গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
গোটা দেশে যখন করোনার সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে, সেই সময় নতুন করে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে দু’টি রাজ্য— মহারাষ্ট্র এবং কেরল। গত ২৪ ঘণ্টায় গোটা দেশে মোট সংক্রমণের প্রায় ৭৩ শতাংশই এই দুই রাজ্য থেকে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সোমবারের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ১৪ হাজার ১৯৯ জন। তার মধ্যে শুধু মহারাষ্ট্রেই ৬ হজার ৯৭১ এবং কেরলে ৪ হাজার ৭০ জন নতুন করে সংক্রমিত।
বেশ কয়েক মাস নিয়ন্ত্রণে থাকার পর হঠাৎ করে মহারাষ্ট্রে সংক্রমণের গতি ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় যথেষ্ট চিন্তায় উদ্ধব ঠাকরে প্রশাসন। ইতিমধ্যেই তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, আগামী ২ সপ্তাহ পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হবে। তার পরই গোটা রাজ্যে লকডাউনের পথে হাঁটতে পারে সরকার। সেই সঙ্গে রাজ্যবাসীকে মাস্ক পরা এবং কোভিড বিধি মেনে চলারও পরামর্শ দিয়েছেন। মহারাষ্ট্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চিন্তা বাড়াচ্ছে অমরাবতী, আকোলা, আঁচলপুর, বুলধানা, ওয়াশিম-এর মতো জেলাগুলো। এই জেলাগুলোর মধ্যে কোথাও আংশিক, কোথাও আবার পূর্ণ লকডাউন জারি করেছে সরকার।
কেন হঠাৎ করে সংক্রমণ বাড়ল, তা নিয়েও পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তবে ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় ধরা পড়া করোনার নতুন প্রজাতিকে এর জন্য দায়ী করা হলেও, রাজ্য প্রশাসন কিন্তু তা মানতে নারাজ। কয়েক দিন আগেই তারা জানিয়ে দিয়েছে, এর জন্য নতুন প্রজাতি দায়ী নয়। তা হলে সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য দায়ী কী, তা নিয়েই খোঁজ শুরু করেছে প্রশাসন। একটি মহলে ইতিমধ্যেই একে করোনার ‘ভারতীয় নতুন প্রজাতি’ বলে দাবিও করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, ‘ভারতীয় এই নতুন প্রজাতি’ আরও বেশি সংক্রমক।
অন্য দিকে, কেরল নিয়েও চিন্তা বাড়ছে কেন্দ্রের। অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল এ রাজ্যের সংক্রমণ। কিন্তু কোঝিকোড়, এর্নাকুলাম, কোট্টায়ামে দৈনিক সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। যা রাজ্য প্রশাসনের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।
এই দুই রাজ্যের সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি গোটা দেশের মোট সংক্রমণের সংখ্যাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের বুলেটিন অনুযায়ী দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ১০ লক্ষ ৫ হাজার ৮৫০। আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সংক্রমণের হারও বেড়েছে। এক ধাক্কায় সংক্রমণের হার ২ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে। রবিবারও এই হার ছিল ২-এর উপরে। ১ ফেব্রুয়ারি এই হার ছিল ২.২৭ শতাংশ। তার পর টানা ১৩ দিন ২-এর নীচে থাকার পর ১৫ ফেব্রুয়ারি ফের তা ২ শতাংশের উপরে ওঠে। আবার ২-এর নীচে কয়েক দিন থাকার পর গত দু’দন ধরে তা ২ শতাংশের উপরে উঠেছে।
প্রতি দিন যত জনের কোভিড পরীক্ষা হয়, তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে যত জনের রিপোর্ট পজিটিভ আসে, তাকে বলা হয় পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার। গত ২৪ ঘণ্টায় ৬ লক্ষ ২০ হাজার ২১৬ জনের কোভিড পরীক্ষা হয়েছে। ফলে সংক্রমণের হার দাঁড়িয়েছে ২.২৯ শতাংশ।
সংক্রমণের পাশাপাশি, মহারাষ্ট্র এবং কেরলে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাটাও বাড়তে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মোট মৃত্যু হয়েছে ৮৩ জনের। তার মধ্যে ৫০ জনই এই দুই রাজ্য থেকে। অর্থাৎ দেশের মৃতের প্রায় ৬০ শতাংশই ওই দুই রাজ্য থেকে। মহারাষ্ট্রে ৩৫ এবং কেরলে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে দেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ লক্ষ ৫৬ হাজার ৩৮৫।
সুস্থ হওয়ার সংখ্যাও কিছুটা কমেছে দেশে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৯ হাজার ৬৯৫ জন। এখনও পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ১ কোটি ৬ লক্ষ ৯৯ হাজার ৪১০ জন। সুস্থতার হার ৯৭.২৫ শতাংশ।
পশ্চিমবঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৮২ জন। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫ লক্ষ ৭৩ হাজার ৭৬২ জন। নতুন করে ৩ জনের হওয়ায় রাজ্যে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৪৯ জন। সুস্থ হয়েছেন ৫ লক্ষ ৫৯ হাজার ৯৮৮ জন।