প্রতীকী ছবি।
প্রসব যন্ত্রণা উঠেছিল কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার তেলওয়ানির এক মহিলার। ওই এলাকা আগেই করোনা সংক্রমণের জন্য ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত। তেলওয়ানি রেড জোনের মধ্যে পড়ায় স্থানীয় কোনও হাসপাতাল মহিলাকে ভর্তি নিতে রাজি হয়নি বলে অভিযোগ। শেষমেষ এ হাসপাতাল ও হাসপাতাল ঘুরে ১০০ কিলোমিটার অতিক্রম করে শ্রীনগরের একটি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তাঁকে।
ঠিক কী হয়েছিল?
তেলওয়ানির বাসিন্দা হলেও শেরগুন্দে বাপের বাড়িতে ছিলেন মহিলা। শুক্রবার রাতে তাঁর প্রসব যন্ত্রণা ওঠে। মহিলার স্বামী স্থানীয় প্রাথমিক চিকিত্সা কেন্দ্রে নিয়ে গেলে আচাবালের এক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন চিকিত্সকরা। স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে সেটা ৮ কিলোমিটার দূরে।
মহিলার স্বামীর অভিযোগ, অ্যাম্বুল্যান্সে করে আচাবালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে তাঁদের অনন্তনাগে প্রসূতিদের জন্য বিশেষ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। মহিলার স্বামী আরও জানান, এখানেই দুর্ভোগের শেষ হয়নি। ওই হাসপাতালে নিয়ে গেলে মহিলাকে পরীক্ষা না করেই শ্রীনগরের হাসপাতালে রেফার করে দেন চিকিত্সকরা। অভিযোগ, চিকিত্সকরা তাঁদের বলেন, এই হাসপাতাল করোনা রোগীদের জন্য। এখানে চিকিত্সা হবে না!
আরও পড়ুন: কলকাতা পুলিশের আরও এক ওসি কোভিড আক্রান্ত
রাত তখন দেড়টা। ফের অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে শ্রীনগরের উদ্দেশে রওনা হন মহিলার স্বামী ও পরিবারের লোকেরা। শ্রীনগরের লাল ডের হাসপাতালে মহিলাকে ভর্তি করানো হয়। তিনি সন্তান প্রসবও করেন।
কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে ওই পরিবার। কিন্তু এর পরের ঘটনাটার জন্য তাঁরা একদমই প্রস্তুত ছিলেন না। হাসপাতাল থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, মহিলা কোভিড পজিটিভ ধরা পড়েছে। সঙ্গে এটাও জানিয়ে দেওয়া হয়, মহিলাকে এখানে রাখা সম্ভব নয়। এর পরই মহিলাকে রেফার করা হয় বিজবেহরার কোভিড হাসপাতালে।
লাল ডের হাসপাতালের এক চিকিত্সকের অভিযোগ, রোগী যে করোনার রেড জোন থেকে এসেছেন সেটা তাঁদের কাছে গোপন করা হয়েছিল। তিনি আরও জানান, প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকা এক মহিলাকে ভর্তি না করিয়ে উপায় ছিল না। ১০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন ওই মহিলা।
ওই চিকিত্সকের আরও অভিযোগ, স্থানীয় হাসপাতালেই ওই মহিলার চিকিত্সা করানো যেত। কিন্তু কেন হাসপাতাল ভর্তি নিল না, সেটাই প্রশ্ন। যেখানে প্রশাসন থেকে এমনই নির্দেশ জারি করা হয়েছে! যাঁরা ওই মহিলার সংস্পর্শে এসেছিলেন, লাল ডের হাসপাতালের সেই সব নার্স ও চিকিত্সকদের কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর।
শুধু এই মহিলাই নয়, এমন ভুরি ভুরি অভিযোগ উঠছে কাশ্মীরের বিভিন্ন হাসপাতালের বিরুদ্ধে। কয়েক দিন আগেই এমন ঘটনার শিকার হয়ে এক মহিলা ও তাঁর যমজ সন্তানের মৃত্যু হয়।