কোভিড সারাতে কার্যকর কোনও ওষুধ বেরোয়নি এখনও। কিন্তু এই অসুখের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে বিভিন্ন কার্যকর দাওয়াইয়ের সন্ধান দিয়েছেন অনেকে। এ বার সেই তালিকায় যুক্ত হল যষ্টিমধুর নামও। নিয়মিত তার ব্যবহারে মানবদেহে করোনা সংক্রমণ অনেকাংশে রুখে দেওয়া সম্ভব বলে দাবি করলেন এক দল বিজ্ঞানী। যদিও মানবদেহে যষ্টিমধু কতটা কার্যকর আগামী দিনে তা পরীক্ষা করে দেখবেন তাঁরা।
গুরুগ্রামের মানেসরে ন্যাশনাল ব্রেন রিসার্চ সেন্টারের গবেষক ইলোরা সেনের দাবি, ‘‘গবেষণায় দেখা গিয়েছে, করোনাভাইরাসের উপস্থিতির কারণে ফুসফুসে কোষের মৃত্যু গ্লাইসিরাইজ়িন রাসায়নিকের প্রয়োগে যেমন কমানো সম্ভব হয়েছে। ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি রুখতেও তা সক্ষম হয়েছে। যষ্টিমধুর অন্যতম উপাদান এই গ্লাইসিরাইজ়িন।’’
দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পরে বায়োটেকনোলজি দফতরের নির্দেশে চিকিৎসা প্রটোকল খুঁজতে গবেষণা শুরু করে ন্যাশনাল ব্রেন রিসার্চ সেন্টার। ইলোরা বলেন, ‘‘কোষের ইনফ্লেমেশন বা প্রদাহ রুখতে প্রথমে গ্লাইসিরাইজ়িনকে চিহ্নিত করা হয়।’’ কোষে কোনও ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়া প্রবেশ করলে, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তাকে বাধা দেয়। এতে শরীরে প্রদাহ হয়। এর ফলে কোষ সাইটোকাইন বা এক ধরনের প্রোটিন নির্গত করে। অনেক সময় এই সাইটোকাইনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় কোষের মৃত্যু ঘটে। যা মানুষের মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। গবেষকদের লক্ষ্য ছিল, প্রথমে ওই সাইটোকাইনের ক্ষরণ রোখা।
যেহেতু করোনাভাইরাস ফুসফুসকে আক্রমণ করে, তাই প্রথমে গবেষণাগারে কৃত্রিম ভাবে ফুসফুসের কোষকে ভাইরাল প্রোটিনের সংস্পর্শে নিয়ে আসেন বিজ্ঞানীরা। দেখা যায়, এইচএমজিবি১ নামে সাইটোকাইন নিঃসরণ শুরু হয়েছে। যার অধিক উপস্থিতি কোষের মৃত্যু হয়। ইলোরার কথায়, ‘‘এইচএমজিবি১ সাইটোকাইনের উপস্থিতি কমাতে এর পরে কৃত্রিম ভাবে গ্লাইসিরাইজ়িন প্রয়োগ করা হয়। দেখা যায়, তাতে এইচএমজিবি১ সাইটোকাইনের ক্ষরণ অনেকাংশে কমেছে। ভাইরাসের বংশবৃদ্ধিও প্রায় ৯০% কমিয়েছে গ্লাইসিরাইজ়িন।’’ ইলোরা সেন, পৃথ্বী গোড়া, শ্রুতি প্যাট্রিক, শঙ্কর জোশী, রাজেশ কুমাবতের এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল সাইটোকাইন অ্যান্ড ইন্টারফেরন সোসাইটির ‘সাইটোকাইন’ জার্নালে।
উল্লেখ্য, যষ্টিমধুর একটি উপাদান গ্লাইসিরাইজ়িন। আর্য়ুবেদে সর্দি, কাশি, জ্বর, ফুসফুসের নানাবিধ সমস্যায় যষ্টিমধু ব্যবহারের উল্লেখ রয়েছে। এ বার করোনা সংক্রমণ রুখতে ওষুধ হিসেবে মানবদেহে তার কার্যকারিতা পরীক্ষা করবেন বিজ্ঞানীরা।