ধারাভিতে থার্মাল স্ক্রিনিং চালাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। ছবি: এপি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের উদ্বেগ বাড়িয়ে কার্যত খুলে গেল গোটা দেশ। বন্ধ থাকল কেবল গণ্ডিবদ্ধ সংক্রমিত অঞ্চল তথা কন্টেনমেন্ট জ়োন। অথচ সংক্রমণের লেখচিত্র এখনও উর্ধ্বগামী। করোনা সংক্রমিতের সংখ্যায় একা মহারাষ্ট্র ছাড়িয়ে গিয়েছে চিনকে। এই পরিস্থিতিতে হোটেল, শপিং মল, ধর্মস্থল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে হিতে-বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক বলছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রণকৌশল পাল্টানো হচ্ছে। কিন্তু লকডাউন তুলে দিয়ে কোন রণকৌশলে সংক্রমণের হার কমানো যাবে— এই প্রশ্নে নীরব স্বাস্থ্যকর্তারা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের সংখ্যা ছুঁয়ে ফেলেছে প্রায় দশ হাজারকে (৯৯৮৩ জন)। মোট সংক্রমণের সংখ্যা ২,৫৬,৬১১। এই এক দিনে ২০৬ জনের মৃত্যুতে দেশে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭১৩৫। এই মুহূ্র্তে দেশে করোনা রোগীর সংখ্যা ১,২৪,৯৮১। সুস্থ হয়েছেন ১,২৪,৪৯৯ জন।
এই পরিস্থিতিতে মল, ধর্মস্থান, হোটেল ইত্যাদি খুলে দেওয়ায় অর্থনীতিতে হয়তো গতি কিছুটা আসবে, কিন্তু আগামী দু’সপ্তাহে সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়তে চলেছে বলে ধরেই নিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপরে চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে লকডাউন ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ব্যবসা-বাণিজ্য-অর্থনীতির আগল খুলে দিয়ে সেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকেই বেসামাল করে দেওয়ার রাস্তা তৈরি হল। ফলে লকডাউনের যৌক্তিকতাই এখন প্রশ্নের মুখে।
আরও পড়ুন: কেজরীর সিদ্ধান্ত খারিজ করলেন উপরাজ্যপাল
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হওয়াটা এখন সময়ের অপেক্ষা। সংক্রমণে দেশের প্রথম তিনটি রাজ্যের অন্যতম দিল্লিতে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়েছে কি না তা বুঝতে আগামিকাল বিশেষজ্ঞদের একটি দল পথে নামছে বলে জানিয়েছেন দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া।
দিল্লিতে এ দিন লকডাউন শিথিল হওয়ার প্রভাব ছিল সর্বত্র। আজও যানজট হয়েছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। খুলেছে সব মন্দির। সদ্য প্রদেশ সভাপতির পদ খোয়ানো বিজেপি নেতা মনোজ তিওয়ারিকে দেখা যায় হনুমান মন্দিরে গিয়ে পুজো দিতে। বেশ কিছু শপিং মল, জামাকাপড়ের ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোর খুলেছে। তবে লোক ছিল হাতে গোনা। রাজধানীর সদাব্যস্ত কনট প্লেসের অধিকাংশ দোকান বন্ধ ছিল। জনপথ বা সরোজিনী নগরের বাজারও দিনভর খাঁ খাঁ করেছে। নয়ডা ও গুরুগ্রামের অধিকাংশ শপিং মল খোলেনি।
কেন্দ্র লকডাউন শিথিল করলেও উল্টো পথে হেঁটেছে বেশ কিছু রাজ্য। পুরো জুন মাস সব শপিং মল, ধর্মস্থল ও হোটেল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওড়িশা। জুনের গোটাটাই লকডাউন জারি করেছে মিজোরাম। সংক্রমণ এড়াতে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে থাকা রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, ওড়িশা ও জম্মু-কাশ্মীরের ধর্মস্থানগুলি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিবহণ ক্ষেত্রে গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কা জানিয়েছে অল ইন্ডিয়া মোটর ট্রান্সপোর্ট কংগ্রেস। কারণ, দিল্লি, পঞ্জাব, হিমাচলপ্রদেশ, হরিয়ানা ও মধ্যপ্রদেশের বড় সংখ্যক ট্রাকচালকই করোনা আক্রান্ত। এটা গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে।