প্রশ্নের মুখে প্লাজমা থেরাপির কার্যকারিতা। —ফাইল চিত্র।
এমনিতেই ঘন ঘন চরিত্র বদল করছে করোনাভাইরাস। টিকাকে প্রধান অস্ত্র বললেও সংক্রমণ ঠেকাতে যে তা বিশেষ কাজ করছে না, এমনটাই দাবি করছেন বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ। এ বার করোনার চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপির কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন তুললেন গবেষকরা। তাঁদের দাবি, প্লাজমা থেরাপির মাধ্যমে রোগীর শরীরে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিস্তার রোধ করা যায় না। করোনা রোগীদের মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতেও কাজে লাগে না। বরং ভাইরাসের স্ট্রেনগুলি আরও বিকশিত হয়। তাই করোনার চিকিৎসার নির্দেশিকা থেকে প্লাজমা থেরাপি-কে বাদ দেওয়ার দাবি তুলছেন তাঁরা।
গত মার্চ মাসে করোনার চিকিৎসা সংক্রান্ত নির্দেশিকায় প্লাজমা থেরাপি-কে অন্তর্ভুক্ত করে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। চিকিৎসার পরিভাষায় এর নাম দেওয়া হয় ‘কোভিড-১৯ কনভালেসেন্ট প্লাজমা ট্রান্সফিউশন’। সেই অনুযায়ী, যে সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ক রোগী করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠছেন তাঁদের রক্ত থেকে নেওয়া রক্তরস সংগ্রহ করে সেখান থেকে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি বের করে করোনা চিকিৎসায় ব্যবহার করা হচ্ছিল। যে সমস্ত রোগীর অবস্থা গুরুতর, একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে তাঁদের করোনার চিকিৎসাতেই এই পদ্ধতি প্রয়োগ করেন চিকিৎসকরা। তার জন্য রক্তরসদাতার খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছেন আক্রান্তদের পরিবার।
কিন্তু অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় দেশে যে ভাবে মৃত্যু বেড়েই চলেছে, তাতে বেশ কিছু দিন ধরেই প্লাজমা খেরাপির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। এ নিয়ে সম্প্রতি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা কে বিজয়রাঘবনকে চিঠিও দেন গবেষকরা। তাতে আইসিএমআর প্রধান বলরাম ভার্গব এবং অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এমস)-এর ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়ার উদ্দেশে বার্তা দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, যুক্তিহীন ভাবে প্লাজমা থেরাপির জন্যই ভাইরাসের স্ট্রেনগুলি আরও বিকশিত হচ্ছে এবং তার জন্যই অতিমারি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে।
করোনা চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি ব্যবহার করা নিয়ে নির্দেশিকা জারি করার আগে প্রথমে দেশের ৩৯টি সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে এ নিয়ে পরীক্ষা চালায় আইসিএমআর। তাতে ১১ হাজার ৫৮৮ জন রোগীর উপর এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু আইসিএমআর-কে লেখা চিঠিতে গবেষকদের দাবি, মৃত্যু রুখতে প্লাজমা থেরাপির কার্যকরিতা অথবা প্লাজমা থেরাপি করার পরই রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন, এমন কোনও প্রমাণ মেলেনি। যাঁদের অবস্থা গুরুতর নয়, তাঁদের ক্ষেত্রেও প্লাজমা থেরাপি কাজ করেনি বলেও দাবি তাঁদের। তাই করোনার চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগে অনুমতি কী ভাবে দেওয়া হল, তা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন গবেষকরা।
তার পরই শুক্রবার আইসিএমআর-এর জাতীয় টাস্কফোর্স জরুরি বৈঠক বসে। সেখানে সর্বসম্মতিতে প্লাজমা থেরাপি-কে করোনার চিকিৎসা থেকে বাদ দেওয়ার দাবি ওঠে। খুব শীঘ্র এ নিয়ে নির্দেশিকা জারি করা হবে বলে জানা গিয়েছে।