ভারতে তিনটি সংস্থা করোনা প্রতিষেধক আবিষ্কারের গবেষণা করছে।
সুরক্ষা সংক্রান্ত ছাড়পত্রের অভাবে ভারতে থমকে গেল অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি করোনা প্রতিষেধক ‘কোভিশিল্ড’-এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ। এ দেশে প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ছাড়পত্র পেয়েছে সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। ছাড়পত্র না-পাওয়ায় গবেষণার কাজ শুরু হতে অন্তত ৭-১০ দিন দেরি হবে বলেই মত গবেষকদের।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি প্রতিষেধকের ভারতে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা গত সপ্তাহে শুরুর কথা ছিল চণ্ডীগড়ের দ্য পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (পিজিআইএমইআর)-এ। প্রাথমিক ভাবে ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবকের উপরে ওই প্রতিষেধক প্রয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের একটি সূত্রের মতে, গবেষণা শুরুর আগে ডেটা সেফটি অ্যান্ড মনিটরিং বোর্ড (ডিএসএমবি)-র ছাড়পত্রের প্রয়োজন। কিন্তু গত সপ্তাহে পিজিআইএমইআর-কে জানানো হয়, সুরক্ষা সংক্রান্ত তথ্যে অসঙ্গতির কারণে এখনই ওই ছাড়পত্র দেওয়া যাচ্ছে না। ওই সূত্রটির মতে, কিছু বাড়তি তথ্য দিতে বলা হয়েছে ওই সংস্থাকে।
ভারতে তিনটি সংস্থা করোনা প্রতিষেধক আবিষ্কারের গবেষণা করছে। যাদের মধ্যে ভারত বায়োটেকের ‘কোভ্যাক্সিন’ ও জাইডাস ক্যাডিলার ‘জাইকোভ-ডি’ প্রতিষেধক মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের প্রথম ধাপ শেষ করে দ্বিতীয় ধাপ শুরুর মুখে। ভারতীয় সংস্থা সিরামের সঙ্গে হাত মেলানো অক্সফোর্ডের ‘কোভিশিল্ড’ প্রতিষেধকটি ভারতে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের তৃতীয় ধাপ শুরু করতে চলেছে। ফলে টিকার দৌড়ে সিরাম-অক্সফোর্ড এগিয়ে।
ভারত কোথায় দাঁড়িয়ে
• দৈনিক সংক্রমণে - এক নম্বরে (৯০,৮০২)
• দৈনিক করোনায় মৃত্যু - এক নম্বরে (১০১৬)
• করোনা সংক্রমিত সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার হারে - এক নম্বরে (২৯ দিন)
• মোট সংক্রমিতের সংখ্যায় - দু’নম্বরে (৪২,০৪,৬১৪)
• মোট ‘অ্যাক্টিভ করোনা’ সংখ্যায় - দু’ নম্বরে (৮,৮২,৫৪২)
• মোট করোনা মৃত্যুতে - তিন নম্বরে (৭১,৬৪২)
• ২৪ মার্চ: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ— কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ ১৮ দিন চলেছিল। করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ২১ দিনে শেষ হবে।
• ২৫ এপ্রিল: করোনা নিয়ন্ত্রণ কমিটির প্রধান, নীতি আয়োগের সদস্য ভি কে পলের রিপোর্ট— ১৫ মে-র পর নতুন সংক্রমণ হবে না
• ৪ মে: স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল: করোনা বৃদ্ধির হার আর বাড়বে না
• ২৭ জুন: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী: ভারত অন্যান্য দেশের থেকে ভাল অবস্থানে রয়েছে
কংগ্রেসের প্রশ্ন
• মোদীজি কি তাঁর নেতৃত্বে ব্যর্থতার জবাব দেবেন?
• কী ভাবে করোনা আটকানোর কথা ভাবছেন?
• কী ভাবে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যায় লাগাম পরানো হবে?
• মোদী সরকারের কাছে সমাধান রয়েছে না কি ভগবানকে দোষ দেবেন?
গোড়া থেকেই অভিযোগ উঠেছে, সিরাম-অক্সফোর্ডের প্রতিষেধকের সামনে শুরু থেকেই বিভিন্ন কারণে বাধা সৃষ্টি করে সময় নষ্ট করা হচ্ছে। অনেকের অভিযোগ, ভারত বায়োটেকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রতিষেধক আবিষ্কারের কাজ করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীনস্থ ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)। সম্ভবত সে কারণেই পরিকল্পিত ভাবে ‘কোভিশিল্ড’-এর সামনে বাধা তৈরি করা হচ্ছে। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে স্বাস্থ্যকর্তাদের যুক্তি, পদ্ধতিগত ছাড়পত্র না-মেলায় ওই কাজ আটকে রয়েছে। এক স্বাস্থ্যকর্তার বক্তব্য, ‘‘কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়া উচিত নয়। কারণ, ১৩০ কোটি মানুষের দেশে কোনও সংস্থারই একা প্রতিষেধক জোগান দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তাই সব সংস্থার জন্যই বাজার খোলা রয়েছে।’’
আরও পড়ুন: শিক্ষানীতি নিয়ে কথা চান মোদী, কেন এড়ানো হল সংসদ, প্রশ্ন
আরও পড়ুন: অসম্ভব ঋণ নেওয়া, পাল্টা দাবি কেন্দ্রের
দেশের ১৭টি গবেষণাগারে ১৬০০ ব্যক্তির উপরে ‘কোভিশিল্ড’ প্রতিষেধকের তৃতীয় পর্বের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হওয়ার কথা। যার মধ্যে প্রথম প্রয়োগটি শুরুর পরিকল্পনা ছিল চণ্ডীগড়ের ওই সংস্থায়। প্রাথমিক ভাবে ওই প্রতিষেধক প্রয়োগ করে তার প্রভাব দেখার কথা ছিল গবেষণার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক মধু গুপ্ত ও তাঁর নেতৃত্বাধীন ১৬ জনের দলের। মধু বলেন, ‘‘ডেটা সেফটি অ্যান্ড মনিটরিং বোর্ডের ছাড়পত্রের অপেক্ষায় রয়েছি। এ সপ্তাহের শেষের মধ্যে আশা করছি ছাড়পত্রের বিষয়ে জানতে পারব। ছাড়পত্র এলেই কাজ শুরু করে দেওয়া হবে।’’ কবে নাগাদ ফলাফল জানা যাবে তা নিয়ে গবেষকেরা মুখ না খুলতে চাইলেও, সিরাম সংস্থার দাবি, চলতি বছরের শেষে বা নতুন বছরের শুরুতে ‘কোভিশিল্ড’ বাজারে আনতে পারবে তারা।