শীতের মরসুমে দেশে তরল অক্সিজেনের চাহিদা বাড়তে পারে। ছবি: সংগৃহীত।
শীতের মরসুমে কোভিড রোগীদের দাহিদা মেটাতে ১ লক্ষ মেট্রিক টন তরল অক্সিজেন আমদানি করার উদ্যোগ নিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে বুধবারই বিশ্ব জুড়ে দরপত্র আহ্বান করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এইচএলএল লাইফকেয়ার লিমিটেড।
মন্ত্রক সূত্রে খবর, কেন্দ্র ও রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালগুলির জন্য ওই তরল অক্সিজেন আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রকের এক শীর্ষকর্তা জানিয়েছেন, ওই পরিমাণ অক্সিজেন আমদানি তথা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহের জন্য সরকারের খরচ হবে প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা।
চলতি মাসের গোড়া থেকে দেশে করোনার দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা কমছে। গত ৫ দিন ধরে ৭০ হাজারের নীচে সংক্রমণের প্রবণতা দেখা গিয়েছে। তবে চিকিৎসকদের আশঙ্কা, আসন্ন উ়ৎসবের মরসুমে এবং শীত এই প্রবণতা ঊর্ধ্বমুখী হবে। ফলে হাসপাতালগুলিতে কোভিড রোগীর পাশাপাশি অন্যান্য রোগীদের জন্য তরল অক্সিজেনের চাহিদাও বাড়বে। সেই পরিস্থিতিতে তরল অক্সিজেনের সম্ভাব্য ঘাটতি মেটাতে মোদী সরকারের এই উদ্যোগ বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: নমনীয়তার ইঙ্গিত দিয়েও মিছিলে গরহাজির শুভ্রাংশু, রয়ে গেল জল্পনা
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৩ হাজার ৭৭১, দৈনিক সংক্রমণ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে রাজ্যের
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৬৩ হাজার ৩৭১ জন নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মন্ত্রক সূত্রে খবর, মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশের প্রায় ৩.৯৭ শতাংশ কোভিড রোগী অক্সিজেন সাপোর্টে রয়েছেন। এ ছাড়া, আইসিইউ-তে অক্সিজেন সাপোর্টে রয়েছেন ২.৪৬ শতাংশ। অন্য দিকে, ০.৪০ শতাংশ রোগী রয়েছেন ভেন্টিলেটর সাপোর্টে।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। )
তরল অক্সিজেন উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভারতের পরিস্থিতিটা কী রকম? সূত্রের খবর অনুযায়ী, গত ২৫ মার্চে দেশ জুড়ে লকডাউন শুরুর আগে প্রতি দিন ৬ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন তরল অক্সিজেন উৎপাদন হত। এর মধ্যে প্রতি দিন প্রায় ১ হাজার মেট্রিক টন হাসপাতালগুলির কাজে ব্যবহৃত হত এবং বাদবাকি শিল্প ক্ষেত্রের দাহিদা মেটাত। তবে ৩০ সেপ্টেম্বর আনলক পর্ব শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতি দিন তরল অক্সিজেনের উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ৭ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে কোভিড ছাড়াও সাধারণ রোগীদের জন্য ৩ হাজার ৯৪ মেট্রিক টন তরল অক্সিজেন কাজে লাগানো হচ্ছে। তবে আসন্ন শীতের মরসুমে সংক্রমণের হারে বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখেই অক্সিজেন আমদানির কথা চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়। এ নিয়ে গত ১০ অক্টোবর একটি বৈঠকও করেছেন কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবা। ওই বৈঠকের পরই বিদেশ থেকে অক্সিজেন আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। )
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক শীর্ষকর্তায় কথায়, ‘‘শীতের মরসুমে যদি চাহিদা বাড়ে, সেক্ষেত্রে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত এই ১ লক্ষ মেট্রিক টন তরল অক্সিজেন এক মাসের মতো সময়ের জন্য যথেষ্ট হবে বলে মনে করা হচ্ছে।’’
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৬৩ হাজার ৩৭১ জন নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। যার জেরে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৩ লক্ষ ৭০ হাজার ৪৬৮-এ। এর মধ্যে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৮ লক্ষ ৪ হাজার ৫২৮। তবে চলতি মাস থেকে সংক্রমণের সংখ্যা নিম্নমুখী হলেও শীতের মরসুমে তা ফের বাড়ার আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধনের হুঁশিয়ারি, ‘‘এই ধরনের ভাইরাস ঠান্ডা আবহাওয়া এবং কম আর্দ্রতায় বেশি বাড়ে বলে জানা গিয়েছে। এই আবহে এটা মনে করা ভুল হবে না যে শীতের মরসুমে ভারতের নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হারও হয়তো বৃদ্ধি পাবে।’’
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
সংক্রমণ রুখতে জনসাধারকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ করেছেন হর্ষ বর্ধন। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, বার বার হাত ধোওয়া, মাস্ক পরার মতো বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। পাশাপাশি, গত মাসে দেশ জুড়ে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় হাসপাতালগুলিতে যাতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন থাকে এবং আন্তঃরাজ্যে তার সরবরাহ বাধাবিঘ্নহীন ভাবে হয়, সে বিষয়ও লক্ষ রাখতে রাজ্যগুলিকে পরামর্শ দিয়েছিলেন হর্ষ বর্ধন।
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)