প্রথম দিকে ধীর গতিতে হলেও, দেশে প্রতিষেধক দেওয়ার হার ক্রমশ বাড়ছে বলে দাবি করেছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। ছবি: পিটিআই।
যাঁরা রক্ত তরল রাখার ওষুধ (ব্লাড থিনার) নিয়মিত খান, তাঁরাও প্রতিষেধক নিতে পারবেন বলে জানাল স্বাস্থ্যমন্ত্রক। যদিও যাঁরা ‘ব্লাড থিনার’ নেন, গোড়ায় তাঁদের প্রতিষেধক নেওয়ার প্রশ্নে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছিল অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও ভারত বায়োটেক। এমন ব্যক্তিদের প্রতিষেধক না নেওয়ারই পরামর্শ দেয় ভারত বায়োটেক। এর ফলে দেশের বড় সংখ্যক মানুষ প্রতিষেধকের বাইরে থেকে যাচ্ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা কাটিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রক আজ জানিয়েছে, যাঁরা রক্ত পাতলা রাখার ওষুধ নেন, তাঁদেরও প্রতিষেধক নিতে কোনও সমস্যা নেই। কেবল প্রতিষেধক নেওয়ার দু’দিন আগে থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ওই ‘ব্লাড থিনার’ নেওয়া বন্ধ রাখতে হবে।
বর্তমানে ভারতের ৩০-৬৯ বছর বয়সি জনসংখ্যার প্রায় ১৭.৪ শতাংশ নিয়মিত ভাবে রক্ত তরল রাখার ওষুধ খান। ‘কারা প্রতিষেধক নিতে পারেন আর কারা পারেন না’-এই সংক্রান্ত ‘ফ্যাক্ট শিট’-এ ভারত বায়োটেক, যে সব ব্যক্তিরা বর্তমানে রক্ত তরল করার ওষুধ নিচ্ছেন বা যাঁদের রক্তপাতজনিত সমস্যা (কেটে গেলে রক্ত বন্ধ হয় না) রয়েছে তাঁদের প্রতিষেধক নিতে বারণ করে। কোভিশিল্ড প্রতিষেধকের ভারতে উৎপাদনকারী সংস্থা সিরাম ইনস্টিটিউট তাদের ‘ফ্যাক্ট শিট’-এ সরাসরি নিষেধাজ্ঞা জারি না করলেও, যাঁরা ‘ব্লাড থিনার’ নেন, তাঁদের প্রতিষেধক নেওয়ার আগে তা চিকিৎসককে অবশ্যই জানাতে বলা হয়। এবং চিকিৎসক সবুজ সঙ্কেত দিলে তবেই প্রতিষেধক নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়।
কিন্তু আজ কোভিড প্রশ্নে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সাপ্তাহিক সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ বলেন, ‘‘যাঁরা রক্ত পাতলা রাখার ওষুধ নিচ্ছেন, তাঁরাও ওই প্রতিষেধক নিতে পারেন। তবে প্রতিষেধক নেওয়ার অন্তত দু’দিন আগে থেকে ওই ওষুধ বন্ধ রাখতে হবে।’’
স্বাস্থ্যসচিবের দাবি, প্রতিষেধক কারা পাবেন আর কারা পাবেন, সেই সংক্রান্ত ফ্যাক্টশিটটিও দ্রুত পরিবর্তন করতে চলেছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি। যাঁরা রক্ত পাতলা রাখার ওষুধ খান, তাঁরা কোন নিয়ম মেনে প্রতিষেধক পেতে পারেন তা নতুন ফ্যাক্ট শিটে উল্লেখ থাকবে বলেই দাবি মন্ত্রকের। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের ব্যাখ্যা, কোনও অস্ত্রোপচারের দু-তিন আগে রক্ত পাতলা রাখার ওষুধ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রেও সেই প্রোটোকল মেনে প্রতিষেধক নেওযার দু’দিন আগে ‘ব্লাড থিনার’ নিতে বারণ করা হয়েছে।
প্রথম দিকে ধীর গতিতে হলেও, দেশে প্রতিষেধক দেওয়ার হার ক্রমশ বাড়ছে বলে দাবি করেছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। আজ গোটা দেশের ৯,৯৯৪টি টিকাকেন্দ্রে ৪,৯১,৬১৫ জন প্রতিষেধক নিয়েছেন। গত ১৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া অভিযানে এ নিয়ে গোটা দেশে প্রায় সাড়ে ২৮ লক্ষ প্রতিষেধকের আওতায় এলেন। বিশ্বের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিষেধক পাওয়ার প্রশ্নে এই মুহূর্তে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে আমেরিকা। সে দেশের ২.৩ কোটি মানুষ প্রতিষেধক পেয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রমে প্রতিষেধকপ্রাপ্ত জনসংখ্যার অনুযায়ী পঞ্চম স্থানে রয়েছে ভারত। তবে ওড়িশার মতো রাজ্য যেখানে মাত্র দু’সপ্তাহেই সে রাজ্যের অর্ধেকের বেশি স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রতিষেধকের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে, সেখানে রাজধানী দিল্লি (১৫.৭শতাংশ), তামিলনাড়ু (১৫.৭শতাংশ), মহারাষ্ট্র (২০.৭শতাংশ)-এর টিকাকরণের হার আদৌ আশানুরূপ নয় বলে জানিয়েছে কেন্দ্র।