Coronavirus in India

টিকার আকাল, প্রশ্নে মোদীর ‘টিকা উৎসব’

প্রতিষেধক কুক্ষিগত করে রাখার কেন্দ্রীয় নীতির কারণে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে বলেই মত অনেকের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২১ ০৫:১৮
Share:

ছবি: পিটিআই।

দেশ জুড়ে প্রতিষেধকের হাহাকার দেখা দিলেও আশু কোনও সমাধানের আশা দেখছেন না স্বাস্থ্যকর্তারা। সিরাম ইনস্টিটিউট ও ভারত বায়োটেক তাদের দুই প্রতিষেধক, যথাক্রমে কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিনের উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেও আগামী এক-দেড় মাসের আগে তার সুফল পাওয়া মুশকিল বলেই মনে করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অন্য প্রতিষেধকগুলি যত দিন না বাজারে আসছে, তত দিন প্রতিষেধকের ঘাটতি সামগ্রিক ভাবে মেটানো কঠিন বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। দেশে প্রতিষেধক যখন বাড়ন্ত, তখন প্রধানমন্ত্রীর ডাকে আগামিকাল থেকে শুরু হওয়া ‘টিকা উৎসব’ কতটা সফল হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

Advertisement

প্রশ্ন উঠেছে কেন্দ্রের প্রতিষেধক নীতি নিয়েই। গোড়া থেকেই প্রতিষেধক বণ্টনের প্রশ্নে কেন্দ্রীভূত নীতি নিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। রাজ্যগুলিকে খোলা বাজার থেকে প্রতিষেধক কিনতে দেওয়া তো দূর, কোনও রাজ্যকে কত প্রতিষেধক দেওয়া হবে, সেই সিদ্ধান্তও গোড়া থেকেই নিয়েছে কেন্দ্র। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রাজ্যের দাবিকে উপেক্ষা করার পাশাপাশি অভিযোগ উঠেছে স্বজনপোষণেরও। বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিকে বেশি প্রতিষেধক দেওয়ার অভিযোগ গোড়া থেকেই উঠেছে। মহারাষ্ট্রের চেয়ে গুজরাতের জনসংখ্যা অর্ধেক হওয়া সত্ত্বেও দুই রাজ্যকেই সমসংখ্যক প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে! এ নিয়ে মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজেশ টোপে সরব। একই অভিযোগ কংগ্রেস শাসিত ছত্তীসগঢ়েরও। প্রতিষেধক কুক্ষিগত করে রাখার কেন্দ্রীয় নীতির কারণে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে বলেই মত অনেকের। রাজ্যগুলিকে খোলা বাজার থেকে প্রতিষেধক কেনার সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল বলে বিশেষজ্ঞদের একাংশ সরব হলেও নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) বিনোদ পলের মতে, এতে ধনীরাই প্রতিষেধক কেনার সুযোগ পেতেন।

এ দিকে আজ সমস্ত রেকর্ড ভেঙে ১,৪৫,৩৮৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন গোটা দেশে। সব মিলিয়ে দেশে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ১০ লক্ষ ছাড়িয়েছে। তার মধ্যে গত পাঁচ দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ৬ লক্ষের বেশি মানুষ। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গিয়েছেন ৭৯৪ জন। দেশের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা মহারাষ্ট্রে। এই পরিস্থিতিতে প্রতিষেধকের মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ রুখতে ১১ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ‘টিকা উৎসবে’র ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু টিকার অভাবে যখন অধিকাংশ বেসরকারি টিকাকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সেখানে ‘টিকা উৎসব’ হবে কী দিয়ে, সেই প্রশ্ন আজ তুলেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। ভাঁড়ারে প্রতিষেধকের অভাব নিয়ে সরব কংগ্রেসশাসিত রাজ্যগুলি। যদিও স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, এই মুহূর্তে অন্তত ৪০ লক্ষের বেশি প্রতিষেধক বিভিন্ন রাজ্যকে পাঠানোর পর্যায়ে রয়েছে। যা দিয়ে আগামী ৭-১০ দিনের টিকাকরণ সেরে ফেলা যাবে। কিন্তু তাতে সামগ্রিক চিত্র যে বিশেষ বদলাবে না, তা মানছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের বাজারে তৃতীয় বা চতুর্থ কোনও প্রতিষেধক না-আসা পর্যন্ত বর্তমান ঘাটতি মেটা কার্যত অসম্ভব।

Advertisement

এই মুহূর্তে দেশের বাজারে আসার জন্য পরীক্ষামূলক প্রয়োগের শেষ পর্যায়ে রয়েছে রাশিয়ার প্রতিষেধক স্পুটনিক-ভি। এ দেশে রেড্ডি’জ় ল্যাবরেটরি সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের তৃতীয় পর্যায় শেষ করেছে ওই প্রতিষেধক। রাশিয়া ও ভারতে প্রতিষেধক প্রয়োগের ফলে মানবদেহে কী প্রভাব পড়ছে, সেই তথ্য গত কাল রেড্ডি’জ় সংস্থার কাছে চেয়েছে প্রতিষেধক ছাড়পত্র দেওয়ার প্রশ্নে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ইঙ্গিত, প্রাথমিক ভাবে ফলাফল আশাপ্রদ হওয়ায় এ মাসের মধ্যে স্পুটনিককে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের প্রশ্নে অনুমোদন দেওয়া হতে পারে। মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে জাইডাস ক্যাডিলা সংস্থার প্রতিষেধক জাইকোভ-ডি। জুন-জুলাইয়ে আসতে চলেছে ওই প্রতিষেধক।

প্রতিষেধকের ঘাটতি মেটাতে উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিরাম ইনস্টিটিউট। অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা সংস্থার তৈরি কোভিশিল্ড প্রতিষেধক বর্তমানে মাসে ৬-৭ কোটি উৎপাদন করে সিরাম। যা বাড়িয়ে ফি মাসে ১০ কোটি করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। এত দিন বাদে উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সিরামের সমালোচনা করেছেন এমসের ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া। তিনি বলেন, ‘‘দেশে এবং বিদেশে যে প্রতিষেধকের চাহিদা বাড়বে, তা বোঝা কোনও রকেট সায়েন্স নয়।’’ অর্থের অভাবে উৎপাদনের কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে সিরামের অভিযোগ প্রসঙ্গে গুলেরিয়া বলেন, ‘‘বিশ্ব যখন প্রতিষেধক চাইছে, তখন আমার মতে, অসংখ্য বিনিয়োগকারী সাহায্য করতে বসে রয়েছে।’’ উৎপাদন বাড়াচ্ছে ভারত বায়োটেকও। আগামী মাস থেকে এক কোটি ডোজ় টিকা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে তারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement