জাতির উদ্দেশে ভাষণ প্রধানমন্ত্রীর। ছবি: টুইটার থেকে
করোনাভাইরাস রুখতে ‘জনতা-কার্ফু’। সরকারি নির্দেশ জারি করে বাধ্য করা নয়, দেশবাসীর কাছে স্বেচ্ছায় কার্ফু পালনের আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রবিবার সকাল সাতটা থেকে রাত ন’টা পর্যন্ত দেশবাসীকে স্বেচ্ছায় ঘরবন্দি থাকার আর্জি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আগামী শুক্র ও শনিবার এই নিয়ে প্রচার করুন।’’ পাশাপাশি দুধ, খাবার, ওষুধের মতো অপরিহার্য দ্রব্য অযথা মজুত না করার কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। জানিয়েছেন, আর্থিক সঙ্কট কাটাতে গঠিত হয়েছে টাস্ক ফোর্স।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে দেশ জুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ইতিমধ্যেই দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবারও ৭০ বছরের এক বৃদ্ধ মারা গিয়েছেন পঞ্জাবে। এ ছাড়া দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১৬৭ জন। তাঁদের মধ্যে ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৫ জন। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এমনই পরিস্থিতিতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ প্রধানমন্ত্রীর।
করোনার ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘দেশ তথা বিশ্ব এক গভীর সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দু’টি বিশ্বযুদ্ধের সময়ও এত দেশ এক সঙ্গে জড়িয়ে পড়েনি। আবার এটা এমন পরিস্থিতি যে, এক দেশ অন্য কোনও দেশকে সাহায্যও করতে পারছেন না।’’
রবিবার ১৪ ঘণ্টার জনতা কার্ফুর ডাক দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘ সকাল সাতটা থেকে রাত ন’টা পর্যন্ত ঘরে থাকুন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বেরোবেন না। চিকিৎসা, স্বাস্থ্য, জনসেবা, সংবাদ মাধ্যমের মতো জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্তদের জন্য বিকেল পাঁচটায় অভিনন্দন জানাই। ঘণ্টা, কাঁসর, থালা বাজিয়ে তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আর ববিরারের আগে পর্যন্ত সবাই এই জনতা কার্ফুর খবর সবাইকে ছড়িয়ে দিন।’’
আরও পড়ুন: ‘দোকান বাজার বন্ধ নয়, মজুত করলে ব্যবস্থা’, কড়া বার্তা মমতার
আরও পড়ুন: করোনার চতুর্থ বলি দেশে, জার্মানি-ইটালি ফেরত বৃদ্ধের মৃত্যু পঞ্জাবে
করোনা সঙ্কটে আর্থিক ব্যবস্থাও ভেঙে পড়ছে। সরাসরি প্রভাব পড়েছে অসামরিক বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রে। এ ছাড়া বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যও সঙ্কটের মুখে। জিডিপি-র হার আরও কমতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। শেয়ার বাজারে প্রতিদিন ধস নামছে। প্রধানমন্ত্রী এ দিন জানান, এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের নেতৃত্বে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। ওই টাস্ক ফোর্স গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে।
যা বললেন প্রধানমন্ত্রী
• আসুন আমরা সবাই নিজে বাঁচি, অন্যকে বাঁচাই, দেশকে বাঁচাই
• কিছু দিন পরেই নবরাত্রি আসছে, এটা শক্তির উপাসনা
• এই ভয়ঙ্কর বিপদ থেকে মুক্ত হয়ে মানবজাতি জয়ী হোক
• দেশে কেন্দ্রীয় সরকার হোক বা রাজ্য সরকার, জনপ্রতিনিধি হোক বা বিদ্বজ্জন, সবাই এই মহামারি থেকে বাঁচতে যোগদান করছেন
• এই পরিস্থিতিতে দেশবাসীকে এক হয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে
• এই সঙ্কট এত বড় যে এক দেশ অন্য দেশকে সাহায্য করতে পারছেন না
• আশঙ্কা ও ভয়ের বাতাবরণও তৈরি হয়
• নিজের যে টুকু করা দরকার, সেটা করেছেন
• গত দু’মাসে যে সঙ্কট উপস্থিত হয়েছে, তা নিজের সমস্যা মনে করে সবাই সমাধান করার চেষ্টা করেছেন
• মজুতদারি করবেন না, আতঙ্কে অতিরিক্ত জিনিসপত্র কিনবেন না
