প্রদীপ হাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
এমনিতে প্রায় কোনও বিষয়েই বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনার পথে হাঁটেন না তিনি। এমনকি করোনা-মোকাবিলার রণকৌশল বা লকডাউনের মতো বিষয় নিয়েও বিরোধীদের আগাগোড়া অন্ধকারেই রেখেছেন। সেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এ বার দল নির্বিশেষে সকলের সাহায্য চাইতে আসরে নামলেন।
রবিবার সকাল থেকে মোদী একে একে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, বড় সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে সকলকে পাশে টানার কৌশল এটা। মোদী আজ প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী-সহ প্রায় সব বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীদের ফোন করে তাঁদের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন। একই সঙ্গে তাঁদের সাহায্যও চেয়েছেন। টানা ২১ দিনের জন্য দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষণার আগেও বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে করোনা-মোকাবিলা নিয়ে আলোচনার পথে হাঁটেনি মোদী সরকার। এ বার সেই অবস্থান থেকে সরে আসার ইঙ্গিত মিলল।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও আজ মোদীর কথা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। কিন্তু নবান্ন সূত্রের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সরাসরি কোনও কথা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের এক আধিকারিক মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে ফোন করেছিলেন। তা মূলত ৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর ডাকা সংসদীয় দলের নেতাদের বৈঠকের বিষয়ে। তৃণমূলের তরফে প্রাথমিক ভাবে জানানো হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রীর ডাকা ওই ভিডিয়ো কনফারেন্সে তৃণমূলের নেতারা হাজির থাকবেন না। লকডাউন ঘোষণা করার আগে বিরোধীদের সঙ্গে কোনও আলোচনায় না-যাওয়ায় বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী কি বিরোধীদের সঙ্গে পরামর্শ করার প্রয়োজন বোধ করেন না? প্রধানমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্স করেন। সেটাও লকডাউন ঘোষণার পরে।
আরও পড়ুন: দীপের সঙ্গে উড়ল ফানুস, ফাটল দেদার বাজিও, ধৃত ৯৮
শনিবারই সরকার জানিয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী ৮ এপ্রিল সংসদীয় দলনেতাদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্স করবেন। তার পরেও প্রশ্ন ওঠে, মোদী কেন বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন না!
অবশেষে আজ বিরোধীদের সঙ্গে কথা বলার পথে হাঁটলেন মোদী। দুই প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, প্রণব মুখোপাধ্যায় ও প্রতিভা পাটিলের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন তিনি। দু’জনের স্বাস্থ্যের খোঁজ নেন। কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না, জানতে চান। এর পর দুই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এবং এইচ ডি দেবগৌড়ার সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। দেবগৌড়া জানান, প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার প্রশংসা করে করোনা-মোকাবিলায় সমর্থন চান। তিনিও সব রকম সাহায্য ও সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছেন।
সনিয়া গাঁধী ও মনমোহন সিংহ।
সরকারি সূত্রের বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী এর পর সনিয়া গাঁধী, ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক, তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও, সমাজবাদী পার্টির মুলায়ম সিংহ যাদব, অখিলেশ যাদব, শিরোমণি অকালি দলের প্রকাশ সিংহ বাদল, ডিএমকে-প্রধান এম কে স্ট্যালিনের সঙ্গে কথা বলেন। স্ট্যালিনের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি যেমন ডিএমকে নেতার মা দয়ালু আম্মালের স্বাস্থ্যের খোঁজ নিয়েছেন, তেমনই বাকিদের পরিবারেরও খোঁজ নেন মোদী।
রাজনীতিকদের ব্যাখ্যা, যত দিন যাচ্ছে, ততই করোনা-মোকাবিলা কঠিন হয়ে উঠছে। সরকারও সেটা বুঝতে পারছে। বিশেষত সরকারের প্রস্তুতিতে যে বিস্তর গলদ রয়েছে, তা-ও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ডাক্তার-নার্সদের সুরক্ষা সামগ্রীর অভাব থেকে করোনা পরীক্ষার টেস্ট কিটের অভাব— সব নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। অভিযোগ উঠেছে, ভারতে এখনও করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা কম, কারণ টেস্টই কম হচ্ছে।
অতিমারির মোকাবিলায় প্রথম দিকে সব বিরোধী দলই সরকারের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, ততই বিরোধীদের সুর চড়ছে। রাজ্য সরকারগুলিও প্রশ্ন তুলছে। এমনকি যে নীতীশ কুমার বিজেপির শরিক নেতা, তাঁর বিহার প্রশাসনও কেন্দ্রের দিকে আঙুল তুলছে।
রাজনীতিকরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে মোদী বুঝতে পারছেন, এখন তাঁর বিরোধীদের পাশে দরকার। তাই তিনি এখন সকলের সঙ্গে কথা বলছেন। দেখাতে চাইছেন, সরকারের সব পদক্ষেপই সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও সব বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে করা হয়েছে। কংগ্রেস নেত্রী সুস্মিতা দেব বলেন, “দেরিতে হলেও সুবুদ্ধি হয়েছে। কিন্তু দেশকে তার জন্য খেসারত দিতে হল।”
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)