গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
সারা দেশে ২৪ ঘণ্টার নিরিখে করোনা সংক্রমণ শুক্রবারই প্রথম বার ৬০ হাজারের গণ্ডি টপকেছিল। সেই ধারা বহাল রইল শনিবারও। এ দিন সারা দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৬১ হাজার ৫৩৭ জন। এর ফলে সারা দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এখন ২০ লক্ষ ৮৮ হাজার ৬১১। এ দিন করোনা সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের উপরেই রয়েছে। সারা দেশের করোনা পরিস্থিতিতে উদ্বেগের ছবিটা ফের এক বার উঠে এসেছে এ দিন।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া সূত্র অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে আরও ৯৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর ফলে সারা দেশে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা এখন ৪২ হাজার ৫১৮।
প্রতি দিন যে সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা হচ্ছে, তার মধ্যে যত শতাংশের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, সেটাকেই বলা হচ্ছে ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার। গত কয়েক দিন ধরে তা ১০ শতাংশের নীচেই ছিল এই হার। কিন্তু শুক্রবার তা বেড়ে হয় ১০.৮৮ শতাংশ। ওই দিন দেশে টেস্টের পরিমাণ কিছুটা কম ছিল। এ দিন গত ২৪ ঘণ্টায় দেশ জুড়ে করোনা পরীক্ষা হয়েছে ৫ লক্ষ ৯৮ হাজার ৭৭৮ জনের। সংক্রমণের হার কিছুটা কমে এ দিন হয়েছে ১০.২৮ শতাংশ।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও, ভারতে করোনা রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার পরিসংখ্যানটাও শুরু থেকেই স্বস্তি দিয়ে আসছে। এখনও পর্যন্ত মোট ১৪ লক্ষ ২৭ হাজার ৫ জন করোনা আক্রান্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন। অর্থাৎ দেশে মোট আক্রান্তের প্রায় ৬৮.৩২ শতাংশ সুস্থ। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৪৮ হাজার ৯০০ জন।
আরও পড়ুন: ধাপে ধাপে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা গোটা দেশে
সংক্রমণের সংখ্যার নিরিখে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে ভারত। প্রথম এবং দ্বিতীয় স্থানে যথাক্রমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রাজিল। কিন্তু দৈনিক সংক্রমণের নিরিখে ওই দু’টি দেশকে ছাপিয়ে প্রথম স্থানেই রয়েছে ভারত। চিকিৎসকদের একটি বড় অংশ মনে করছেন, এক-একটি রাজ্যে এক-এক সময়ে শীর্ষে পৌঁছবে করোনা সংক্রমণ। অর্থাৎ, দেশ জুড়ে এক বারে নয়, বরং বিভিন্ন অংশে বিচ্ছিন্ন ভাবে একাধিক বার (মাল্টিপল) সর্বোচ্চ সংক্রমণ ঘটবে করোনার। মৃত্যুর নিরিখে সারা দেশে প্রথম মহারাষ্ট্র ১৭ হাজার ৯২ জন। এছাড়াও তামিলনাড়ুতে ৪ হাজার ৬৯০, দিল্লিতে ৪ হাজার ৮১, কর্নাটকে ২ হাজার ৯৯৮, অন্ধ্রপ্রদেশে ১ হাজার ৮৪২, উত্তরপ্রদেশে ১,৯৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
প্রথম থেকেই করোনা সংক্রমণের শীর্ষে মহারাষ্ট্র। সেখানে ৪ লক্ষ ৯০ হাজার ২৫৬২ জন করোনা আক্রান্ত। দ্বিতীয় স্থানে থাকা তামিলনাড়ুতে মোট আক্রান্ত ২ লক্ষ ৮৫ হাজার ২৪ জন। তৃতীয় স্থানে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ। সেখানে আক্রান্ত ২ লক্ষ ৬ হাজার ৯৬০ জন। চতুর্থ স্থানে থাকা কর্নাটকে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ৬৪ হাজার ৯২৪ জন। পঞ্চম স্থানে রয়েছে দিল্লি। সেখানে আক্রান্ত ১ লক্ষ ৪২ হাজার ৭২৩ জন।
আরও পড়ুন: কোভিড ছড়ানোর মূলে বস্তি ও বহুতলে ফারাক নেই! কেন বলছেন ডাক্তারেরা?
পশ্চিমবঙ্গেও রোজ দিন বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন অনুসারে, নতুন করে ২ হাজার ৯১২ জনের দেহে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। এ নিয়ে রাজ্যে মোট আক্রান্ত হলেন ৮৯ হাজার ৬৬৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫২ জনের। করোনার কবলে পড়ে রাজ্যে এখনও অবধি মোট প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ৯৫৪ জনের। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানাচ্ছে, এর মধ্যে ১ হাজার ৭১৯ জনেরই কোমর্বিডিটি ছিল।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)