ছবি: পিটিআই।
সংসদের অভ্যর্থনাকক্ষ না স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বোঝা দায়! সাদা কোট গায়ে ডাক্তার, পিপিই-কিট পরিহিত স্বাস্থ্যকর্মী, সারি সারি টেবিলে কোভিডের টেস্ট-কিট।
সংসদের অধিবেশন শুরুর আগে নির্দেশ জারি হয়েছিল, সাংসদ থেকে সাংবাদিক, আমলা থেকে মার্শাল, সবাইকে কোভিডের আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করাতে হবে। কিন্তু অধিবেশন শুরুর পরে প্রথম সপ্তাহেই জনা বিশেক সাংসদের কোভিড ধরা পড়তে নির্দেশ জারি হল, সাংবাদিক থেকে আমলা, রোজ র্যাপিড টেস্ট করিয়ে তবে প্রবেশের অনুমতি মিলবে।
অগত্যা সংসদে ঢোকার আগে প্রতিদিন নাসারন্ধ্রে খোঁচাখুঁচি করিয়ে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা। বিশ-তিরিশ মিনিট অপেক্ষার পরে ‘নেগেটিভ’ রিপোর্টই প্রবেশের ছাড়পত্র। কিন্তু সংসদের সরগরম ছবি কোথায়?
আরও পড়ুন: নতুন কৃষি বিল: কী কী হচ্ছে, কী কী বদলাচ্ছে, কী কী বলছে দু’পক্ষ
কথা ছিল, ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে ১ অক্টোবর পর্যন্ত বাদল অধিবেশন চলবে। কিন্তু সাংসদদের মধ্যে কোভিড সংক্রমণ বাড়তে শুরু করায় দাবি ওঠে, আগেভাগেই ইতি টানা হোক। বুধবারই তাই লোকসভা ও রাজ্যসভার বাদল অধিবেশন সমাপ্ত হল। অতিমারির মধ্যে অচেনা অধিবেশনের সাক্ষী থাকল সংসদ।
এত দিন সংসদের অধিবেশনে একতলার করিডর, দোতলার বারান্দা গমগম করত। বাদল অধিবেশনে সেই ভিড়েরও দেখা মিলল না। খাঁ খাঁ করিডরে শুধু স্যানিটাইজ়ারের বোতল হাতে সাফাই-কর্মীদের ভিড়। সংসদ ভবনের প্রতিটি গেটে থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরা বসেছে। কারও শরীরের তাপমাত্রা বেশি হলেই ধরা পড়বে। সাংসদরা অনেকেই দাঁড়িয়ে নিজেদের লাল-বেগুনি রঙের ‘থার্মাল ইমেজ’ দেখে নিলেন।
সাংসদদের আপ্ত-সহায়করা সংসদ ভবনে ঢোকার অনুমতি পাননি। তার উপরে বয়স্ক সাংসদদের অনেকেই অধিবেশন এড়িয়ে যাওয়ায় ভিড় এমনিই কম ছিল। সব সাংবাদিকরাও প্রবেশাধিকার পাননি। বাংলা সংবাদপত্রের মধ্যে লোকসভার প্রেস গ্যালারিতে শুধু আনন্দবাজার পত্রিকাই ঢুকতে পেরেছিল। তা-ও মাত্র একজন। রাজ্যসভায় আবার সাংবাদিকদের ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে প্রবেশাধিকার। অন্য সময় অধিবেশন দেখতে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী থেকে সাংসদদের গ্রামের মানুষরাও ভিড় করে হাজির হন। এ বার সেই অতিথি গ্যালারিতেও সাংসদদের বসার ব্যবস্থা। প্রেস গ্যালারিতে স্টিকার লাগানো, কোন আসনে বসা যাবে। নিরাপত্তা কর্মীরা সাবধান করে দিচ্ছেন, নির্ধারিত আসনগুলিই স্যানিটাইজ়ার দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। বাকিগুলো নয়! মেলামেশা এড়াতে সেন্ট্রাল হল, লাইব্রেরির আড্ডাতেও ভাটার টান। সেন্ট্রাল হল থেকে লাইব্রেরি যাওয়ার পথেই এক দিকে চা, আর এক দিকে লস্যির আয়োজন। অন্য সময় সারাদিনই ভিড় লেগে থাকে। এ বার সেখানেও কেউ পারতপক্ষে দাঁড়ালেন না। সংসদের ক্যান্টিনেও মূলত শুকনো খাবারের পসরা। তা-ও চা, বিস্কুটের বেশি এগোতে অনেকেই সাহস করলেন না।
লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা, রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু অবশ্য বললেন, অতিমারির মধ্যে অধিবেশনের কাজে কমতি হয়নি। বরঞ্চ অন্যান্য অধিবেশনের তুলনায় কিঞ্চিৎ বেশি বিলই পাশ হয়েছে। আর বিরোধীরা বলছেন, করোনার ভয়ে কৃষি বিল বাদে আর কিছু নিয়ে তেমন হট্টগোল করে সভা ভন্ডুল করতে পারেননি তাঁরা। শেষ দু’দিন বিরোধীরা অধিবেশন বয়কট করায় আরও সুবিধা হয়েছে। বুধবারও রাজ্যসভায় আটটি, লোকসভায় একটি বিল পাশ হয়েছে। সরকার ফাঁকা মাঠে গোল দিয়েছে।