Coronavirus in India

করোনা-যোদ্ধার মৃত্যুর হিসেবও নেই, সরব রাহুল

লকডাউনের পরে ঘরে ফিরতে গিয়ে কত জন পরিযায়ী শ্রমিক রাস্তায় মারা গিয়েছেন, মোদী সরকার জানে না।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৫:৫৮
Share:

দেশে মোট আক্রান্ত হলেন ৫২ লক্ষ ১৪ হাজার ৬৭৭ জন। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।

থালা বাজানো আর প্রদীপ জ্বালানোর চেয়ে চিকিৎসাকর্মীদের সুরক্ষা ও শ্রদ্ধাটুকু দেওয়া অনেক বেশি জরুরি বলে টুইটারে নরেন্দ্র মোদীকে তীব্র কটাক্ষ করলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী।

Advertisement

লকডাউনের পরে ঘরে ফিরতে গিয়ে কত জন পরিযায়ী শ্রমিক রাস্তায় মারা গিয়েছেন, মোদী সরকার জানে না। কৃষকদের কত ক্ষতি হয়েছে, জানে না। সারা দেশে কত জন চিকিৎসাকর্মী কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন, কেন্দ্রের কাছে তারও কোনও তথ্য নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী অশ্বিনী চৌবে। কেন নেই, চলতি সপ্তাহে রাজ্যসভায় তার যুক্তি দিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, স্বাস্থ্য রাজ্যের আওতাভুক্ত বিষয়। তাই এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ভাবে কোনও তথ্য রাখা হয়নি। সেই খবরের প্রতিবেদনটিই এ দিন টুইটারে পোস্ট করেন রাহুল। সঙ্গে লেখেন, ‘‘প্রতিকূল ডেটা-মুক্ত মোদী সরকার! করোনা-যোদ্ধাদের এতটা অসম্মান কেন?’’

লকডাউনের সময়ে করোনা-যোদ্ধাদের সম্মান জানাতে বিভিন্ন রবিবারে থালাবাটি বাজানো, প্রদীপ জ্বালানোর ডাক দিয়েছিলেন মোদী। স্বাভাবিক ভাবেই রাহুলের কটাক্ষের লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রীই। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছিলেন যে, প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ স্বাস্থ্য প্রকল্পের উপভোক্তাদের পরিসংখ্যান থেকে ৬৪ জন চিকিৎসক-সহ ১৫৫ জন চিকিৎসাকর্মীর মৃত্যুর খবর কেন্দ্রের কাছে রয়েছে। কিন্তু ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-র বক্তব্য, এখনও পর্যন্ত কোভিডে মারা গিয়েছেন ৩৮২ জন চিকিৎসক। তাঁদের ‘যোদ্ধা’ বলা সত্ত্বেও এই তথ্য মোদী সরকারের কাছে না-থাকাটা ‘ভণ্ডামি’ বলে মন্তব্য করেছিল ক্ষুব্ধ আইএমএ।

Advertisement

(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। )

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হিসেবে, ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা ৯৬ হাজারের সামান্য বেশি। যদিও মৃতের সংখ্যা ১১০০ পেরিয়েছে আজও। মোট সংক্রমণ ৫২ লক্ষ এবং মোট মৃত্যু ৮৪ হাজার পেরিয়ে গিয়েছে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থের সংখ্যা ৮৭,৪৭২, যা নতুন রেকর্ড। ওয়ার্ল্ডোমিটার্স রাতে জানিয়েছে, ভারতে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ৫৩ লক্ষ পেরিয়েছে।

আরও পড়ুন: মোদী-ডোভালের তথ্য বেহাত, সন্দেহ চিনা সংস্থাকে ঘিরে

আরও পড়ুন: ‘ধার করে চলছে কেন্দ্রের সরকার’, বললেন নির্মলা

(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)

সংক্রমণের নিরিখে দেশে প্রথম পাঁচে আছে মহারাষ্ট্র, অন্ধ্র, তামিলনাড়ু, কর্নাটক ও উত্তরপ্রদেশ। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বক্তব্য, ওই রাজ্যগুলিতে যেমন সারা দেশের ৫৯.৮ শতাংশ অ্যাক্টিভ রোগী পাওয়া গিয়েছে, তেমন মোট সুস্থের ৫৯.৩ শতাংশও সেখানকার বাসিন্দা। মন্ত্রকের বক্তব্য, গত ১১ দিন ধরে দেশে রোজ সুস্থের সংখ্যা ৭০ হাজারের উপরে রয়েছে। মোট সুস্থের সংখ্যা এখন মোট অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যার ৪.০৪ গুণ। সারা দেশে সুস্থতার হার ৭৮.৮৬ শতাংশ, মৃত্যুহার ১.৬৩ শতাংশ আজ লোকসভায় লিখিত জবাবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য তথা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন জানিয়েছেন, বিভিন্ন সংস্থা ও গবেষকদের উদ্যোগে সারা দেশে করোনাভাইরাসের প্রায় ৩০টি সম্ভাব্য টিকা তৈরির কাজ চলছে। তার মধ্যে তিনটি টিকার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে। আরও চারটি টিকার কাজও এগিয়ে রয়েছে।

(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। )

বর্ধন জানান, সারা দেশে যত রকমের সার্স-কোভ-২ ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে, সেগুলির নমুনার ‘জিনোম সিকোয়েন্স’ (জিনের গঠন) সফল ভাবে বোঝা গিয়েছে। এই কাজে প্রধান ভূমিকা নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্স। এ ছাড়া কেন্দ্রের জৈবপ্রযুক্তি দফতর, কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের উদ্যোগে দেশজুড়ে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহের ১৬টি ‘জৈব-ভাণ্ডার’ তৈরি করা হয়েছে।

(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)

মুখ্যসচিবদের লেখা চিঠিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভল্লা আজ বলেছেন, কিছু রাজ্য অন্য রাজ্যে অক্সিজেন পাঠাতে চাইছে না বলে কেন্দ্রের নজরে এসেছে। অথচ অ্যাক্টিভ কোভিড রোগীর সংখ্যা যখন বাড়ছে, তখন অক্সিজেনের চাহিদাও বাড়বে। এই পরিস্থিতিতে ভিন্‌ রাজ্যে অক্সিজেন সরবরাহের ক্ষেত্রে যাতে বাধা তৈরি না-হয় এবং মেডিক্যাল অক্সিজেনের প্রস্তুতকারী ও সরবরাহকারীদের শুধু সংশ্লিষ্ট রাজ্যেই অক্সিজেন সরবরাহ সীমাবদ্ধ রাখতে যাতে বাধ্য না-করা হয়, তা নিশ্চিত করতে বলেছেন ভল্লা। রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় সার ও রসায়ন মন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া আজ জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতিতে জরুরি ওষুধের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে রাজ্যগুলির সঙ্গে সমন্বয় রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করছে কেন্দ্র।

স্বেচ্ছাসেবকদের একাংশের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ায় রাশিয়ার ‘স্পুটনিক-ভি’ টিকা নিয়ে এ দিন চর্চা চলেছে বিশেষজ্ঞ মহলে। ভারতে ওই টিকা পরীক্ষার জন্য রেড্ডি’জ ল্যাবরেটরিজের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে রুশ সরকার। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চৌবে জানান, টিকা তৈরিতে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়টি নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে কথা চালাচ্ছে ভারত সরকার। পরীক্ষা সফল হলে ২০২১ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকের শেষে ভারত কোনও একটি কার্যকরী টিকা পেয়ে যেতে পারে।

(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement