ছবি: সংগৃহীত।
কোভিডের সংক্রমণ রুখতে রাজ্যগুলির সঙ্গে মিলিত হয়ে একযোগে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর মতে, সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর মতোই করোনাকে রুখতে সচেষ্ট হওয়ার বার্তা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। যে সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে করোনা-পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে বলে মনে করে কেন্দ্র, তাদের প্রশাসনের জন্য তিনটি লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মঙ্গলবার একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে ওই দাওয়াই দিয়েছেন তিনি। তবে প্রধানমন্ত্রীর মতে, “কারও উপরেই কোনও মতামত চাপিয়ে দেওয়া হবে না। বরং সকলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে।” করোনার সংক্রমণ রুখতে সংশ্লিষ্ট রাজ্য প্রশাসনগুলি কী কী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, তা লিখিতভাবে কেন্দ্রকে জানাতে বলেছেন মোদী।
এ দিন করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন মোদী-শাহরা। কেন্দ্রের মতে, দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ছত্তীসগঢ়, দিল্লি, গুজরাত, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান এবং কেরলের করোনা-পরিস্থিতি সঙ্গীন। ওই আট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের জন্য অমিত শাহের দাওয়াই, কোভিড রোগীদের মৃত্যুহার যাতে ১ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনা যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা যাতে ৫ শতাংশের বেশি না ওঠে, সে দিকে নজর দিতে হবে। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, কনটেনমেন্ট জোনের সংজ্ঞা নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে আরও দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে হবে। শাহের মতে, ১৫ দিনের পরিবর্তে সাত দিন অন্তর কনটেনমেন্ট জোনের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে হবে স্বাস্থ্য আধিকারিকদের। এবং সেখান থেকে সংগৃহীত তথ্য ও পরিস্থিতি অনুযায়ী ওই জোনের স্টেটাস বদলাতে হবে।
এ দিনের বৈঠকের সময় বাঁকুড়া সফরে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকেই ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দেন তিনি। কোভিডের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বাংলার সরকার যে কেন্দ্রের সঙ্গে সব রকমের সহযোগিতা করবে, সে আশ্বাস দিয়েছেন মমতা। যদিও গোটা দেশের মধ্যে এ রাজ্যের করোনা-পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, তা মানতে নারাজ রাজ্য সরকার। উল্টে তাঁর দাবি, দুর্গাপুজো-সহ উৎসবের মরসুম শেষেও রাজ্যের করোনা ঊর্ধ্বগতি রুখে দিতে সক্ষম হয়েছে প্রশাসন।
আরও পড়ুন: কোভিড টিকার কার্যকারিতা ৯ মাস থেকে ১ বছর, দাবি এমস ডিরেক্টেরের
আরও পড়ুন: সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘করোনা টিকা পর্যটন’-এর মেসেজ ভাইরাল, সমালোচনায় নেটাগরিকরা
বৈঠকে মমতা ছাড়াও যোগ দিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণী, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল, হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর, কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এবং ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী, গোটা দেশে এখনও পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৯১ লক্ষ ৭৭ হাজার ৮৪০ জন। পাশাপাশি, কোভিডের জন্য ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ২১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে এদিন দিল্লিতে ৪ হাজারেরও বেশি নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। দেশের আট রাজ্যের মধ্যে রাজধানীর পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
এদিনের বৈঠকে কেজরীবালের দাবি, পড়শি রাজ্যগুলিতে ফসলের গোড়া পোড়ানোর ফলে দিল্লির কোভিড পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। রাজধানীতে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ সামলাতে কেন্দ্রীয় হাসপাতালগুলিতে কোভিড রোগীদের জন্য ১ হাজার আইসিইউ শয্যা সংরক্ষণের দাবিও জানিয়েছেন তিনি। কেজরীর আরও দাবি, ১০ নভেম্বর দিল্লিতে সবচেয়ে বেশি ৮ হাজার ৬০০ জন আক্রান্ত হলেও তার পর থেকে ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। সংক্রমণের হারও কমছে বলে দাবি তাঁর।