গৌতম গম্ভীর। —ফাইল চিত্র।
অক্সিজেন এবং প্রতিষেধকে ঘাটতির জেরে করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে রাজধানী দিল্লি। এমন পরিস্থিতিতে বিজেপি সাংসদ তথা প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীরের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে ফ্লু প্রতিরোধী ‘ফ্যাবিফ্লু’ ওষুধ মজুত করে রাখার অভিযোগ উঠল। মৃদু উপসর্গের করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ‘ফ্যাবিফ্লু’ ব্যবহৃত হয়। নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে সেই ওষুধই বিনামূল্যে বিতরণের ঘোষণা করেছেন গম্ভীর। তাতেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। রাজধানীর হাসপাতালগুলিতে যেখানে অক্সিজেন, প্রতিষেধক-সহ ওষুধেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে, সেখানে এই বিপুল পরিমাণ ‘ফ্যাবিফ্লু’ তিনি কী ভাবে পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ‘ফ্যাবিফ্লু’ বিক্রির অনুমতি নেই ওষুধের দোকানগুলির। তাই বেআইনি ভাবেই গম্ভীর ওই ওষুধ মজুত করে রেখেছেন বলে অভিযোগ করছেন বিরোধীরা।
বৃহস্পতিবার দিল্লিতে নতুন করে ২৪ হাজার ৬৩৮ মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন। মারা গিয়েছেন ২৪৯ জন করোনা রোগী। তার এক দিন আগেই বিনামূল্যে ‘ফ্যাবিফ্লু’ বিতরণ করবেন বলে টুইট করে বিতর্তে জড়িয়ে পড়েন গম্ভীর। বুধবার তিনি লেখেন, ‘পূর্ব দিল্লির বাসিন্দারা সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সাংসদের দফতর (২, জাগৃতি এনক্লেভ) থেকে বিনামূল্যে ফ্যাবিফ্লু নিতে পারবেন। শুধু আধার কার্ড ও প্রেসক্রিপশন নিয়ে এলেই হবে’। ২০১৯ সালে গেরুয়া শিবিরের হয়ে পূর্ব দিল্লি কেন্দ্র থেকে জিতেই সাংসদ হন গম্ভীর। সেখানকার মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৭ লক্ষ। এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে দেওয়ার মতো ওষুধের জোগান তাঁর কাছে কী ভাবে এল, তা যদিও খোলসা করেননি গম্ভীর।
তবে টুইটটি সামনে আসার পরই গম্ভীরকে আক্রমণ করেন বিরোধী পক্ষের রাজনীতিকরা। আম আদমি পার্টির (আপ) নেতা দুর্গেশ পাঠক টুইটারে লেখেন, ‘গুজরাতে বিজেপি-র সভাপতি জীবনদায়ী ইঞ্জেকশন মজুত করে রেখেছেন, মহারাষ্ট্রে বিজেপি-র প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফড়ণবীস রেমডেসিভির মজুত করে রেখেছেন আর দিল্লির আংশিক সময়ের বিজেপি সাংসদ এবং পূর্ণ সময়ের ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার জীবনদায়ী ওষুধ মজুত করে রেখেছেন। এঁরা জনপ্রতিনিধি নাকি অপরাধী? আপনারাই ঠিক করুন’।
কী ভাবে ওই ওষুধ গম্ভীরের হাতে এল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কংগ্রেস নেতা পবন খেরা। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘১) গৌতম গম্ভীর, ঠিক কত পরিমাণ ফ্যাবিফ্লু মজুত করে রেখেছেন আপনি? ২) এই বিপুল পরিমাণ ফ্যাবিফ্লু কী ভাবে পেলেন? অরবিন্দ কেজরীবাল আপনি বলুন, ১) এটা কি আদৌ বৈধ? ২) বেআইনি ভাবে ওষুধ হাতিয়ে নিয়ে মজুত করে রাখার জন্যই কি ওষুধের দোকানে যে ফ্যাবিফ্লু পাওয়া যাচ্ছে না’?
সরাসরি কেজরীবালের দফতর এবং দিল্লির উপরাজ্যপালের দফতরকে ট্যাগ করে গম্ভীরের দাবি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আপ বিধায়ক সোমনাথ ভারতীও। তিনি লেখেন, ‘এটা কি অপরাধ নয়? এক জন সাংসদ ওষুধ মজুদ করে রেখেছেন এবং নিজের ইচ্ছেমতো তা বিলি করছেন। ওষুধগুলি কেন হাসপাতালের হাতে তুলে দেবেন না উনি’?
বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ওষুধ কোথা থেকে এল, তা খোলসা করেননি গম্ভীর। বরং নিজের হয়ে সাফাই দিতে গিয়ে লেখেন, ‘দিল্লি আমার বাসস্থান। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মানুষের সেবা করব। যে ভাবে শয্যা, অক্সিজেন এবং ওষুধের চাহিদা বাড়ছে, যতটা পারছি সাহায্য করছি আমরা’।