গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
আন্তর্জাতিক সমীক্ষা অনুযায়ী দেশে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা ২১ থেকে ২২ লক্ষে পৌঁছতে সময় লাগল ২৪ ঘণ্টার সামান্য বেশি!
গত কাল রাত সওয়া ৯টা নাগাদ ওই সমীক্ষায় ভারতে কোভিড রোগীর সংখ্যা ২১ লক্ষ পেরোয়। আজ সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক দেশ জুড়ে মোট ২১.৫৩ লক্ষ আক্রান্তের হিসেব দিলেও দিনভর সংক্রমণ বৃদ্ধিতে নজর ছিলই আন্তর্জাতিক সমীক্ষার। আজ রাত ১০টার পরে সেই সমীক্ষাই জানায়, রোগীর সংখ্যা ২২ লক্ষ পেরিয়েছে।
ভারতে করোনার নতুন সংক্রমণের রেকর্ড হচ্ছে প্রায় রোজই। গত ২৪ ঘণ্টায় এ দেশে সংক্রমণ ধরা পড়েছে ৬৪,৩৯৯ জনের। এই প্রথম ৬৪ হাজার পেরোল নতুন সংক্রমিতের সংখ্যা। কিন্তু আন্তর্জাতিক সমীক্ষার রেখচিত্র দেখে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এই রেকর্ডও ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
গত পাঁচ দিন ধরে দৈনিক নতুন সংক্রমিতের সংখ্যার নিরিখে আমেরিকা ও ব্রাজিলকে টপকে বিশ্বের শীর্ষে রয়েছে ভারত। গত কাল আমেরিকায় নতুন সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ৫৮,১৭৩, ব্রাজিলে ৪৯,৯৭০। সরকারি তথ্যই বলছে, আজ নিয়ে টানা তিন দিন ভারতে দৈনিক নতুন সংক্রমিতের সংখ্যা ৬০ হাজারের উপরে রয়েছে।
আরও পড়ুন: ১০ রাজ্য করোনা উদ্বেগ বাড়ছে, কাল বৈঠকে মোদী-মমতারা
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক যদিও আজকের অন্য দু’টি ‘ইতিবাচক’ রেকর্ডের উপরে জোর দিয়েছে। প্রথমটি গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৩,৮৭৯ জন সুস্থ হওয়ার। যার ফলে দেশে মোট সুস্থের সংখ্যা ১৪.৮০ লক্ষ পেরিয়েছে। কেন্দ্র আরও বলছে, দেশে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ৬.২৮ লক্ষের বেশি। কিন্তু মোট সুস্থের সংখ্যা অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যার ২.৩৬ গুণ। সমস্ত রোগীই চিকিৎসাধীন। সুস্থতার হার গত ৫ এপ্রিল ছিল ৭.৬৯ শতাংশ, ৩ মে ছিল ২৬.৫৯ শতাংশ, ৭ জুন ছিল ৪৮.৩৭ শতাংশ। আজকের তারিখে সেই হার ৬৮.৭৮ শতাংশ। পাশাপাশি, কোভিডে মৃত্যুহার কমতে কমতে ২.০১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
অন্য রেকর্ডটি নমুনা পরীক্ষার সংখ্যায়। আইসিএমআরের বিজ্ঞানী তথা মিডিয়া কোঅর্ডিনেটর লোকেশ শর্মা বলেন, ‘‘শনিবার দেশে ৭,১৯,৩৬৪টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, যা এক দিনের রেকর্ড। প্রতি মিনিটে প্রায় ৫০০টি পরীক্ষা হয়েছে।’’ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বক্তব্য, টানা গত কয়েক দিন ধরে দেশে রোজ ৬ লক্ষেরও বেশি পরীক্ষা হচ্ছে। মোট পরীক্ষার সংখ্যা ২.৪১ কোটির বেশি।
রাজ্যগুলির মধ্যে সংক্রমণের শীর্ষে থাকা মহারাষ্ট্রে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ৫ লক্ষ পেরিয়েছে। দ্বিতীয় তামিলনাড়ু। সেখানে আক্রান্ত ২.৯০ লক্ষ। করোনা-যুদ্ধে প্রথম সারিতে থাকা চিকিৎসাকর্মীদের জন্য ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত স্বাস্থ্য-বিমার ব্যবস্থা করেছিল কেন্দ্র। আজ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ রাজ্যগুলিকে চিঠি দিয়ে বলেছেন, ওই বিমার আওতায় যে সমস্ত ‘ক্লেম’ জমা পড়েছে, তা দ্রুত মেটাতে হবে। এই বিমার সুবিধা রয়েছে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)