• দেশে দুধ, খাবার-সহ অত্যাবশ্যক জিনিসপত্রের ঘাটতি যাতে না হয়, তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে
• কেউ অফিসে আসতে না পারলে, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবেন না, মানবিক ব্যবহার করুন
• এই টাস্ক ফোর্স আর্থিক সমগ্র বিষয়ে নজর রাখবে
• আর্থিক ব্যবস্থার মোকাবিলা করতে কোভিড-১৯ ইকনমিক টাস্ক ফোর্স গঠন করা হচ্ছে, নেতৃত্বে থাকছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন
• এই মহামারি অর্থ ব্যবস্থার উপরেও ব্যাপক প্রভাব পড়ছে
• পারিবারিক চিকিৎসক বা পরিচিত চিকিৎসকের মাধ্যমে ফোনে পরামর্শ নিন
• দেশবাসীকে আমার অনুরোধ, রুটিন চেকআপ করার জন্য হাসপাতাল এড়িয়ে চলুন
• আমদের পুরো শ্রদ্ধার সঙ্গে এঁদের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি
• সাইরেন বাজিয়ে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া হোক
• যাঁরা সেবা করছেন, তালি, থালা, ঘণ্টা বাজিয়ে তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব
• রবিবার বিকেল পাঁচটায় পাঁচ মিনিট ঘণ্টা বাজিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি
• এই দিন আমরা সবাই একে অন্যকে ধন্যবাদ দিই
• এরা সবাই বিপদ মাথায় নিয়ে কাজ করছেন
• সরকারি কর্মী হোক, বিমানবন্দরের কর্মী হোক, সংবাদ মাধ্যমের কর্মী হোক, সবাই নিজেদের কথা না ভেবে অন্যের সেবায় নিয়োজিত
• ভারত কেমন প্রস্তুত, তা দেখা ও পরীক্ষা করার সময়ও
• আপনারা এটাও করতে পারেন, প্রতি দিন ১০ জনকে ফোন করে বলুন
• সবাইকে অনুরোধ করব, আজ থেকে রবিবার পর্যন্ত এই জনতা কার্ফুর খবর ছড়িয়ে দিন
• সাধারণ নাগরিক ঘর থেকে বেরোবেন না
• সকাল সাতটা থেকে রাত ন’টা পর্যন্ত কার্ফু পালন করুন
• রবিবার জনতা কার্ফু করুন, ঘর থেকে বেরোবেন না, সবাই ঘরে থাকুন
• সেটা হল জনতা কার্ফু, জনতার মাধ্যমে, জনতার দ্বারা কার্ফু হোক
• এই সময়ে আরও একটা জিনিস চাইব
• যুদ্ধ না হলেও এক দিন, দু’দিন ‘ব্ল্যাকআউট’ করা হত পরীক্ষামূলক ভাবে
• যুদ্ধের সময় গ্রামে গ্রামে অন্ধকার করে দেওয়া হত, বন্দরের আলো নিভিয়ে দেওয়া হত
• ৬০ বছরের বেশি বয়সের প্রবীণরা ঘর থেকে বেরবেন না
• কিন্তু বাকি দেশবাসী ঘরে থাকার চেষ্টা করুন
• সরকারি সেবায় যুক্ত যাঁরা, সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের সক্রিয়তা প্রয়োজনীয়
• আগামী কয়েক সপ্তাহ অত্যন্ত জরুরি কাজ থাকলে, তবেই ঘর থেকে বেরোন
• আমাদের সবার উচিত সতর্ক থাকা, আপনারা এ দিক সে দিক ঘুরে বেড়াবেন, আর করোনা থেকে বাঁচবেন, এটা সম্ভব নয়
• আজ আমাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে, আমরা নিজেরা সংক্রামিত হওয়া থেকে বাঁচব, অন্যদেরও বাঁচাব
• এর জন্য দেশবাসীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
• বহু মানুষকে আইসোলেশনে রেখে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হচ্ছে
• এই পরিস্থিতিতে সবার দুশ্চিন্তা বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক
• করোনা মহামারি থেকে বাঁচতে এমন কোনও নিশ্চিত ওষুধ তৈরি হয়নি, কোনও টিকা তৈরি হয়নি
• আপনাদের আগামী কয়েক সপ্তাহ আমি চাই
• আজ ১৩০ কোটি দেশবাসীর কাছে কিছু চাইতে এসেছি
• এটা আপনাদের আশীর্বাদের ক্ষমতা, আমরা সবাই মিলে নির্ধারিত লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছি
• আপনাদের কাছে যখনই কিছু চেয়েছি, আপনারা নিরাশ করেননি
• ফলে দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকা প্রয়োজন
• করোনা থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যাবে, এমন ভাবনা ঠিক নয়
• দু’টি বিশ্বযুদ্ধেও এত দেশ জড়িয়ে পড়েনি
• বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি
• গভীর সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে গোটা দেশ