ছবি: পিটিআই।
প্রস্তুতি চলেছে জোরকদমে। গত কাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছতে শুরু করেছে সিরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি ‘অক্সফোর্ডের প্রতিষেধক’ কোভিশিল্ড। আজ থেকে ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন প্রতিষেধকটিও নানা শহরে সরবরাহের কাজ শুরু হল। শনিবার, ১৬ জানুয়ারি ভার্চুয়াল মাধ্যমে দেশ জুড়ে টিকাকরণ কর্মসূচির সূচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উদ্বোধন করবেন টিকাকরণ সংক্রান্ত ‘কো-উইন’ অ্যাপটিরও।
প্রথম ধাপের টিকাকরণে ১ কোটি ১০ লক্ষ ডোজ় কোভিশিল্ড এবং ৫৫ লক্ষ কোভ্যাক্সিনের ডোজ় কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সিরাম ইতিমধ্যেই ১৩টি শহরে ৫৬ লক্ষ ডোজ় পাঠিয়েছে। বায়োটেক আজ জানিয়েছে, প্রথম দফায় ১১টি শহরে প্রতিষেধক পাঠিয়েছে তারা। এগুলি হল, গুয়াহাটি, পটনা, দিল্লি, কুরুক্ষেত্র, বেঙ্গালুরু, পুণে, ভুবনেশ্বর, জয়পুর, চেন্নাই, লখনউ ও অন্ধ্রের গনভরম। আজ সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে হায়দরাবাদ থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ বিমানে প্রথম ব্যাচের কোভ্যাক্সিন পাঠানো হয় দিল্লিতে। প্রতিটি ভায়ালে রয়েছে ২০ ডোজ় প্রতিষেধক। মধ্যপ্রদেশে প্রথম দফায় ৯৪ হাজার ডোজ় কোভিশিল্ড পৌঁছেছে। কেরলের কোচি ও তিরুঅনন্তপুরমে আজ দু’টি বিমানে ওই প্রতিষেধক পৌঁছয়। সেখান থেকে তা যাবে ১৩৩টি কেন্দ্রে।
দিল্লিতে ৮৯টি কেন্দ্রে টিকাকরণ হওয়ার কথা। তবে অন্তত শুরুর দিনটিতে বিভিন্ন রাজ্যে টিকাকরণ কেন্দ্রের নির্ধারিত সংখ্যা কিছুটা কমাতে বলেছে কেন্দ্র। সম্ভবত পরিকাঠামোগত কারণেই এই সিদ্ধান্ত। শনিবার পঞ্জাবে যেমন ১১০টির বদলে ৫৯টি কেন্দ্রে টিকাকরণ হবে। অসমে ৭৪টির বদলে টিকা দেওয়া হবে ৫৯টি কেন্দ্রে। মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজেশ টোপে বলেন, ‘‘কেন্দ্র তাড়াহুড়ো করতে বারণ করেছে। গোটা রাজ্যে টিকাকরণ কেন্দ্রের সংখ্যা ৫১১ থেকে কমিয়ে ৩৫০ করা হচ্ছে। মুম্বইয়ে ৭২ থেকে কমে তা হচ্ছে ৫০।’’
আরও পড়ুন: বেসরকারি হাসপাতালেও এ বার প্রতিষেধক কেন্দ্র
আরও পড়ুন: কোভিড প্রতিরোধকে অগ্রাধিকার দিয়ে পোলিও টিকাকরণ কর্মসূচি পিছিয়ে দিল কেন্দ্র
দেশে আজ নতুন সংক্রমিতের সংখ্যা কালকের তুলনায় সামান্য বেড়ে হয়েছে ১৫,৯৬৮। ব্রিটেনের নতুন স্ট্রেনটি এখনও পর্যন্ত দেশে ১০২ জনের শরীরে পাওয়া গিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ২০২ জনের। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ গত কালই স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, অন্তত প্রথম পর্যায়ের প্রতিষেধকের গ্রহীতাদের কাছে পছন্দসই প্রতিষেধক বেছে নেওয়ার সুযোগ নেই। মানবদেহে কোভ্যাক্সিনের তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শেষ না-হওয়ার আগেই সেটি ছাড়পত্র পেয়ে যাওয়ায় এই প্রসঙ্গ উঠছে। আজ তা নিয়েই কংগ্রেস মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারি অভিযোগ করেছেন যে, টিকাকরণ পর্বের নামে আসলে কোভ্যাক্সিনের তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষাই চালানো হচ্ছে। মণীশ বলেন, ‘‘এটা করা যায় না। ভারতীয়রা গিনিপিগ নন। তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষাই যখন শেষ হয়নি, তখন সেটির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।’’ সার্স-কোভ-১ এবং সাধারণ সর্দি-কাশির চার ধরনের করোনাভাইরাস নিয়ে কাজ করেছেন আমেরিকার এক দল গবেষক। তাঁদের মতে, কোভিড যদি আঞ্চলিক রোগে পরিণত হয় এবং অধিকাংশ মানুষ যদি শৈশবে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের সংস্পর্শে আসেন, সে ক্ষেত্রে রোগটি আর এত তীব্র আকার ধারণ করবে না। ঠান্ডা লাগা, সর্দি-কাশির মতোই হবে তার উপসর্গ। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ‘সায়েন্স’ পত্রিকায়।
অন্যান্য করোনাভাইরাসের আচরণের ভিত্তিতেই ভবিষ্যতে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের সম্ভাব্য প্রকোপের একটি রূপরেখা তৈরি করেছেন গবেষকেরা। তাঁদের মতে, সর্দি-কাশির চারটি করোনাভাইরাসে দীর্ঘদিন ধরেই মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, বিশেষত শৈশবে। ফলে তখন থেকেই শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা হওয়ায় পরিণত বয়সে এই সব অসুখের আক্রমণ আর তেমন তীব্র হচ্ছে না। রূপরেখাটি বলছে, প্রতিষেধক যদি অন্যান্য রোগের মতো এ ক্ষেত্রেও স্বল্পস্থায়ী রক্ষাকবচ দিয়ে প্রকোপ কমায়, তা হলে কোভিডও দ্রুত আঞ্চলিক রোগে পরিণত হবে। প্রধান গবেষক এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনি লাভিনে অবশ্য বলেন, ‘‘আমাদের মডেলটি বলছে, অন্যান্য করোনাভাইরাসের মতোই এ ক্ষেত্রে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে যাবে। তবে শৈশবের বদলে পরিণত বয়সে প্রথম বার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে কী হবে, তা এখনও আমরা জানি না।’’