব্র মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর অন্দরমহলে।
গত ২ জুলাই সংস্থার ডিজি বলরাম ভার্গব একটি চিঠিতে ১২টি গবেষণা কেন্দ্রকে জানিয়ে দেন, সময়সীমা ১৫ অগস্ট। তার মধ্যে বাজারে আনতে হবে করোনার প্রতিষেধক। গবেষণার কাজে এ ভাবে দিনক্ষণ বেঁধে দেওয়ায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে আইসিএমআর। আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সাংবাদিক সম্মেলনে এই বিতর্ক প্রসঙ্গে আইসিএমআরের গবেষক নিবেদিতা গুপ্ত বলেন, ‘‘আমরা দ্রুত টিকা আবিষ্কারের পক্ষে। দু’বছর পরে টিকা আবিষ্কার করে কোনও লাভ নেই। আমরা দৌড়ে যাতে পিছিয়ে না-পড়ি, তাই ওই চিঠিটি লেখা হয়েছে।’’ তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়গুলি উপেক্ষিত হতে পারে— এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি (ওএসডি) রাজেশ ভূষণ। তিনি বলেন, ‘‘প্রক্রিয়াকে কেবল তরান্বিত করা হয়েছে। সুরক্ষার সঙ্গে কোনও সমঝোতা করা হচ্ছে না। ভারত বায়োটেক ও জ়াইডাস ক্যাডিলা সংস্থার টিকার প্রভাব প্রাণিদেহে কী পরিমাণে পড়েছে, তা খতিয়ে দেখেই মানব-শরীরে প্রয়োগ করার প্রশ্নে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।’’
আরও পড়ুন: অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর দাবিতে প্রশ্ন
প্রতিষেধক আবিষ্কারের ক্ষেত্রে প্রথম দিকের পরীক্ষায় ইতিমধ্যেই সাফল্যের দাবি করেছে দেশ-বিদেশের কিছু সংস্থা। শেষমেশ সফল আবিষ্কারের শিকে কার ভাগ্যে কত দিন পরে ছিঁড়বে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এ দিন প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার পরে অনেকেরই কৌতূহল, মোদী কি এই বিষয়ে কোনও আঁচ পেয়েছেন? না-হলে বিপুল সংখ্যায় প্রতিষেধক উৎপাদনে ভারত যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে, এমন আশা তিনি করছেন কী করে? বিশেষজ্ঞদের অনেকেই অবশ্য মনে করছেন, নিয়ম মেনে এগোলে এই বছরে প্রতিষেধক বাজারে আসার সম্ভাবনা কার্যত নেই। কারণ, মানবদেহে প্রতিষেধক প্রয়োগের পরে কমপক্ষে যত দিন তার কার্যকারিতা এবং পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ায় চোখ রাখতে হয়, ১৫ অগস্টের মধ্যে সেই সময় মিলবে না। তাই স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছিল, স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার প্রাচীর থেকে করোনা-মুক্তির নাটকীয় ঘোষণার তাগিদেই কি প্রতিষেধক আবিষ্কারে এমন সময়-বেঁধে দৌড়?
আরও পড়ুন: বেনারসি পান খেয়ে থুতু নয়, আর্জি মোদীর
আজ দিল্লির এমসে টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে বলে জল্পনা ছড়ায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছু বলতে চাননি। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ওএসডি ভূষণ জানান, ‘‘ছাড়পত্র পাওয়া দু’টি সংস্থার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ এখনও শুরু হয়নি। আশা করছি, দ্রুত তা শুরু হবে।’’