Coronavirus

আইসোলেশনের পৃথক ঘর নেই ৮৭ কোটি মানুষের!

জনসংখ্যাবিদেরা বলছেন, শুধু বস্তিই নয়, মুম্বই, দিল্লি, কলকাতার মতো শহরে এমন আরও অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে একটি মাত্র ঘরে কমপক্ষে চার-পাঁচ জন থাকেন।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২০ ০৪:৩৯
Share:

ঘেঁষাঘেঁষি: লকডাউন চলাকালীন রাস্তায় ঘুরছে অল্পবয়সিরা। বুধবার, বালিগঞ্জের একটি ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায়। ঘরের অভাবে এ ভাবেই লকডাউনের বিধি মানতে পারছেন না দেশের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

বাড়িতেই ‘আইসোলেশন’? ভারতের মতো দেশে এই ধারণা সোনার পাথরবাটি নয় তো!

Advertisement

করোনার স্বল্প ও প্রাথমিক লক্ষণযুক্তদের বাড়িতে থাকার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকার নির্দেশিকা জারির পরে এমন চর্চাই শুরু হয়েছে। কারণ, ২০১১ সালের জনগণনার তথ্য জানাচ্ছে, সারা দেশে কোনও আলাদা ঘর নেই, একটি বা দু’টি মাত্র ঘরে ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকতে হয় এমন বাসিন্দা ৮৭ কোটিরও বেশি!

জনসংখ্যাবিদেরা বলছেন, শুধু বস্তিই নয়, মুম্বই, দিল্লি, কলকাতার মতো শহরে এমন আরও অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে একটি মাত্র ঘরে কমপক্ষে চার-পাঁচ জন থাকেন। জনগণনার (২০১১) তথ্য অনুযায়ী, দেশে আবাসিক বাড়ির সংখ্যা সাড়ে ২৪ কোটি। আর ‘হাউসহোল্ড’-এর সংখ্যা ২৪ কোটি ৭২ লক্ষের মতো। এই ‘হাউসহোল্ড’ শব্দটি আগে জনগণনায় ‘ফ্যামিলি’ বা পরিবার হিসেবে উল্লিখিত হত। পরবর্তী সময়ে এর সহজতম অর্থ দাঁড়ায়— এক ঠিকানায় বসবাসকারী।

Advertisement

পরিসংখ্যান বলছে, সারা দেশে কোনও আলাদা ঘর নেই (নো এক্সক্লুসিভ রুম) এমন ‘হাউসহোল্ড’-এর সংখ্যা ৯৬ লক্ষ ৩৩ হাজার। আর ‘হাউসহোল্ড সাইজ’ বা একই ঠিকানায় বসবাসকারী লোকের গড় সংখ্যা ৪.৮৫। অর্থাৎ, একই ঠিকানায় প্রায় পাঁচ জন মানুষ বসবাস করেন।

আরও পড়ুন: মার্কিন রিপোর্টে বিদ্ধ মোদী সরকার

সেই হিসেবে আলাদা কোনও ঘর নেই, একটি এবং দু’টি ঘর রয়েছে, এমন বাসিন্দার সংখ্যা যথাক্রমে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি, সাড়ে ৪৪ কোটি এবং ৩৮ কোটি।

অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নমূলক গবেষণার উৎকর্ষকেন্দ্র ‘ইনস্টিটিউট অব ইকনমিক গ্রোথ’ (আইইজি)-এর নাবার্ড চেয়ার প্রফেসর সৌদামিনী দাস বলেন, ‘‘এটা ঠিকই যে এ দেশে বাড়িতে আইসোলেশনের পদ্ধতির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এই নিয়ম সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্যের কথা বলেনি। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আক্রান্তদের যাতে ঠিক চিকিৎসা দেওয়া যায়, তার জন্য বলা হয়েছে।’’

গত সোমবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়িতে থাকার কথা বলেছিলেন। এ রাজ্যের ছবিটাও একই। এ রাজ্যের ৯ কোটি ১২ লক্ষ ৭৬ হাজার ১১৫ জনসংখ্যার মধ্যে পর্যাপ্ত ঘর না-থাকা মানুষের সংখ্যাই প্রায় ৭ কোটি ৬৫ লক্ষ (রাজ্যে হাউসহোল্ড সাইজের গড় ৪.৪৯ ধরে)। কলকাতাও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রায় ৪৫ লক্ষ জনসংখ্যার মধ্যে সাড়ে ৩১ লক্ষের (কলকাতার হাউসহোল্ড সাইজের গড় ৪.৩৮ ধরে) কাছেই পর্যাপ্ত ঘর নেই। ‘ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পপুলেশন সায়েন্সেস’-এর ‘মাইগ্রেশন অ্যান্ড আর্বান স্টাডিজ়’ বিভাগের প্রধান আর বি ভগতের বক্তব্য, ‘‘দেশের বস্তি এলাকার জন্য আলাদা নীতি প্রয়োজন। না হলে পরিস্থিতি জটিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’’

তবে সরকারের এমন ঘোষণা ছাড়া আর উপায়ও ছিল না বলে মনে করছেন অনেকে। আইইজি-র ‘ইন্ডিয়ান ইকনমিক সার্ভিস সেকশন’-এর কোর্স ডিরেক্টর ও প্রধান প্রভাকর সাহুর মতে, ‘‘দেশের সেই স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নেই যে, সামান্য উপসর্গ দেখা দিলে তাঁদের চিকিৎসা করা যাবে। এ ক্ষেত্রে যাঁদের সত্যি প্রয়োজন, তাঁদেরই হাসপাতালে বা কোয়রান্টিন কেন্দ্রে আনা হোক। বাকিদের বাড়িতে সমস্ত নিয়ম মেনে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে থাকতে হবে।’’ ‘মাইক্রোবায়োলজিস্টস সোসাইটি’-র প্রেসিডেন্ট এ এম দেশমুখ বলেন, ‘‘একমাত্র আলাদা ঘর থাকলেই বাড়িতে আইসোলেশন পদ্ধতি কার্যকর হবে। তা না থাকলে পুর এলাকার ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে কোয়রান্টিন কেন্দ্রের সংস্থান করা প্রয়োজন। কারণ, পর্যাপ্ত থাকার জায়গা দেশের ক্ষেত্রে সত্যিই সমস্যার।’’ ‘ইন্ডিয়ান ভাইরোলজিক্যাল সোসাইটি’-র সেক্রেটারি জেনারেল, বিজ্ঞানী যশপাল সিংহ মালিক বলেন, ‘‘বেশির ভাগেরই হাসপাতাল বা কোয়রান্টিন কেন্দ্রে আসার ক্ষেত্রে অনীহা রয়েছে। সে কারণে তাঁরা রোগ গোপন করে যান। এখন স্বল্প বা প্রাথমিক উপসর্গ হলে বাড়িতে থেকে যদি সুস্থ হয়ে যান, তা হলে সেটা ভালই। সকলের পক্ষে শয্যার ব্যবস্থা করা সত্যিই অসম্ভব!’’

আরও পড়ুন: ‘রাম-শিক্ষা’ নিয়ে বিতর্ক জেএনইউয়ে

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement