দিল্লিতে গণচিতায় সৎকার করা হচ্ছে কোভিড আক্রান্তদের দেহ। ছবি—রয়টার্স।
করোনাভাইরাস দেশে এখনও অবধি প্রাণ কেড়়েছে ২ লক্ষ ৪ হাজার ৮৩২ জনের। এই সংখ্যার নিরিখে বিশ্বের চতুর্থ স্থানে রয়েছে ভারত। আগে রয়েছে আমেরিকা (৫ লক্ষ ৭৩ হাজার), ব্রাজিল (৩ লক্ষ ৯৫ হাজার) এবং মেক্সিকো (২ লক্ষ ১৫ হাজার)। আমেরিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশের তুলনায় ভারতে মৃত্যুর হার প্রথম থেকেই ছিল কম। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তেই দেশে বেড়েছে প্রাণহানি।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে কেরলে চিন ফেরত এক ব্যক্তির শরীরে প্রথম ধরা পড়েছিল করোনাভাইরাস। তার পর খুব ধীরে ধীরে তা ছড়াতে থাকে। করোনার জেরে প্রথম মৃত্যুর খবর এসেছিল গত বছর ১২ মার্চ। ৬ এপ্রিল দেশের মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১০০ পার করেছিল। ৫ মে দেশে প্রথম বার এক দিনে ১০০-র বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এর পর সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়তে থাকে। গত বছর ১৭ অগস্ট দেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ হাজার পেরোয়। অর্থাৎ প্রথম ৫০ হাজার মৃত্যু ছাড়াতে সময় লেগেছিল ৫ মাসের একটু বেশি সময়।
গত বছর অগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে দৈনিক মৃত্যু ১ হাজারের বেশি হতে থাকে। সে সেময় হাজারের বেশি বাড়তে বাড়তে ৩ অক্টোবর দেশে মৃতের সংখ্যা ১ লক্ষ ছাড়ায়। অর্থাৎ মৃত্যু ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ যেতে সময় লেগেছিল মাত্র দেড় মাস। যদিও এর পর থেকেই দেশের দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা কমতে শুরু করে। ধীরে ধীরে কমতে কমতে এ বছরের জানুয়ারিতে তা নেমে এসেছিল তা ১০০-র ঘরে। কোভিডের জন্য দেশের মৃত্যু ১ লক্ষ থেকে দেড় লক্ষ মৃত্যু হতে সময় লেগেছিল তিন মাস মতো।
যদিও জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, এমনকি মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত দেশের দৈনিক মৃত্যু ২০০-র নীচেই ঘোরফেরা করছিল। এর পরই দেশে আছড়ে পড়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। করোনাভাইরাসের নতুন প্রজাতি ছড়িয়ে পড়ার জেরে বাড়তে থাকে দৈনিক সংক্রমণ। সেই সঙ্গে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়তে শুরু করে। বাড়তে বাড়তে ১৪ এপ্রিল তা আবার ১০০০ হাজার ছাড়ায়। ৭ দিনের মধ্যে সেই দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা পৌঁছে যায় ২ হাজারে। ২৮ এপ্রিল বুধবার তা প্রথম বারের জন্য ৩ হাজার ছাড়িয়েছে। সেই সঙ্গে বুধবার মোট মৃত্যুও ছাড়িয়েছে ২ লক্ষ। গত সাড়ে ৩ মাসে হয়েছে শেষ ৫০ হাজার মৃত্যু। এই ৫০ হাজার মৃত্যুর মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার মৃত্যু হয়েছে মাত্র এক মাসে। করোনার জেরে এত কম সময়ে এত সংখ্যক মৃত্যু এর আগে কখনও হয়নি দেশে। এর মধ্যে গত ১৭ দিনে মৃত্যু হয়েছে ৩০ হাজারের বেশি। তাই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক দেশের মৃত্যুর হার কম থাকার কথা বললেও সংখ্যার হিসাবে দৈনিক মৃত্যুর এই বাড়বাড়ন্ত নতুন করে চিন্তা বাড়াচ্ছে দেশ জুড়ে।